জিভ বের করে দুষ্টু চোখে চেয়ে আছেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় সায়েন্টিস্টদের মধ্যে একজন আলবার্ট আইনস্টাইন। আইনস্টাইনের এই ছবি নিয়ে গল্প কথার শেষ নেই। অনেকে ভাবেন এটি আইনস্টাইনের খেয়ালিপনার একটি মুহূর্ত ফ্রেমবন্দী করা হয়েছিল। কেউবা বলেন ইচ্ছা করেই আইনস্টাইন এমন পোজ দিয়েছিলেন ফটোগ্রাফারের সামনে। আসল সত্যটা আসলে কি?
অ্যালবার্ট আইনস্টাইন। জগৎ বিখ্যাত এই পদার্থবিদের বহু আচরণই অনেকের কাছে বিস্ময়ের। সে রকমই ৭০ বছর আগে তোলা তার এই ছবিটি। আইনস্টাইনের ছবির প্রসঙ্গ উঠলেই চোখের সামনে প্রথমে ভেসে ওঠে এই ছবিটি। কিন্তু অনেকেই জানেন না কেন জিভ বার করা অবস্থায় এমন অদ্ভুত ছবি তুলেছিলেন তিনি। আর কেনই বা তার মতো তার এই ছবিটিও বিখ্যাত হয়ে গিয়েছিল।
৪ মার্চ, ১৮৭৯ সালে জার্মানির উলমা শহরে জন্ম আইনস্টাইনের। ১৯৫১ সালে তিনি আমেরিকায় থাকতেন এবং নিউ জার্সির প্রিন্সটনে ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিতে গবেষণা করতেন। জন্মদিন উপলক্ষে ওই গবেষণা কেন্দ্রেই তার সহকর্মীরা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। সেই অনুষ্ঠানে আইনস্টাইনের যোগ দেওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই গবেষণা কেন্দ্রের বাইরে ভিড় জমাতে শুরু করেছিলেন পাপারাৎজিরা।
ইনস্টিটিউটের বাহির আইনস্টাইনের জন্মদিনের ওই মুহূর্তটি ক্যামেরাবন্দি করতে তৈরি ছিলেন তারা। সে খবর আইনস্টাইনের কানেও পৌঁছেছিল। সংবাদমাধ্যম, ক্যামেরার ঝলকানি বরাবরই অপছন্দ ছিল আইনস্টাইনের। পাপারাৎজিদের এড়িয়ে কোনোমতে গাড়িতে উঠে বসে পড়লেও ক্যামেরার ঝলকানি এড়াতে পারেননি।
আইনস্টাইন তখন এক দিকে ওই ইনস্টিটিউটের তৎকালীন অধিকর্তা ফ্রাঙ্ক আয়দেলট এবং তার স্ত্রী মেরির মাঝে স্যান্ডউইচের মতো প্রায় লুকিয়ে বসেছিলেন। পাপারাৎজিদের ক্যামেরার ঝলক এবং তাদের বিভিন্ন প্রশ্নে বিরক্ত হয়ে বারবারই তাদের ছবি তোলা বন্ধ করার অনুরোধ করছিলেন তিনি। ঠিক সে সময়ই এক চিত্রগ্রাহকের তরফ থেকে হাসি মুখে ছবি তোলার অনুরোধ ভেসে আসে।
তিতিবিরক্ত আইনস্টাইন হাসির বদলে জিভ বার করে এই অদ্ভুত ভঙ্গি করেছিলেন। সেটিই চিত্রগ্রাহক আর্থার স্যাসের ক্যামেরায় বন্দি হয়ে যায়। পরবর্তীকালে এটি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এবং একটি আইকনিক ছবিতে পরিণত হয়। তবে ছবিটির বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা অর্জনের পিছনে কিন্তু ওই চিত্রগ্রাহকের কোনও হাত ছিল না। আইনস্টাইন নিজেই এটি জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন। ছবিটি তার এতটাই পছন্দ হয়েছিল যে তার একাধিক কপি ওই চিত্রগ্রাহকের কাছ থেকে নিয়েছিলেন তিনি। তার পর গাড়িতে তার দু’পাশে বসে থাকা দু’জনকে কেটে বাদ দিয়ে দেন কপিগুলো থেকে।
এই কপিগুলো পরিচিত বৃত্তে পাঠাতে শুরু করেন আইনস্টাইন। তাতে ক্যাপশন ছিল, ‘বেরিয়ে থাকা জিভই আমার রাজনৈতিক ধারণার প্রতিবিম্ব।’ এর পরই মূলত সেটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। ২০০৯ সালে তার সই করা আসল ছবিটি নিলামে বিক্রি হয়। দাম উঠেছিল প্রায় ৫৫ লক্ষ টাকা। আসল ছবিটি ১৯৫১ সালে তোলা হয়েছিল। এই ছবিটি ছাড়াও তার আরও বেশ কিছু বিষয় অনেককেই বিস্মিত করে। রোজ অন্তত ১০ ঘণ্টা ঘুমোতেন তিনি। তার মতে, এই ঘুমের মধ্যেই তিনি নাকি কঠিন সমস্যার সমাধান করে ফেলতেন।
তার এমন কিছু স্বভাব ছিল, যেগুলো অনেকের কাছে মোটেই স্বাভাবিক ছিল না। তার মতো এক জন বিজ্ঞানী যে এগুলো করতে পারেন, তা কল্পনাও করতে পারতেন না অনেকে। আবার অনেকের মতে, এই স্বভাবগুলোই আইনস্টাইনের মস্তিষ্ককে আরও তীক্ষ্ণ করে তুলেছিল। তিনি কখনও মোজা পরতেন না। ছোট থেকেই এই অভ্যাস তৈরি হয়েছিল তার। বিশ্বাস করতেন, যা আরামদায়ক সেটাই করা উচিত। মোজা তার কাছে একেবারেই আরামদায়ক ছিল না। মস্তিষ্কের সঙ্গে হাত আর চোখের সমন্বয় ঘটানোর জন্য রোজ ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভায়োলিন বাজাতেন। আইনস্টাইনের দাবি ছিল, এতে নাকি কর্টিসল হরমোনের মাত্রা কমে মন চাপমুক্ত থাকে।
১৯২১ সালে আইনস্টাইন পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তার পুরস্কার লাভের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে বিশেষ অবদান এবং বিশেষত আলোক-তড়িৎ ক্রিয়া সম্পর্কীত গবেষণার জন্য।
আইনস্টাইনের গবেষণাকর্মগুলো বিধৃত রয়েছে ৫০টিরও অধিক বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র এবং কিছু বিজ্ঞান-বহির্ভূত পুস্তকে। ১৯৯৯ সালে টাইম সাময়িকী আইনস্টাইনকে ‘শতাব্দীর সেরা ব্যক্তি’ হিসেবে ঘোষণা করে।