১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। ভালোবাসাকে কেন্দ্র করেই মানুষের জন্ম ও বেড়ে ওঠা। ভালোবাসা হয়ে ওঠে সমস্ত সুখের উৎস ও বেঁচে থাকার প্রয়াস। তাই ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটি সব সম্পর্কের ও সব বয়সীদের মনে দিয়ে যায় দোলা।
দিনটিতে প্রেমিক-প্রেমিকা, বন্ধু-বান্ধব, স্বামী-স্ত্রী, মা-সন্তান, ছাত্র-শিক্ষকসহ বিভিন্ন বন্ধনে আবদ্ধ মানুষ একে অপরের প্রতি ফুল, চকোলেট, কার্ড ও অন্যান্য উপহার দিয়ে ভালোবাসা প্রকাশ করে থাকে।
এদিনে দেশের বিভিন্ন পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো ভালোবাসার মানুষদের দ্বারা পূর্ণ থাকে। ভ্যালেন্টাইন ডে বা ভালোবাসা দিবসের উৎপত্তির গল্পটি আমরা প্রায় সবাই জানি। তবে কিভাবে বিশ্ব থেকে এই ভালোবাসা দিবস এলো বাংলাদেশে? চলুন জেনে নেয়া যাক:-
‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ হিসেবে পরিচিত ভালোবাসা দিবস বাংলাদেশে সূচনা করেন সাংবাদিক শফিক রেহমান। জানা যায়, তার তেজগাঁওয়ের পত্রিকা অফিসে কেউ চাকুরীর জন্য গেলে তাকে সাথে তার মেয়ে বন্ধুকে নিয়ে যেতে হতো। ভালোবাসা দিবস অভিধা প্রথম ব্যবহার করেন শফিক রেহমান।
এ কারণে শফিক রেহমানকে বাংলাদেশে ভালবাসা দিবসের জনক বলা হয়। তিনি তার অফিসের সামনে সড়কটিরও নামকরণ করেন লাভলেন। বিভিন্ন টেলিভিশন ও প্রিন্ট মিডিয়ায় তার প্রচারণার কারণে এবং বাণিজ্যিক কারণে বাংলাদেশে এ দিবসটি জনপ্রিয় হয়।
বাংলাদেশে ভালোবাসা দিবস হচ্ছে প্রতি বছর ১৪ ই ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে পালিত একটি দিবস। খৃষ্টীয় ৪৯৬ সাল থেকে এ দিবসটি সারা বিশ্বে পালিত হলেও বাংলাদেশে ১৯৮০ সালের পর থেকে এ দিবসটি জনপ্রিয় হয়। বাংলাদেশে এ দিবসকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন রকম শুভেচ্ছাসূচক কার্ড, ফুল, চকোলেট বা উপহারসামগ্রী বিনিময় করে বিশেষত তরুণ তরুণীরা।
লেখালেখির জন্য শফিক রেহমানকে ১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত লন্ডনে নির্বাসিত থাকতে হয়েছিল। সে সময় তিনি সেখানে ‘ভালোবাসা দিবস’ উদ্যাপন হতে দেখেছেন। লন্ডনে নব্বইয়ের দশকে খুব বেশি উদ্যাপিত হওয়া শুরু হয় ভ্যালেন্টাইন ডে। বাণিজ্যিক কারণে হলেও সেখানকার স্বামী-স্ত্রী, প্রেমিক-প্রেমিকারা দিবসটিকে সাদরে গ্রহণ করেন।
ওই সময়ই শফিক রেহমান সিদ্ধান্ত নেন, বাংলাদেশে ফিরে আসার পর দিনটিকে বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেবেন। কারণ ভ্যালেন্টাইন ডের মধ্যে ভালোবাসার বাণী খুঁজে পেয়েছিলেন শফিক রেহমান। আর ঘন বসতির বাংলাদেশে ভালোবাসাটা অনেক বেশি দরকার। সুসম্পর্ক, সহাবস্থান গড়ে ওঠা জরুরি।
তবে বাংলাদেশে শুরু করার আগে লন্ডনে প্রচলিত ‘সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে’ থেকে শুরুর ‘সেন্ট’ শব্দটি ধর্মীয় কারণে বাদ দেওয়া হয়। এটি ‘ভালোবাসার দিন’ হিসেবে প্রচার শুরু হয় তৎকালীন যায়যায়দিন পত্রিকায়। সেই সঙ্গে দিনটিকে শুধু স্বামী-স্ত্রী, প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে ভাই-বোন, বাবা-মা-সন্তানদের মধ্যে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশও যুক্ত করা হয়।
বলা হয়, ‘এই দিনে মায়ের প্রতি ভালোবাসা দেখাও। অন্তত এক কাপ চা বানিয়ে মাকে খাওয়াও।’ তখন ওই পত্রিকায় ‘ভালোবাসার দিন’ নিয়ে লেখাও আহ্বান করেন সম্পাদক শফিক রেহমান। বিপুলসংখ্যক পাঠক নিজ নিজ ভালোবাসার গল্প লিখে চিঠি পাঠায় পত্রিকাটিতে। পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে ব্যাপক আকারে ১৪ জানুয়ারিকে ‘ভালোবাসা দিবস’ হিসেবে পালন করা শুরু হয় বাংলাদেশে।
‘লাভ লেন’: ভালোবাসা দিবস পালন শুরুর পাশাপাশি রাজধানী ঢাকার একটি সড়কের নাম ‘লাভ লেন’ রাখতে সক্ষম হয়েছেন শফিক রেহমান। আসলে তিনি নিজে যখন প্রথম প্রেমে পড়েছিলেন তখন চট্টগ্রামে ডিসি হিলের উল্টোদিকে ছোট্ট একটি রাস্তার নাম ছিল লাভ লেন। এই লেনের শুরুতে পানের দোকান ছিল। প্রেমিক-প্রেমিকারা সেখানে এসে পান খেত। পানের আকৃতিও ছিল হৃদয়ের মতো। শফিক রেহমান যখন যায়যায়দিনের প্লট বুকিং দেন তখন সেই রাস্তাগুলোর কোনো নাম ছিল না। এ সুযোগে তৎকালীন নগরপিতার মাধ্যমে এলাকাবাসীর আগ্রহে তেজগাঁওয়ের এ রাস্তার নাম রাখা হয় ‘লাভ লেন’।