প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও রহস্যে ঘেরা এই পৃথিবীর বৈচিত্রপূর্ণ স্থান সম্পর্কে মানুষের কৌতুহলের অন্ত নেই। কৌতুহলী মানুষ আবিষ্কারের নেশায়, নতুন কিছু দেখার আশায় চষে বেড়াচ্ছে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। আর প্রকৃতি একের পর এক উন্মুক্ত করছে তার বৈচিত্রময় সৌন্দর্য্যের আবরণ। প্রকৃতির বৈচিত্রময় রুপে মোহিত হবার আনন্দ পেতে সেইসব দর্শনীয় স্থানগুলো বিশ্বব্যাপী ভ্রমণ প্রিয় মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এই পৃথিবীতে এমন অনেক জায়গা আছে যা পৃথিবীর স্বর্গ বললে ভুল হবে না। আজ আমরা জানবো বিশ্বের সুন্দর ১২ টি স্বর্গীয় স্থান সম্পর্কে।
১। এন্টিলোপ ক্যানিয়ন, আরিজোনা
যুক্তরাষ্ট্রের আরিজোনায় অবস্থিত এন্টিলোপ ক্যানিয়নের অনন্য বৈশিষ্ট্য একে বিশ্বের সৌন্দর্য্য প্রিয় মানুষের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে। মিলিয়ন বছর আগে পানির প্রবাহের কারণে সৃষ্টি হওয়া এই গভীর গিরিখাতের দেয়ালে সূর্য্যের আলো পৌঁছে অদ্ভুত আলোছায়া ও রঙের বৈচিত্র তৈরী করে পর্যটকদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে।
২। প্যাংগং লেক, লাদাখ
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৪ হাজার ফুট উপরে পাহাড় ও মরুভূমি বেষ্টিত ভারত-চীন সীমান্তবর্তী লাদাখে অনন্য রুপের আধার প্যাংগং লেক অবস্থিত। ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে সুনীল এই লেকের ভিন্ন ভিন্ন রুপের দেখা মেলে। ভূ-নিস্বর্গের জন্য বিখ্যাত প্যাংগং লেকে যাওয়ার পথ বছরের বেশিরভাগ সময়ই বন্ধ থাকে তাই প্যাংগং লেক ভ্রমণ করার জন্য জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।
৩। সালার দে ইয়ুনি, বলিভিয়া
বলিভিয়ার বৃহত্তম লবণভূমি সালার দে ইয়ুনি বর্ষাকালে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আয়নায় রুপান্তরিত হয়। সালার দে ইয়ুনি প্রায় ১০ হাজার ৫৮২ বর্গকিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত। লবণের মরুভূমি কিংবা প্রাকৃতিক আয়নার অপরুপ সৌন্দর্য্য অবলোকন করতে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক ও ফটোগ্রাফা বলিভিয়ায় ছুটে আসে।
৪। বারোস আইল্যান্ড, মালদ্বীপ
পর্যটকদের কাছে মালদ্বীপ অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। প্রায় আড়াইহাজার ছোট-বড় দ্বীপ নিয়ে গঠিত মালদ্বীপে অসংখ্য নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমণ্ডিত স্থান রয়েছে। বারোস আইল্যান্ড তেমনি এক প্রাকৃতিক নিস্বর্গ। পর্যটকদের অবকাশ যাপনের জন্য এখানে রয়েছে প্রয়োজনীয় সমস্ত আয়োজন। সুনীল সাগর, আকাশ আর প্রকৃতির অপূর্ব মায়া বারোস আইল্যান্ডকে করেছে মোহনীয়।
৫। কিউকেনহফ, ন্যাদারল্যান্ড
পৃথিবীর বৃহত্তম ফুল বাগানের জন্য ন্যাদারল্যান্ডের কিউকেনহফ শহর বিখ্যাত। পনেরশ শতকে যাত্রা শুরু করা বাগানের বর্তমান জমির পরিমাণ প্রায় ৮০ একর এবং যা থেকে বছরে ৭০ লাখেরও বেশি টিউলিপ ফুল উৎপাদন করা হয়। বিভিন্ন প্রজাতির টিউলিপ ফুল ছাড়াও ‘কিচেন গার্ডেন’ এবং ‘গার্ডেন অব ইউরোপ’ খ্যাত বাগানে প্রায় ৩০ ধরনের ফুল রয়েছে। প্রতিবছর মধ্য মার্চ থেকে মধ্য মে মাস পর্যন্ত বাগানটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত থাকে।
৬। হা লং বে, ভিয়েতনাম
ভিয়েতনামের কুয়াংনি প্রদেশে অবস্থিত ১৫৫৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের হা লং বে-র নীল স্বচ্ছ পানি ও চুনাপাথরের পাহাড় এর সৌন্দর্য্য বহুগুন বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রায় ২ হাজার ক্ষুদ্র চুনাপাথরের দ্বীপের এই হা লং বে-তে রয়েছে কয়েকটি ভাসমান গ্রাম ও কৃত্রিম গুহা। ১৯৯৪ সালে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে হা লং বে কে স্বীকৃতি প্রদান করে।
৭। নর্দান লাইটস বা অরোরা, আইসল্যান্ড
আকাশে রঙের ছড়াছড়ি অর্থাৎ নর্দান লাইটস বা অরোরা (Aurora) প্রকৃতির এক অপূর্ব সৌন্দর্য্য নিদর্শন। নরওয়ে, সুইডেন, কানাডা, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, আইসল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও গ্রীনল্যান্ড থেকে সন্ধ্যা এবং রাতের বেলায় অরোরা দেখা যায়। তবে আইসল্যান্ডে অবস্থিত পিংভেলার ন্যাশনাল পার্ক নর্দান লাইটস বা অরোরা দেখার জন্য জনপ্রিয় স্থান হিসাবে সুপরিচিত। ইউনেস্কো কতৃক বিশ্বের দর্শনীয় স্থান হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত এই স্থানে প্রতি বছর হাজার হাজার ভ্রমণ পিপাসু পর্যটক ছুটে আসে।
৮। উইস্টেরিয়া টানেল, জাপান
জাপানের কাওয়াচি ফুজি গার্ডেনে অবস্থিত উইস্টেরিয়া টানেল যেন এক প্রশান্তির জায়গা। পৃথিবীতে স্বর্গীয় অনুভুতি নিয়ে আসা উইস্টেরিয়া টানেলের সৌন্দর্য্য দেখতে হলে আপনাকে অবশ্যই এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যে কাওয়াচি ফুজি গার্ডেনে যেতে হবে। ব্যক্তি মালিকানাধীন এই বাগান শুধুমাত্র উইস্টেরিয়া ফুলের মৌসুমে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
৯। ফি-ফি দ্বীপপুঞ্জ, থাইল্যান্ড
ফি-ফি দ্বীপপুঞ্জ নান্দনিক সৌন্দর্য্যের জন্য অত্যন্ত সুপরিচিত তাই প্রতি বছর অসংখ্য পর্যটকদের এই দ্বীপ ভ্রমণে আসেন। ভ্রমণকারীদের জন্য এই দ্বীপে রয়েছে ক্রুজ, ক্লিফ ডাইভিং, রক ক্ল্যাইম্বিং এবং মাছ ধরার ব্যবস্থা। এছাড়াও ফি ফি আইল্যান্ডের মায়া উপসাগর এখানকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যপূর্ণ স্থান হিসাবে প্রসিদ্ধ।
১০। সিক্রেট লেগুন, পালওয়ান, ফিলিপাইন
ফিলিপাইনের স্বর্গ হিসাবে খ্যাত পালাওয়ান দ্বীপের সাগরে জেগে ওঠা লাইমস্টোনের পাহাড়গুলো যেন প্রকৃতির অনন্য রত্ন। পালাওয়ান দ্বীপের জাতীয় উদ্যানটি ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকার অন্তর্ভুক্ত। এখানে রয়েছে চিত্তাকর্ষক চুনা পাথরের গুহা এবং ভূগর্ভস্থ নদী বা সিক্রেট লেগুন। বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল, উপত্যকা আর পাহাড়ের মায়াজালে পালওয়ান সৈকত পরিণত হয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় সৈকতগুলোর মধ্যে অন্যতম।
১১। ঝাংজিয়াজি ন্যাশনাল পার্ক, চীন
চীনের হুনান প্রদেশের তিয়ানমেন পর্বতে অবস্থিত ঝাংজিয়াজি ন্যাশনাল ফরেস্ট পার্ক চীনে ভ্রমণকারী মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য এখানে বিভিন্ন স্থাপনার পাশাপাশি রয়েছে ১৪১০ ফিট উঁচুতে নির্মিত কাচের তৈরী সেতু, তিয়ানমেন পর্বত এবং ঝাংজিয়াজি ন্যাশনাল পার্কের বুনো সৌন্দর্য্য।
১২। পোখারা, নেপাল
ফেওয়া লেকে জড়িয়ে থাকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি পোখারাকে নেপালের ভূস্বর্গ ও নেপাল রানী বলা হয়। নেপালে সবচেয়ে সুন্দর মাউন্টেন ভিউ পেতে এ শহর অতুলনীয়। লেক ও পাহাড়ের সৌন্দর্য্য ছাড়াও ভ্রমণকারীদের জন্য পোখারায় রয়েছে প্রাকৃতিক ঝর্ণা, প্যারাগ্লাইডিং, ঘোড়ায় চড়ার ব্যবস্থা। এছাড়াও পাহাড়ের চুড়ায় সূর্যোদয় কিংবা সূর্যাস্থ দেখতে পোখারায় ভীড় করেন হাজারো দর্শনার্থী।
সূত্র : ঢাকা ট্রিবিউন বাংলা, ভ্রমণ গাইড