কোবরার মতো বিষধর সাপও বেজির কাছে প্রাণ হারায়। অনেকে সে কারণে বাড়ির পাশে বেজি থাকলে সাপের ভয় কম পান। কারণ যেখানে বেজি থাকে, সেই এলাকায় বিষধর গোখরা সাপও থাকার সাহস পায় না।
অনেকেই মনে করেন, বেজির শরীরে কোবরার বিষ নষ্ট করে দেওয়ার মতো অ্যান্টিবডি আছে। তবে এটি সত্য নয়। আসলে বেজি নিজের বিভিন্ন কৌশলে কোবরার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করে। বেজির শরীরের আকার ও তার বিভিন্ন ধরনের টেকনিকের কারণে যে কোনো ধরনের সাপ তাদের পরাস্ত করতে পারে না। অন্যদিকে কৌশল ব্যবহার করে কোবরার মাথা কামড়ে ধরে মেরে ফেলতে পারে বেজিরা।
বাড়ির আশপাশে বেজি থাকার সুবিধা হলো, ইঁদুর ও সাপের উৎপাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তবে মুরগির বাচ্চা থেকে শুরু করে হাঁসের বাচ্চা এরা খেয়ে ফেলে। বছরে দুই থেকে তিন বার বাচ্চা দেয় বেজি। প্রতিবার দুই থেকে পাঁচটি বাচ্চা হয়। মাটির নিচের গর্তে এসব বাচ্চার দেখভাল করে মা বেজিরা। বাচ্চাদের জন্য এবং নিজেদের খাবারের জন্য বেজি সবসময় সাপকে শত্রু হিসেবে দেখে। এ কারণে সাপ দেখলেই তাড়িয়ে দেওয়া কিংবা মেরে ফেলার জন্য উঠেপড়ে লাগে বেজি।
সহজ কথায় সাপ এবং নেউল বা বেজির শত্রুতা বা সংঘাতের কারণ হলো এই লড়াইয়ের মাধ্যমেই এই দুই প্রাণীর বেঁচে থাকা বা না থাকার উপর নির্ভর করে। বিশেষ করে সাপের জন্য। অবাক হচ্ছেন?
কেন তাঁদের মধ্যে এই লড়াই?
সাপ সাধারণত তাঁর শিকার বস্তু ছাড়া বিরক্ত বা আক্রমণ না করলে কাউকে আক্রমণ করতে আসে না। কিন্তু একটা বেজি একটা সাপকে তাঁর শিকার বস্তু বা খাবার হিসেবে দেখে। তাই বেজি সাপকে আক্রমণ করে। আর সাপ বেজি কে তাঁর জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ভেবে সাপ সেলফ ডিফেন্স হিসেবে বেজিকেও আক্রমণ করে। এই মৃত্যুর খেলায় যে বেঁচে থাকবে সেই বিজয়ী। তবে অজগরের বেলায় বেজি অজগরের খাদ্য হতে পারে। তখন চতুর বেজি আজগর কে আক্রমণ করার সাহস পাবে নাহ।
সাপ তো বিষধর হয়ে থাকে, তাহলে বেজির কিছু কি হবে না? কে জিতে সাধারণত এই লড়াইয়ে?
আশ্চর্য্যজনক ভাবে বেজির তেমন কিছু হবে না এবং বেশিরভাগ সময় বেজির জিতার কথা।
তাহলে বেজির এই অসাধারণ সক্ষমতার পেছনের কারণটা কি?
উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে,
বেজির শরীরে আছে nicotinic acetylcholine receptor (সংক্ষেপে nAChR) যা কিনা বেজিকে সাপের বিষ থেকে রক্ষা করে। বেজির শরীরে এই মডিফাইড রিসিপটর সাপের বিষ α-neurotoxin বেজির শরীরে বা রক্তে জমাট বাঁধতে বাধা দেয়। এখানে Acetylcholine (ACh) হচ্ছে মানুষ সহ যেকোনো প্রাণীর দেহে একধরনের অর্গানিক কেমিক্যাল যেটি কিনা মস্তিষ্ক এবং শরীরে নিউরো-ট্রান্সমিটার হিসেবে কাজ করে। এই নিউরো-ট্রান্সমিটার হল প্রাণীদেহের নিউরো সেল এক ধরনের কেমিক্যাল সিগনাল বা মেসেজ পাঠায় শরীরের আরও বাকি সেল গুলো কে, যেমনঃ নিউরন, মাসল সেল এবং গ্ল্যান্ড সেল কে।
বেজির এই nicotinic acetylcholine রিসিপটর থাকার কারণে সাপের বিষ বেজির শরীরে ঢুঁকে বেজির নার্ভ সেল, মাসল সেল এবং গ্ল্যান্ড সেল তেমন একটা ক্ষতি করতে পারে না। বেজির মতো এই অনন্য বৈশিষ্ট্য মানুষসহ অন্যান্য প্রাণী দেহে না থাকায় কোবরার মতো বিষধর কামড়ে যেকোনো মিনিটে মৃত্যু অবধারিত।
সাপ বেঁজিকে মারতে হলে বেজির শরীরে ভালো ভাবে কামড় দিয়ে সবটুকু বিষ ঢুকাতে হবে। কিন্তু সাপ তা বেশির ভাগ সময়ই ব্যর্থ হয়। প্রথমত হলো বেজি সাহসী, ক্ষিপ্রটা এবং দ্রুতগতি সম্পন্ন প্রাণী সাপ থেকে। আর দ্বিতীয়ত হল বেঁজির ঘন মোটা চামড়ার কারণে সঠিক বিষ প্রয়োগ হয় নাহ আর nicotinic acetylcholine রিসিপটর বৈশিষ্ট্য কারণে সাথে সাথে অল্প বিষে কোন ক্ষতি করে না।
আচ্ছা বেজি জিতলো, এই সাথেও সাপের অল্প বিষ কামড় ও খেলো, তাহলে বেজিটি মারা যেতে পারে?
এইটার কোন সঠিক সরাসরি উত্তর নেই। মারাও যেতে পারে আবার নাও মারা যেতে পারে।
ঐ যে বললাম বেজির ঐ বিশেষ বৈশিষ্ট্যর কারণে তেমন কিছু হয় নাহ বা সাথে সাথে মরে নাহ। সাপকে সফল ভাবে মেরে খাওয়ার পর বেজি দিব্যি তাঁর মতো জীবন-যাপন করছে। তবে তাঁর শরীরে যদি Immune system বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক মতো কাজ না করে তবে সেই অল্প সাপের বিষ বেজির শরীরে ধীরে ধীরে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। কয়েকদিন পর বেঁজিটি মারা যেতে পারে। তবে বেজির বনাম সাপের এই বিষয় গুলো গবেষকরা এখনো গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে নতুন আরও কিছু পরিষ্কার ভাবে জানা যায় কিনা।
তথ্যসূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, কোয়ারা