দুনিয়ায় কেউ এমন নেই যে খুশি থাকতে চায় না। সবাই চায় যে সে খুশি থাকুক কিন্তু পরিবেশ পরিস্থিতি নানা জটিলতার মাঝে পড়ে মানুষ অনেক সময় হাসতে ভুলে যায় । মানুষ সুখের জন্য তাদের কাঙ্ক্ষিত বিষয়গুলি পেতে চায়। সারাদিন ছুটতে থাকে সেগুলো পাওয়ার জন্য। কিন্তু দিন শেষে তারা তাদের অন্তরে গ্লানি,শূন্যতা আর হতাশা খুঁজে পায়। কারন তারা খুশি আর সুখ পাওয়ার জন্য ভুল জায়গায় সন্ধান করছে। বাইরের বস্তু সর্বদা ক্ষণস্থায়ী। আজ আছে কাল নেই।
এখনকার আধুনিক সময়ে এক থাকার জন্য চমৎকার কিছু উপায় আছে। যখন চারপাশে কেউ থাকবেনা, তখন সেই সময়টায় নিজেকে নিয়ে ভাবা যায়, নিজের সম্পর্কে আরো বেশি করে জানা যায়। একাকী থাকাটা আসলে নি:সঙ্গতা নয়। একা খুশি থাকার উপায় অনেকগুলো আছে।
অনেকেই থাকে যারা খুব বন্ধুসুলভ, মিষ্টভাষী ও আন্তরিক হয়ে থাকে। কিন্তু তারা প্রায় সময় একা থাকতে পছন্দ করে। এর মানে এই নয় যে তারা নি:সঙ্গ। কারন একা থাকাটাকে তারা উপভোগ করে। তারা আনন্দ পায়। আবার অনেকে থাকে যাদের চারপাশে সবাই থাকে।
তারা সবসময় পরিবার, আত্নীয়, বন্ধু বান্ধব সবার মাঝে থাকে, কিন্তু তারপরেও এদের মাঝে থেকেই তারা নিজেকে একা মনে করে। সবার সাথে থেকেও তাদের সাথে মিশতে পারেনা। এরা একা থাকলে নিজেকে খুব অসহায় মনে করে। একা থাকাটা তাদের কাছে বিষন্ন মনে হয়। এটা হলো নি:সঙ্গতা। একটু বৈচিত্র্য খুঁজে পেতে, নিম্নলিখিত উপায়গুলি অবলম্বন করতে পারেন।
একা খুশি থাকার উপায়
১. অন্যের সাথে নিজেকে তুলনা নয়
নিজেকে কখনো আশেপাশের অন্য কারো সাথে তুলনা করা ঠিক না। প্রতিটি মানুষই আলাদা। তাদের সব কিছুই আলাদা। কাজেই কারো সাথেই কারো তুলনা করা উচিত না।
আপনার পরিচিত কেউ, ইন্সটাগ্রামে কিংবা ফেসবুকে রেস্টুরেন্টে খাচ্ছে কিংবা কোন ফাইভ স্টার হোটেলে বেশ মাজা করছে, এরকম ছবি পোস্ট দিলো। আর আপনি ভাবছেন, ইশ! আমি যদি থাকতাম।
এই চিন্তা আপনাকে, ধ্বংস করে দেয়। দেখুন পৃথিবীতে এমন অনেক উদাহরণ আছে।
আজব দুনিয়া, বিবাহিতরা তালাকের চিন্তায় ব্যস্ত, অবিবাহিতরা বিবাহের চিন্তায় ব্যস্ত। বাচ্চাদের তাড়াতাড়ি বড় হওয়ার চিন্তা আর, বড়দের শৈশবে ফিরে যাওয়ার আকুতি। চাকরিজীবীরা কাজের চাপে পেরেশান, বেকার লোকদের মুখে চাকরির জন্য দোয়া। গরিবদের বড়লোক হওয়ার আকাঙ্ক্ষা, আর বড়লোকেরা একটুখানি শান্তির খোঁজে ব্যস্ত। জনপ্রিয় ব্যক্তির লুকানোর ঠিকানা খুঁজে বেড়াচ্ছে, আর সাধারন মানুষ জনপ্রিয় হওয়ার চিন্তা। আপনার শান্তিু আপনার শুকরিয়া আদায় করার মধ্যেই রয়েছে। তাই, আল্লাহ তায়ালা যা দিয়েছে তা নিয়ে সন্তুষ্ঠ থাকুন।
২. একটি হবি বা শখ
ভালো করে চিন্তা করে দেখুন, আপনি অবসর সময়ে কী করতে ভালোবাসেন। বই পড়তে পারেন, টিভি দেখতে পারেন, বা রান্না করতে পারেন। খেয়াল রাখতে হবে, এই হবিটি যেন আপনার রোজকার জীবনের কাজের থেকে আলাদা হয়। মনে রাখবেন, অবসর খুব গুরুত্বপূর্ণ।
৩ . নিজের কোনো গুণের চর্চা করা
অনেক ক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে নিহিত থাকে অনেক গুণ, যেগুলি চর্চার অভাবে অকালে মরে যায়। আপনি যদি ছবি আঁকতে বা নাচ করতে পছন্দ করেন, তাহলে অল্প সময়ে বার করে, প্রশিক্ষণ নিয়ে সেই গুণের অভ্যাস করতে পারেন।
৪. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সাময়িক দূরত্ব
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো সবসময় ব্যক্তিগত জীবনে তেমন সমস্যার সৃষ্টি করে না। তবে, এমন যদি হয় যে এগুলো ব্যবহারে মন অশান্ত হয়ে উঠছে তবে, কিছু সময়ের জন্য এর থেকে বিরতি নেয়া উচিত।
এইসব মাধ্যমে আমরা অনেক সময়, অন্যের সুখী জীবন দেখে নিজের জন্য দু:খ বোধ করি। কিন্তু আমরা আসলেই জানিনা, সে মানুষটি প্রকৃতপক্ষে সুখী কিনা। কাজেই এর কোন প্রভাব নিজের জীবনে পড়তে দেয়া যাবে না।
পরীক্ষামূলক ভাবে প্রথমদিকে ৪৮ ঘন্টা নিজেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে বিচ্ছিন্ন রাখা যেতে পারে। যদি এটা নিজের জন্য ভালো হয় তাহলে আস্তে আস্তে এই সময় বাড়ানো যেতে পারে।
কাজেই এরপর যখন একা থাকতে ইচ্ছা করবে তখন ফোন বন্ধ রাখতে হবে। এই সময়টা শুধু নিজেকে দিতে হবে। নিজেকে নিয়ে ভাবতে হবে। মনে যা চাইবে তাই করতে হবে। যে কাজ করে আনন্দ পাওয়া যায় তাই করতে হবে।
৫. কোথাও ঘুরতে যাওয়া
নিজেকে নিজেই ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে। ঘুরাঘুরি করলে মন আনন্দ পায়, মনে শান্তি আসে। মনে করতে হবে যে কাউকে যদি কোন সুন্দর জায়গায় নিয়ে যেতে ইচ্ছা করে তাহলে কোথায় যাওয়া উচিত বা কিভাবে তাদের ভ্রমণ আনন্দময় করা যায়।
শুরুতে হয়তো এটা বিচিত্র মনে হতে পারে কিন্তু আস্তে আস্তে বিষয়টি উপভোগ্য হয়ে উঠবে। এটা হতে পারে বাইরে কোথাও খেতে যাওয়া বা কোন মুভি দেখতে যাওয়া। যদি টাকা পয়সা সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে কমপক্ষে কোথাও কফি খেতেও যাওয়া যেতে পারে। একা খুশি থাকার উপায় হিসাবে ভ্রমন বেশ কাজের একটি বিষয়।
৬. নিজের যত্ন
নিজের ত্বকের যত্ন নিলে, মন সবসময় উজ্জীবিত থাকে। তাই অল্প সময় পেলে, একটি ভালো ফেস প্যাক লাগিয়ে আরাম করতে পারেন। এখন তো সময় বাঁচানোর জন্য শীট মাস্ক বেরিয়েছে, যেগুলি মুখে পনের মিনিট লাগানোর পর তুলে ফেললেই মুখ সতেজ হয়ে যায়। সেইরকম মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন, মন ভালো থাকবে।
৭. শরীরচর্চা করা
মন ভালো রাখার আরেকটি উত্তম উপায় হচ্ছে ব্যায়াম করা। যদি এটি নতুন শুরু করা হয়ে থাকে তাহলে প্রথমে অল্প কিছুক্ষণ করে শুরু করা যেতে পারে। আস্তে আস্তে সময় বাড়াতে হবে। ব্যায়াম করার নিয়মাবলী, এই লেখাটি পড়তে পারেন। যখন এটি উপভোগ্য হয়ে উঠবে তখন কোন খেলাধুলা বা ভারত্তোলন করা যেতে পারে। যদি বাইরে কোথাও যেতে কোন সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে ঘরে একা একা অনুশীলন করা যেতে পারে।
৮. প্রকৃতির সাথে কিছু সময় কাটানো
প্রকৃতির নিবিড় ছোঁয়া মনে আনে প্রশান্তি। অনেক সময়ই মন অশান্ত হয়ে গেলে প্রকৃতির সংস্পর্শে তা শান্ত হয়ে উঠে। তাই মাঝে মাঝে কোন পার্কে বেড়াতে যাওয়া বা পানির কাছাকাছি গেলে মন ভালো হয়। প্রকৃতিতে শান্ত পরিবেশে গিয়ে নির্মল হাওয়া,পাখির কিচিরমিচির, পরিবেশ, মাটির গন্ধ এগুলোর পরশ পেলে মন হালকা হয়। প্রকৃতির সাথে একান্তে প্রতিদিন কিছু সময় কাটালে আস্তে আস্তে মনের সব অবসাদ দূর হয়ে যাবে। একা খুশি থাকার উপায় হিসাবে এটা বেশ কাজের।
৯. সবসময় ভালো থাকার চেষ্টা
আগের দিন বলেছিলাম না, যে সুখী হওয়া একটি অভ্যাস! সব সময় ভাবুন, আপনি কতটা ভালো আছেন। আপনার সাথে কী কী ভালো জিনিস ঘটেছে। এবং মনে মনে নিজের ব্যাপারে আনন্দিত ও গর্বিত বোধ করুন। হাতের দশটা আঙুল যেমন আলাদা, অথচ প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ। ঠিক তেমন, আমরা প্রত্যেকে একে অপরের থেকে আলাদা, কেউ ভালো-খারাপ নই। সবাই ইউনিক, এবং বিশেষ। তাই একে অপরের সাথে তুলনা না করে, নিজের নিজস্বতাকে তুলে ধরার চেষ্টা করুন।
“সদা থাকো আনন্দে, সংসারে নির্ভয়ে নির্মলপ্রাণে ॥
জাগো প্রাতে আনন্দে, করো কর্ম আনন্দে
সন্ধ্যায় গৃহে চলো হে আনন্দগানে ॥
সঙ্কটে সম্পদে থাকো কল্যাণে,
থাকো আনন্দে নিন্দা-অপমানে।
সবারে ক্ষমা করি থাকো আনন্দে,
চির-অমৃতনির্ঝরে শান্তিরসপানে ॥”