অন্যান্য

ওপেক প্লাসের সিদ্ধান্ত এবং বৃহৎ শক্তিগুলোর প্রতিক্রিয়া

মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও  দক্ষিণ আমেরিকায় অবস্থিত ১৩টি তেলসমৃদ্ধ দেশ নিয়ে অর্গানাইজেশন অব দ্য  পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ (ওপেক) এবং পরবর্তী সময়ে ২০১৯ সালে এর সঙ্গে তেল উৎপাদনে শীর্ষস্থানীয় রাশিয়া এবং অন্যান্য দেশ যুক্ত হয়ে গঠিত হয় ওপেক প্লাস। তেলের বাজারে ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক’ খ্যাত ওপেকের বর্তমান সদস্য দেশগুলো হলো ইরাক, ইরান, আলজেরিয়া, লিবিয়া, কুয়েত, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, নাইজেরিয়া, ভেনিজুয়েলা, গিনি, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, গ্যাবন ও অ্যাঙ্গোলা। নিয়মিত ও জরুরি বৈঠক করে সারা বিশ্বে তেলের দাম ও উৎপাদন স্তরের নীতিগুলো সমন্বয় করা ওপেকের প্রধান কাজ। কভিড-১৯ পরবর্তী বিশ্ববাজারে যখন জ্বালানি তেলের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী, তখন তেলের উৎপাদন কমানোর মতো একটা বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়ে ওপেক সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

পৃথিবীর মোট তেল উৎপাদনের ৪০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে ওপেকভুক্ত দেশগুলো। পুরো বিশ্বের তেলের মূল্য নিয়ন্ত্রণ তাদেরই হাতে। গত ৫ অক্টোবর সৌদি নেতৃত্বাধীন ওপেক এবং এই জোটের মিত্র দেশ রাশিয়া এক বৈঠকে একমত হয়ে তেল উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এতে বিশ্ববাজারে সৃষ্টি হয়েছে উত্তেজনা এবং বৃহৎ শক্তিগুলোর মধ্যে বিরাজ করছে ব্যাপক ক্ষোভ। পুতিনের নেতৃত্বে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণে বিশ্ব অর্থনীতি যখন ধুঁকছে, ঠিক তখনই ওপেক প্লাসের এই বিশেষ পদক্ষেপে নাখোশ হয়েছে তেলনির্ভর পশ্চিমা বিশ্ব এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সৌদি-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাতে দেরি করেনি মার্কিন মুলুকের বর্তমান প্রশাসক জো বাইডেনের প্রশাসন। অনুরোধ করা সত্ত্বেও এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সৌদি আরবকে এর পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

জ্বালানি তেল উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত ভিয়েনার মিটিং টেবিল থেকে জনসমক্ষে এলে এক ঘোষণায়ই বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।

পশ্চিমা শক্তিগুলো মনে করছে, তেলের উৎপাদন কমানোর কারণে তেলের দাম বাড়ার এই পরিস্থিতিতে আর্থিক ফায়দা হবে তেল উৎপাদনে দ্বিতীয় শীর্ষে অবস্থানকারী রাশিয়ার। এতে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার অর্থায়নের কোনো অভাব হবে না বলে মনে করছে পশ্চিমের দেশগুলো।

এ বছরের নভেম্বর থেকেই জ্বালানি তেলের উৎপাদন প্রতিদিন ২০ লাখ ব্যারেল কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয় ওপেক প্লাস। এতে বিশ্ববাজারে তেলের সরবরাহ কমে যাবে ২ শতাংশ, যার রয়েছে সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব। তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর এমন সিদ্ধান্ত বদলে দিতে পারে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে রাষ্ট্রগুলোর চালচিত্র। সামনের শীত মোকাবেলায় যখন ইউরোপীয় দেশগুলো বেশি জ্বালানি সরবরাহের কথা ভাবছে, তখনই ওপেক প্লাসের এই ঘোষণা তাদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অন্যদিকে মার্কিন মুলুকে নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে এমন একটি অনাকাঙ্ক্ষিত সিদ্ধান্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে রীতিমতো মর্মাহত করেছে এবং তিনি ওপেক প্লাসের নেতা সৌদি আরবকে এর উপযুক্ত জবাব দেওয়ার কথা প্রকাশ করেছেন। শীতল হয়েছে রিয়াদ-ওয়াশিংটন সম্পর্ক।

Related posts

মাগুরা থেকে ট্রলারে খুলনা যাচ্ছেন নেতা-কর্মীরা

News Desk

‘ব্রাজিল ফুটবলারদের ডিএনএতেই তো আক্রমণ’

News Desk

২০ নারী পেলেন জয়ী সম্মাননা

News Desk

Leave a Comment