সংক্রমণ হলে দূরে থাকতে হয়, এই সামাজিক অভ্যাস আগে থেকেই চালু আছে এক প্রজাতির বানরের মধ্যে |
কোভিড-পরবর্তী বিশ্বে যা মানুষকে বহু কষ্ট করে শিখতে হয়েছে, সেই সামাজিক দূরত্ব রক্ষার নীতি নাকি অন্য প্রাণীদের মধ্যে অনেক আগে থেকে রয়েছে। এবং, এর পিছনে রয়েছে এক প্রজাতির মাইক্রোবস বা জীবাণু। এমনটাই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। কিছু প্রজাতির মাইক্রোবস বা অণুজীবের সংক্রমণ ঠেকাতে এক প্রজাতির বানর অপরের থেকে দূরত্বের নীতি মেনে চলে! যা সংক্রমণ বাগে আনতে সাহায্য করে। কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ রুখতে তো বিশ্ব জুড়ে মানব সমাজকেও এখন সেই সামাজিক দূরত্বের নীতি নিতে হয়েছে।
বিখ্যাত জার্নাল ‘অ্যানিম্যাল বিহেভিয়ার’-এ একটি গবেষণা প্রবন্ধ সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে, যাতে এমন দাবি করা হয়েছে। মূলত এক প্রজাতির বানরের উপর যে গবেষণা করা হয়েছে। দেখানো হয়েছে, ঘন জঙ্গলের মধ্যে বানরদের সংক্রমণ হলে, কী ভাবে তারা দূরে-দূরে থাকে। শুধু তা-ই নয়, অন্ত্রে যে নানা ধরনের মাইক্রোবস বা জীবাণু থাকে, তার মধ্যে এক প্রজাতির জীবাণু তাদের গাছের পাতা হজম করতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে, তাদের সামাজিক গোষ্ঠীবদ্ধ হতেও যেমন সাহায্য করে কিছু অণুজীব, তেমন আবার সংক্রমণের সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মূলে আর এক ধরনের জীবাণু।
এই জীবাণুর প্রভাবে বানররা তাদের খাদ্য বিষয়ে সচেতন হয়। আবার, বিশেষ জীবাণুর প্রভাবে যাদের সঙ্গে মেলামেশা করত, তাদের থেকেও দূরে থাকে। টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক ইভা উইকবার্গ বলছেন, ‘বানরদের মধ্যে কী ভাবে সংক্রমণ হয় এবং তা রুখতে তারা কী করে, সেটা জানতে পারলে আগাম বোঝা যাবে কোনও রোগ কী ভাবে ছড়ায় এবং তা রুখতে কী করা প্রয়োজন। বর্তমানে কোভিড-১৯ অতিমারীর ফলে আমরা যে অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, তার সঙ্গে এর অনেকাংশে মিল রয়েছে। এক ধরনের মাইক্রোবস ওদের নিজেদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করে দেয়। এর ফলে সংক্রমণ ছড়ানো বাধা পায়।’
বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, একটি গ্রুপের কিছু বানরের সংক্রমণ হলে, তারা যখন অন্য শ্রেণির কাছাকাছি এসেছে, তখন সেই সংক্রমণ অন্য গ্রুপের মধ্যে ছড়িয়েছে। যার সঙ্গে মানুষের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ছড়ানোর মিল পাওয়া যায়। যে কারণে সামাজিক দূরত্বের উপর বিশ্ব জুড়ে এত জোর দেওয়া হচ্ছে। আবার, তাঁরা গবেষণায় এ-ও দেখেছেন, বানরদের মধ্যে দূরত্ব গড়ে দেয় এক প্রজাতির মাইক্রোবস। ফলে, সংক্রমিত বানরদের কাছে যায় না অন্য গোষ্ঠীর বানর।
গবেষকরা বলছেন, গত এক দশকে মাইক্রোবস নিয়ে গবেষণা বেড়েছে। ঘানার দু’টি অরণ্য ঘেরা গ্রাম বোয়াবেং এবং ফিয়েমায় ৪৫টি বিশেষ প্রজাতির মেয়ে বানরের উপর এই পরীক্ষা করা হয়েছে। এই প্রজাতির বানরের সঙ্গে যখন অন্য প্রজাতির বানরের নৈকট্য তৈরি হয়, তখন তাদের মধ্যে ওই মাইক্রোবস ছড়ায়, এর প্রমাণ গবেষকরা পেয়েছেন। বানরদের মধ্যে যে ভাবে সংক্রমণ ছড়ায়, তার সঙ্গে মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ানোর মিল রয়েছে। আবার, বিশেষ প্রজাতির মাইক্রোবসের প্রভাবেই বানররা নিজেদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করে, ফলে সংক্রমণ ছড়ানোর গতি রুদ্ধ হয়। উইকবার্গ বলছেন, ‘বন্যপ্রাণীর মধ্যে গবেষণালব্ধ ফল থেকে বোঝা যায়, সংক্রমণের সময় সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা। অতিমারীর মতো ঘটনা ঘটলে যা থেকে আগাম শিক্ষা নেওয়া যেতে পারে। তবে, এ নিয়ে আরও গবেষণা হওয়া দরকার।’