Image default
জানা অজানা

শুধু মানুষ নয় ,বাতের ব্যথায় ডাইনোসর-ও ভুক্ত

প্রায় আট কোটি বছর আগে অতিকায় টিটানোসোরাসও নাকি বাতের ব্যথায় ভুগত? না, এটা স্পিলবার্গের কোনও সিনেমার চিত্রনাট্য নয় মোটেই, জীবাশ্মবিদদের সাম্প্রতিক সমীক্ষা তেমনই বলছে। আর সেই পূর্বপুরুষ ডাইনোসরের হাড়ের অসুখই বহন করছি আমরা?

শীতের সকালে বংশগত বাতের ব্যথায় যখন পা নাড়তে কপালে ভাঁজ জোরালো হচ্ছে, তখন যদি শোনেন এই ব্যথা আপনি ডাইনোসরের থেকে উত্তরাধিকারে পেয়েছেন? কি, চোখ কপালে উঠল তো? ক্রিটেশিয়াশ রিসার্চ জার্নালের আগামী ফেব্রুয়ারির সংখ্যায় জীবাশ্ম বিশেষজ্ঞরা কিন্তু এমন কথাই বলছেন।

শুধু মানুষ নয় ,বাতের ব্যথায় ডাইনোসর-ও ভুক্ত

ডাক্তারি ভাষায় যার নাম অস্টিওমায়েলিটিস অর্থাৎ হাড়ের কোষে ইনফেকশন ছড়ানো, সেই রোগের অস্তিত্ব জুরাসিক যুগের সরীসৃপদের ক্ষেত্রে ছিল বিরলতম। বিজ্ঞানীরা এতদিন এমন কোনও জীবাশ্ম পাননি, যাতে এই রোগের উপসর্গ উপস্থিত। কিন্তু সম্প্রতি প্রায় আট কোটি বছর আগেকার টিটানোসোরাসের জীবাশ্ম পরীক্ষা করতে গিয়ে প্রকাশ্যে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য! এই হাড়ের সমস্যা সেই প্রাগৈতিহাসিক ক্রিটেশিয়াশ যুগের বিশালাকৃতি টিটানোসরাসকেও কাবু করেছিল! এই ইনফেকশন থেকে হাড়ের ক্ষয়ও ডাইনোসরদের মধ্যে বিরল ছিল না। ফসিলের হাড়ের কোষপর্দা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে, এই ইনফেকশন ঘুরেফিরে আসে। আর তাই বোধহয় সেই আট কোটি বছরের পুরোনো রোগ অভিব্যক্তির কোন অজ্ঞাত নিয়মে মানবজাতির অস্থিমজ্জাতেও ঢুকে গিয়েছে। এমনকী দাঁত বসিয়েছে ছোটদের হাত আর পায়ের হাড়েও!

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সে ইনফেকশন ছড়াচ্ছে কোমর আর শিরদাঁড়ার পরতে পরতে। এতদিন ডাক্তাররা রুগিদের শিখিয়েছেন, দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বুঝুন। সেই সঙ্গে মাদকের খারাপ দিক নিয়েও অনেক প্রচার হয়েছে। এখন জানা যাচ্ছে, দাঁতের ইনফেকশন বা মাদকের ব্যবহার মানুষের শরীরে অস্টিওমায়েলিটিসের প্রবণতা বাড়ায়। এ ছাড়াও, টিবির মত রোগে দীর্ঘদিনের অসুস্থতা অথবা হাড়ের সঙ্গে যুক্ত ফাঙ্গাল ইনফেকশন অনেক সময় এই রোগের কারণ হয়ে ওঠে। কিন্তু অস্টিওমায়েলিটিসের যে কারণগুলো বলা হল, তার কোনওটাই তো ডাইনোসরদের ক্ষেত্রে খাটে না! তা হলে তারা সেই রোগে আক্রান্ত হল কী ভাবে?

এর সদুত্তর এখনও স্পষ্টভাবে দিতে পারছেন না কেউই। তবে অনেকগুলো অনুমানের কথা বলা হচ্ছে। সামনে আসছে আরও গভীর গবেষণার প্রয়োজনীয়তাও। প্রাথমিক ভাবে ধরা হচ্ছে, কোন আঘাত থেকে তৈরি হওয়া না শুকোনো গভীর ক্ষতই টিটানোসরাসদের জীবনে এই রোগ ডেকে এনেছিল। গবেষণা বলছে, থুতনির লাগোয়া রক্তনালী দিয়েই প্রবেশ করেছিল অস্টিওমায়েলিটিসের পরজীবীরা। সেখান থেকেই হাড়ের পরতে পরতে ছড়িয়েছিল ইনফেকশন। সহ-গবেষক টিটো ওরেলিয়ানোর কথায়, শরীরের কোষের মৃত্যুর আগেই এই ইনফেকশন দ্রুত ছড়িয়ে যায়। আধুনিক ওষুধের ক্ষেত্রেও এ ধরনের হিস্টোলজিক্যাল তথ্য এর আগে সামনে আসেনি। হিস্টোলজি আদতে কোষ কলা এবং বিভিন্ন অঙ্গের আণুবীক্ষণিক বিন্যাস নিয়ে পড়াশোনা। সেই হিস্টোলজিক্যাল গবেষণা রোগটির কারণ অনুসন্ধান করছে।

অণুজীবতত্ত্বের অনুসন্ধানকারীরা সাধারণত গাছের আঠার মধ্যে জীবাশ্ম হয়ে যাওয়া পতঙ্গ খোঁজেন, যার মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন অণুজীবের বাহক। সেই সমস্ত অণুজীবের গবেষণায় এগিয়ে চলে প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীদের শরীরে লুকোনো রোগের সুলুকসন্ধান। আমরা জুরাসিক পার্কে দেখেছিলাম, ডাইনোসরকে কামড়ানো মশার রক্ত থেকে ডাইনোসরের ডিমের উৎপাদন। সেখানেও কিন্তু মশাটা আটকে ছিল আঠাতেই। কল্পবিজ্ঞানে হলেও এই ব্যাপারে বিশদ গবেষণা এর আগে সে ভাবে হয়নি। তাই বিজ্ঞানীদের এই আবিষ্কার নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিল। এখন বিশ্বজুড়ে এ পর্যন্ত উদ্ধার হওয়া ডাইনোসরের সমস্ত জীবাশ্মকে এই নতুন গবেষণার আলোয় পরীক্ষা করলে আরও যে কত অজানা রহস্যের দরজা খুলে যাবে, তা কল্পনার অতীত। সেই অতিকায় সরীসৃপদের বাতের ব্যথা আর তার প্রতিকারের তৎকালীন প্রাকৃতিক উপায় আজকের যুগে বংশগত বাতের ব্যথা সারানোর কোনও হদিশ দিতে পারে কি না, সেটাই দেখার।

Related posts

ভারতের প্রথম মদের জাদুঘর

News Desk

বিদেশে চাকরি পাওয়ার সহজ উপায়

News Desk

মঙ্গলে অ্যালিয়েন আর মর্ত্যে মনোলিথ, এ যেন আজব ধাঁধা!

News Desk

Leave a Comment