বাবা ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে একটি কাজে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। আট বছরের ছেলে মো. ওসমান দেওয়ান তাঁর পিছু নেয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে গিয়ে আর বাবাকে খুঁজে পায় না সে। সেখানে পরিচয় হয় মো. ইব্রাহিম নামের সমবয়সী আরেক শিশুর সঙ্গে। এরপর দুজনে মিলে ঢাকার ট্রেনে উঠে পড়ে। ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে বাবাকে খুঁজে না পেলে ইব্রাহিমকে নিয়ে অপর একটি ট্রেনে চড়ে ভুলক্রমে রাজশাহীতে আসে তারা।
রাজশাহী স্টেশনে এসে নিজেদের পরিচয় বলতে পারছিল না শিশু দুটি। এরপর স্থানীয় এক ব্যক্তি জাতীয় জরুরি সেবার নম্বর ৯৯৯–এ ফোন করলে পুলিশ তাদের হেফাজতে নেয়। এরপর রাজশাহী নগরের কাটাখালী থানার পুলিশ পরিচয় উদ্ধার করে আজ রোববার বিকেলে শিশু দুটিকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।
ওসমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার ভাদুঘর গ্রামের পিকআপভ্যান চালক মো. জুবায়ের রহমানের ছেলে। ইব্রাহিম সরাইল উপজেলার কাজীপাড়ার রিকশাচালক মো. দুলালের ছেলে।
ওই দুই শিশুর পরিবার ও পুলিশ জানায়, গত বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে রাজশাহী মহানগরের কাটাখালী উপজেলার হরিয়ান রূপসীডাঙ্গা এলাকার মো. উজ্জ্বর হোসেন নামের এক ব্যক্তি হরিয়ান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে শিশু দুটিকে ঘোরাফেরা করতে দেখেন। ওই সময় তিনি তাদের কাছে পরিচয় জানতে চান। কিন্তু তারা পরিচয় বলতে পারেনি। পরে তিনি বিষয়টি ৯৯৯-এ ফোন করে জানান। এরপর কাটাখালী থানা–পুলিশ সেখানে গিয়ে শিশু দুটিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। পরে তাদের মহানগর পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়।
ওই সেন্টারের উপপরিদর্শক (এসআই) ফাতেমাতুজ জোহুরা শিশু দুটির সঙ্গে বন্ধুসুলভ সম্পর্ক গড়ে তুলে তাদের ঠিকানা জানার চেষ্টা করেন। এরপর শিশু দুটি তাদের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া বলে জানায়। আর তেমন কিছু বলতে না পারলেও ওসমান তার মাদ্রাসার এক শিক্ষকের মুঠোফোন নম্বর বলতে পারে। আর ইব্রাহিম তাদের গ্রামের বাড়ি সরাইল কাজীপাড়ার মাজার এলাকায় বলে জানায়।
ফোন নম্বর পেয়ে পুলিশ ওসমানের শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ওসমানকে চিনলেও ইব্রাহিমকে চেনেন না বলে জানান ওই মাদ্রাসাশিক্ষক। এরপর তাঁর মাধ্যমে ওসমানের মা–বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। একই সঙ্গে ইব্রাহিমের পরিচয় জানতে ওসমানের মা–বাবার মাধ্যমে সরাইল কাজীপাড়া এলাকার মাজার ও মসজিদে মাইকিং করানো হয়। এভাবে ইব্রাহিমের পরিবারের সন্ধান পাওয়া যায়।
রোববার সন্ধ্যায় দুই শিশুর অভিভাবকদের সঙ্গে রাজশাহী রেলস্টেশনে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাওয়ার ট্রেন না পেয়ে স্টেশনে অপেক্ষা করছিলেন। সেখানে ওসমানের বাবা মো. জুবায়ের রহমান, মা রুমা বেগম এবং ইব্রাহিমের বাবা মো. দুলাল ছিলেন।
এ সময় জুবায়ের রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আজ রাজশাহীতে এসে ছেলের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, গত বুধবার তিনি ঢাকার উদ্দেশে বের হওয়ার পর ওসমান তাঁকে অনুসরণ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনে যায়। সেখানে তাঁকে খুঁজে না পাওয়ার পর বসে ছিল সে। একপর্যায়ে ইব্রাহিমের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তারা দুজন একসঙ্গে ট্রেনে উঠে কমলাপুর রেলস্টেশনে নামে। আবার তারা বাড়ি ফেরার জন্য ভুল করে রাজশাহীর ট্রেনে ওঠে।