Image default
জানা অজানা

মানবিক/আর্টস নিয়ে পড়লে কী হওয়া যায়?

পড়ালেখার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ বিষয় নির্বাচন। অনার্স কিংবা নবম-দশম শ্রেনীতে এই বিষয় নির্বাচন করতে যাওয়ার পর, বহু জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন, মানবিক নিয়ে পড়লে কি হওয়া যায়? এই পড়াশোনা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নানা ধরণের কাজের ক্ষেত্রে জড়িয়ে আছে ওতোপ্রতোভাবে।

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা পদ্ধতির আলোকে আমাদের চাকরির ক্ষেত্র সমূহ নির্ধারণ করতে হয়, সেই স্কুল জীবনের সময়কাল থেকেই। আপনি ভবিষ্যতে কি হবেন? কোন ক্ষেত্রে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান? তার উপর ভিত্তি করেই স্কুল জীবনেই আপনার বিভাগ নির্ধারণ করতে হবে। তাই, সঠিক বিভাগ আপনার জীবনের লক্ষ্য অর্জন করতে সাহায্য করবে।

যখন চাল এ চালের তুলনায় পোকা/ ঝিল/ অন্যান্য অখাদ্য বেশি হয়; তখন ঐসকল অখাদ্য না খুটে/ বেছে, চাল আলাদা করা ভাল বা সহজ।

বর্তমানে মানবিক/ আর্টস বিভাগে অধ্যায়ণ করে অনেক কিছুই হওয়া যায়। তাই আপনাকে দেখতে হবে কি হওয়া যায় না।ডাক্তার/ ইঞ্জিনিয়ার হওয়া যায় না। তবে বর্তমানে এগুলোও হওয়ার খাত উন্মুক্ত হয়েছে। যেমনঃ এসএসসি তে মাণবিকে পড়ে আপনি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার এবং পরবর্তীতে বিএসসি প্রাইভেটে করে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারও হতে পারেন।

মাধ্যমিক স্তরে উচ্চশিক্ষার খাতিরে পরবর্তীতে ক্যারিয়ার গঠনের জন্য নবম শ্রেণিতে বিভাগ নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। নবম শ্রেণিতে ৩ ধরনের বিভাগ শিক্ষার্থীদের বেছে নিতে হয়। তা হলোঃ

১ . বিজ্ঞান বিভাগ
২ .ব্যবসা বিভাগ
৩ .মানবিক বিভাগ

সাধারণত যাদের প্রগতিশীল ধারায় ক্যারিয়ার গঠনের কথা না ভেবে স্বাধীনচেতা হয়ে নিজের ভবিষ্যৎ কর্মক্ষেত্র গঠনের চিন্তা করে তারা যে বিভাগ বেছে নেয় তাই, মানবিক বিভাগ নামে পরিচিত।

প্রতিবছর ১৩ লাখ থেকে ১৪ লাখ শিক্ষার্থী HSC পাশ করে বের হয়। তারপর জীবনের সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্তটি নিতে হয় বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন এবং সেই সাথে সাবজেক্ট নির্বাচন। যারা মানবিক থেকে পড়ে এসেছেন কিংবা অন্য বিভাগ থেকে তাদের মনের কোটি টাকার প্রশ্ন হলে, মানবিক নিয়ে পড়লে কি হওয়া যায়?

মানবিক শাখার বিষয় কি কি?

মানবিক বিভাগে এমন একটি বিভাগ যার মধ্যে বিদ্যমান নির্দিষ্ট কিছু বিষয় ছাড়াও, অতিরিক্ত আরও কিছু বিষয় অধ্যায়ন করতে হয়৷ মানবিক বিভাগের উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় হলো:

অর্থনীতি, আইন, সমাজবিজ্ঞান, সমাজকর্ম, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, লোকপ্রশাসন, সাংবাদিকতা সহ আরও অনেক বিষয়।

এই সকল বিষয় মানবিক বিভাগের অন্তর্ভুক্ত। মানবিক বিভাগ বেছে নেওয়া যেকোনো ছাত্র কিংবা ছাত্রী, এই বিষয়সমূহের উপর অধ্যায়ন করার সুযোগ পেয়ে থাকে। চলুন জেনে আসি মানবিক বিভাগের অন্তর্ভুক্ত এইসকল বিষয়সমুহ সম্পর্কে।

অর্থনীতি: মানবিক বিভাগের অন্যতম এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের নাম হলো অর্থনীতি। এই বিষয়ের উপর নির্ভরশীল একটি দেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা। মানবিক নিয়ে পড়লে কি হওয়া যায়? এ নিয়ে যারা চিন্তিত, তারা চোখ বন্ধ করে এই সাবজেক্ট নিতে পারবেন। কিন্তু সমস্যা হলো, এটা কিছুটা কঠিন সাবজেক্ট।

আইন: একটি দেশের শাসনব্যবস্থা নির্ভরশীল আইনের উপর। আর তাই, আইন সম্পর্কে পড়াশোনার পরিপূর্ণ জ্ঞান রাখা যেকোনো ব্যক্তির কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সমাজবিজ্ঞান: আমাদের আদি থেকে বর্তমান অবস্থা পরিপূর্ণরূপে নির্ভরশীল সমাজ ব্যবস্থার উপর। সমাজ সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা রাখা সকলের পরিপূর্ণ কর্তব্য।

সমাজকর্ম: সমাজের রীতিনীতি, আচার আচরণ এবং ধর্মীয় শিষ্ঠাচারের উপর নির্ভর করে সমাজকর্ম।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক: একটি দেশের সাথে আরেকটি দেশের সম্পর্ক কেমন হবে তা আলোচনা করা হয় এই বিষয়টিতে।

লোক প্রশাসন: এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে প্রশাসন ব্যবস্থার সকল কিছু আলোকপাত করা হয়।

সাংবাদিকতা: সাংবাদিকতা যেকোনো ক্ষেত্রে একটি দেশের প্রাণস্বরূপ। দেশের খবরা-খবর থেকে শুরু করে বহি বিশ্বের খবরা-খবর জনগনের সামনে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করাই সাংবাদিকদের কাজ।

যুক্তিবিদ্যা: যুক্তি ব্যবহার করে কিভাবে জীবনে সমস্ত সিদ্ধান্ত অন্যভাবে নেওয়া যায় তাই আলোচনা করা হয় এই বিষয়ে। মানবিক নিয়ে পড়লে কি হওয়া যায়, এই নিয়ে টেনশনে থাকলে, এই সাবজেক্টে না যাওয়া ভাল।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান: একটি রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থাসহ রাষ্ট্রের সমস্ত রীতিনীতি আলোচনা করা এই বিষয়ে।

ইতিহাস: বহু বছর আগের রচিত ইতিহাস, সভ্যতার আলোচনা করা হয় এই বিষয়ে।

দর্শন: মানবিক বিভাগের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এটি। জগতের সব কিছু দার্শনিক ব্যাখ্যা এবং অতীতের দর্শন শাস্ত্রের ইতিহাস পড়ানো হয় এই বিষয়ে।

মানবিক নিয়ে পড়লে কি হওয়া যায়

আর্টস নিয়ে পড়লে কি চাকরি পাওয়া যায়?

মানবিক বিভাগকে ক্যারিয়ার গঠনের অন্যতম প্রাণস্বরূপ বলা হয়। কারণ, আপনি যদি বিভাগ হিসেবে মানবিককে বেছে নেন তাহলে, আপনি ক্যারিয়ার গঠনের অনেক ক্ষেত্র পাবেন। এখন আপনি চিন্তা করতেই পারেন যে, মানবিকে পড়লে আপনি কি ধরণের চাকরি করতে পারবেন। আপনাদের সুবিধার জন্য তার একটি বিবরণ দেওয়ার চেষ্টা করছি। আশা করি আপনাদের উপকার হবে।

আইনের পেশায়: আইন সবসময় ক্ষমতাধর হিসেবে কাজ করে মানুষের উপর। আইন নিয়ে অধ্যায়ন করে থাকেন তাহলে, আপনি একজন উকিল হিসেবে কিংবা আইনি পরামর্শ দাতা হিসেবে যেকোনো প্রতিষ্ঠান এ কাজ করতে পারবেন।

চাকরি ছাড়া, স্পেসিফিকভাবে আরও যেসব ক্ষেত্রে কাজ করতে পারবেন:

সহকারী জজ
জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট
ব্যারিস্টার
জাজ অ্যাডভোকেট জেনারেল
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক
ল অফিসার
আইনি পরামর্শক

শিক্ষকতা: শিক্ষকের মর্যাদা সবার উপরে। তাই, আপনি শিক্ষক হিসেবে নিজেকে আত্নপ্রকাশ করতে পারবেন। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েরর শিক্ষকতার পাশাপাশি, পাইভেট পড়াতে পারবেন। এছাড়া, অনলাইনে ক্লাসও করাতে পারবেন।

ব্যাংকে চাকরি করতে পারবেন: আপনি ব্যাংকে চাকরি করার অফুরন্ত সুযোগ পাবেন এই মানবিক বিভাগ থেকে পড়লে। তবে, এটা সত্য, আপনি সব পজিশনের জবের জন্য আবেদন করতে পারবেন না। সুনির্দিষ্ট কিছু পজিশনে ব্যাংক জবের জন্য আবেদন করতে পারবেন। অর্থনীতি সাবজেক্টের হলে, ভিন্ন কথা।

দূতাবাসে চাকরি: বিভিন্ন দেশের দূতাবাস সমূহে চাকরি করতে পারবেন। সেই সাথে বাইরের দেশের বন্ধুত্ত রক্ষার খাতিরে বিদেশের সাথে নিজ দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করতে সচেষ্ট হবেন।

পুলিশ হয়ে পারবেন: একজন পুলিশ হিসেবে দেশ ও দশের কল্যানে কাজ করতে পারবেন। পুলিশের বড় পদের জন্য অবশ্যই বিসিএস দিতে হবে।

সরকারি চাকরি: একজন সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে ক্যারিয়ার গঠন করতে পারবেন। তবে, এক্ষেত্রে ফার্স্ট ক্লাস জবের জন্য অবশ্যই বিসিএস দিতে হবে। জেনে নিন বিসিএস প্রস্তুতি কিভাবে নিতে হয়।

সাংবাদিকতা ও লেখালিখি: আপনি যদি সাংবাদিকতা, বাংলা কিংবা ইংরেজি বিভাগের হন, তাহলে সাংবাদিকতার চাকরি করতে পারেন। এছাড়া, কন্টেন্ট লিখেও টাকা আয় করতে পারেন।

বিভিন্ন সশস্ত্র বাহিনীর কাজের সুযোগ: বিভিন্ন ধরনের সশস্ত্র বাহিনীর কাজ করে নিজ দেশের সুরক্ষা রক্ষায় কাজ করতে পারবেন। যেমন, আইন বিভাগের হলে, “ল অফিসার” হওয়ার সুযোগ।

এনজিওতে চাকরি: সমাজকর্ম কিংবা সমাজকল্যান নিয়ে অনার্স-মাস্টার্স করা, শিক্ষার্থীদের এনজিতে খুব ভাল বেতনে চাকরি করতে পারবেন। এছাড়াও, আপনি মানবিক বিভাগ থেকে অধ্যায়ন করে দেশের কিংবা রাষ্ট্রের যেকোনো মহাগুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন।

মানবিক বিভাগ থেকে বিসিএস

মানবিক বিভাগে অধ্যায়নকারী ছাত্রছাত্রীদের জন্য একটি স্বপ্নের চাকরি হলো বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস)। প্রায় অনেক শিক্ষার্থী ক্যাডার হবার নেশায় যোগদান করে বিসিএস এ। তাই, মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য অন্যতম পছন্দের চাকরি হলো বিসিএস। বিসিএসে চাকরির অনেক ক্ষেত্র পেয়ে থাকে মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা। যেমনঃ

প্রশাসন: বিসিএসে প্রশাসন বিভাগে চাকরি করতে পারবেন। এই বিভাগে চাকরির মাধ্যমে আপনি অন্যান্য বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ পাবেন। সেই সাথে রয়েছে একটি সুন্দর এবং আরামদায়ক জীবন অতিবাহিত করার নিশ্চয়তা।

শিক্ষা: এছাড়াও, বিসিএসে শিক্ষা বিভাগেও যেতে পারবেন। শিক্ষায় আপনি যেকোনো সরকারী কলেজের বিসিএসধারী প্রফেসর হতে পারবেন। সেই সাথে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবেও আত্নপ্রকাশ করতে পারবেন।

স্বরাষ্ট্র: এই বিভাগের ক্ষমতার কথা আর নতুন কি বলব! সব বিভাগের উপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণকারী হলো এই বিভাগ। তাই আপনি যদি বিসিএসে স্বরাষ্ট্র ক্যাডার পেয়ে থাকেন তাহলে কিছুতেই সুযোগ হারাবেন না। কারণ এর মাধ্যমে অফুরন্ত ক্ষমতা এবং একটি সুখী জীবন যাপন করার রয়েছে অফুরন্ত নিশ্চয়তা।

খাদ্য: বিসিএস খাদ্য বিভাগে এর মাধ্যমে আপনি খাদ্য বিভাগে চাকরির সুযোগ পাবেন। যেখানে অফুরন্ত চ্যালেঞ্জ এর পাশাপাশি রয়েছে আরামদায়ক জীবনের নিশ্চয়তা।

পররাষ্ট্র: বিসিএস পররাষ্ট্র বিভাগের অধীনে আপনি বিভিন্ন দূতাবাস থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের অধিনস্ত নানা ধরনের কূটনৈতিক কাজ এ ভাগিদার হতে পারবেন।সেই সাথে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবেন।

কর: একটি দেশের ব্যবস্থাপনা নির্ভর করে কর ব্যবস্থার উপর। তাই, আপনি যদি কর বিভাগে কাজ করার সুযোগ পান তাহলে নিজ থেকে দায়িত্ব যথাযথ পালনের সুযোগ অর্জন করতে পারবেন।

ডাক: ডাক বিভাগ সুদিন ফিরে এসেছে। তাই আপনি যদি বিসিএস ডাক বিভাগে চাকরির সুযোগ পেয়ে থাকেন তাহলে আপনি যেমন কাজের সুযোগ পাবেন ঠিক তেমনি করে কর্মজীবনে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সমর্থ হবেন।

সড়ক ও জনপদ বিভাগ: বিসিএসে সড়ক ও জনপদ বিভাগে কাজ করার সুযোগ পাবেন মানবিক বিভাগের অধীনে শিক্ষার্থীরা।

বন: বিসিএসে বন বিভাগে কাজ করার সুযোগ থাকবে।

রেলওয়ে: বিসিএসে রেলওয়ে বিভাগে কাজের সুযোগ পাবেন। যেখানে সবকিছু রেলওয়ে মন্ত্রনালয় থেকে নির্ধারণ করা হয়।

গণপূর্ত: বিসিএস গণপূর্ত বিভাগে যেতে পারে। যেখানে গণপূর্ত বিভাগের অধীনে সকল কাজ নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।

এমন আরও অনেক বিসিএস এর বিভাগে মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা নিজেদের পছন্দের কর্মক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিতে পারবেন।

আশা করি বুঝতে পারছেন, মানবিক নিয়ে পড়লে কি হওয়া যায়। পড়াশোনা সম্পূর্ণ আপনার নিজের উপর নির্ভর করে থাকে। আপনি যে বিভাগে অধ্যায়ন করেন না যদি ভালো করে, মন লাগিয়,জেনে বুঝে শিখে অধ্যায়ন করেন তাহলে আপনি কর্মজীবনে সফলতা অর্জন করতে পারবেন।

Related posts

পৃথিবীর বুকে সব থেকে বেশি দিন বেঁচে থাকা ডাঙ্গায় বাস করা প্রাণী

News Desk

গল্পটা প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের

News Desk

মহাবিশ্ব সম্পর্কে বিস্ময়কর ৭ টি অজানা তথ্য

News Desk

Leave a Comment