Image default
জানা অজানা

পরীক্ষা কে আবিষ্কার করেছিলেন ?

‘ছাত্রজীবন মধুর জীবন, যদি না থাকে পরীক্ষা । অনেক শিক্ষার্থীই হয়তাে পরীক্ষার আগের রাতে উদাস হয়ে এ কথা ভেবেছেন বইপুস্তকে হাবডুুবু খেয়ে কে যে পরীক্ষা আবিষ্কার করেছিল, তাকে যদি একবার হাতের কাছে পেতাম…’ এমন ভাবনাও অনেকের মাথায় এসে থাকতে পারে। কিন্তু এই ভয়ানক পরীক্ষা কে আবিষ্কার করেন, সেটা জানার আগে আমাদের জানতে হবে কিভাবে এই পরীক্ষা পদ্ধতির সূত্রপাত হয়েছে…

পরীক্ষার পদ্ধতির সূত্রপাত হয়েছে প্রাচীন চীনে। জি! এটাও Made in China. চীনে সর্বপ্রথম Standardized Test বা সার্বভৌম পরীক্ষার প্রচলন করা হয়। এই পরীক্ষার ছিল মূলত একটি বাছাই পরীক্ষা। যার মাধ্যমে সরকারি চাকরির জন্য যোগ্য প্রার্থীদের বাছাই করা হত। এই পরীক্ষা পদ্ধতি চালু হয় ৬০৫ খ্রিষ্টাব্দে। সুই রাজবংশ (Sui Dynasty) এই পদ্ধতি চালু করে। এর প্রায় ১৩০০ বছর পরে কুইং রাজবংশ (Qing Dynasty) ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে এই পদ্ধতি বাতিল করে। কিন্তু ১৮০৬ সালে ইংল্যান্ড এই পরীক্ষা পদ্ধতি গ্রহণ করে এবং সরকারি বিভিন্ন কাজে প্রার্থী নিয়োগের জন্য এই পদ্ধতি অবলম্বন করে। পরবর্তীতে তারা ইংল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থায় পরীক্ষা পদ্ধতির সংযোজন করে। এইভাবে আস্তে আস্তে বিভিন্ন দেশে পরীক্ষা পদ্ধতি ছড়িয়ে পড়ে এবং দেশে দেশে গ্রহনযোগ্যতাও পেতে থাকে। বিশ্বব্যাপী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পরীক্ষা পদ্ধতির সূচনা হয়।

পরীক্ষার আবিষ্কারক কে

পরীক্ষা কে আবিষ্কার করেছেন, সেটা নিশ্চিত করে বলা কঠিন। গুগল করে এক মার্কিন ভদ্রলোকের নাম পাওয়া গেল বটে। হেনরি ফিশেল। ১৯১৩ সালের ২০ নভেম্বর জার্মানিতে জন্মগ্রহণ করেন হেনরি ফিশেল। আর মারা গেছেন ২০০৮ সালের ২ মার্চ। তাঁকেই আধুনিক পরীক্ষাপদ্ধতির জনক মনে করা হয়।

ভদ্রলোক শিক্ষকতা করতেন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটিতে। ছিলেন ইমেরিটাস অধ্যাপক। একদিন তাঁর মনে হলো, চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগে যেকোনো ঘটনা বা ব্যক্তিকে সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করা দরকার। আর এই যাচাই–বাছাইয়ের জন্য দরকার একটি সুনির্দিষ্ট পরীক্ষাপদ্ধতি। তারপর অনেক ভেবেচিন্তে তিনি পরীক্ষা নেওয়ার একটা প্রক্রিয়া তৈরি করেন।

তবে ইতিহাস বলছে, হেনরি ফিশেলের পরীক্ষাপদ্ধতি আবিষ্কারেরও বহু বহু বছর আগে থেকে পৃথিবীতে পরীক্ষা ছিল। বলা যায়, পরীক্ষাপদ্ধতির শুরু আসলে সভ্যতার গোড়ার দিকেই। অনলাইন ঘেঁটে জানা গেল, চীনারাই এটি প্রথম শুরু করেছিলেন। সরকারি চাকরিতে নিয়োগ দেওয়ার জন্য ‘স্ট্যান্ডার্ডাইজ টেস্ট’ বা সার্বভৌম পরীক্ষার শুরু করেছিলেন সুই রাজবংশের রাজারা। সেটা ৬০৫ খ্রিষ্টাব্দের কথা।

মজার ব্যাপার হলো, পরীক্ষা বা ইংরেজি এক্সামিনেশন শব্দটি কিন্তু চীন থেকে আসেনি। লাতিন শব্দ ‘এক্সামিনেশনেম’কে গ্রহণ করেছিল ফরাসিরা। তারা উচ্চারণ করত ‘এক্সামিনাছিওন’ (examinacion)। সেখান থেকে নানা পথ ঘুরে ইউরোপে গিয়ে হয়েছে এক্সামিনেশন।

নানা পথ ঘুরে মানে ফ্রান্স থেকে গিয়েছে জার্মানি, জার্মানি থেকে ইংল্যান্ডে ও আমেরিকায়। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এটিকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়। তারা চীনা সভ্যতার সেই পুরোনো পরীক্ষাপদ্ধতিকে একটু ঘষামাজা করে নতুনভাবে সাজিয়েছিল।

আমাদের এ অঞ্চল, অর্থাৎ ভারতবর্ষ দীর্ঘদিন শাসন করেছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। ফলে তাদের শিক্ষাব্যবস্থা, পরীক্ষাপদ্ধতি—অনেক কিছুই চালু আছে এ অঞ্চলে। আমাদের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরীক্ষা কিংবা চাকরির নিয়োগ পরীক্ষাগুলো যে পদ্ধতিতে হয়, তা অনেকটা ওই পুরোনো ব্রিটিশদের শেখানো।

তবে ইতিহাস এ কথাও জানান দিচ্ছে যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আসারও বহু আগে থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে শিক্ষার সূচনা হয়েছে। সেই ৪২৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারতে ছিল নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়, তক্ষশিলার মতো ভুবন বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শুরুর দিকে সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা ছিল বলে জানা যায় না। পরীক্ষার ফল নয়, বরং জ্ঞানার্জনকেই সবচেয়ে বড় পুরস্কার বলে মনে করত তারা।

কালক্রমে সেসব ইতিহাস তিরোহিত হয়েছে। এখন জ্ঞানার্জন নয়, পরীক্ষার ফল ও সনদ অর্জন প্রধান হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজকাল পড়ালেখার মূল উদ্দেশ্য পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। কিছু শেখা হলো কি হলো না…সে না হয় পরে দেখা যাবে!

ঘরে ঘরে জিপিএ 5.00 ডিগ্রিধারী, কিন্তু মানবতা কারো ভিতরে অবশিষ্ঠ নাই। সবার মাথা ভর্তি ডিগ্রি, কিন্তু কেওই সু-শিক্ষত তথা স্ব-শিক্ষিত নয়।

Related posts

এসআর-৭১ ব্ল্যাকবার্ড: বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির প্লেন

News Desk

ইংরেজি রিডিং পড়ার সহজ নিয়ম

News Desk

সিকাডা ৩৩০১ : ইন্টারনেট জগতের অমীমাংসিত রহস্য

News Desk

Leave a Comment