টুটুল নেসার একজন পেশাদার ফটোগ্রাফার। বিভিন্ন ব্যক্তির পোর্ট্রেট, ফ্যাশন এবং খাবারের ছবি তোলেন তিনি।
এসব ছবি অনেক সময় তিনি তার ফেসবুকে পেইজে আপলোড করেন। মি. নেসার প্রায়ই লক্ষ্য করেন, তার তোলা ছবি অনুমতি না নিয়ে অনেকে ডাউনলোড করে সেটি কোন ক্রেডিট ছাড়াই আপলোড করছে।
“বাংলাদেশে এটা হবেই। এটা আমি মেনে নিয়েছি,” বলছিলেন মি. নেসার।
শুধু তাই নয়, মি. নেসার একবার দেখলেন যে তার একটি ছবি বাংলাদেশের একটি জাতীয় দৈনিকে ছাপা হয়েছে।
ছবিতে মি. নেসারের নাম (ক্রেডিট) তো ব্যবহার করা হয়নি, উল্টো সেই পত্রিকার একজন ফটোগ্রাফারের নামে সে ছবি ছাপানো হয়েছে।
“ওদের ফটোগ্রাফারের নামে ছবি ছাপিয়ে দিল। এতো অবাক আমি জীবনে হইনি,” বলেন মি. নেসার।
শুধু সংবাদপত্রে নয়, ছবি কিংবা ভিডিওর ক্ষেত্রে ফেসবুকে এ ধরণের ঘটনা অহরহ ঘটছে।
একজনের তোলা ছবি বা ভিডিও কোন ক্রেডিট দেয়া ছাড়া আরো অনেকে ডাউনলোড করে নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে আবারো আপলোড করছেন।
মনে হচ্ছে যেন, সেই ভিডিও কিংবা ছবি তারই তোলো। কখনো কখনো এসব ছবি এবং ভিডিও এতোটাই ভাইরাল হয়ে যায় যে মূল ফটোগ্রাফারকে খুঁজেই পাওয়া যায়না।
কপিরাইট কী?
কোন ব্যক্তি যখন তার মেধা প্রয়োগ করে সৃজনশীল কোন কাজ করেন সেটি তার মেধা সম্পদ বা কপিরাইট।
কোন ব্যক্তির লেখা বই, নাটক, কবিতা, সংগীত, চলচ্চিত্র, ফটোগ্রাফ, ভিডিও, কার্টুন, অ্যানিমেশন, পেইন্টিং এসব কিছুই সৃজনশীল কাজ।
যে ব্যক্তি ছবিটি তুলেছেন কিংবা ভিডিও ধারণ করেছেন তিনিই এর মালিক, অন্য কেউ নয়।
কারো তোলা ছবি, ভিডিও কিংবা অন্য যে কোন ধরণের কনটেন্ট যদি অনুমতি ছাড়া যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করা হয় তাহলে সেটির আর্থিক মূল্য কমে যায়।
ধরুন কোন একটি ছবি যদি সোশ্যাল মিডিয়ায় যে কেউ যথেচ্ছভাবে ডাউনলোড করে ব্যবহার করে, তাহলে মূল মালিকের কাছ থেকে সে ছবিটি কেউ টাকা দিয়ে কিনবে না। ফলে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
এভাবে চলতে থাকলে অনেক সৃজনশীল কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন।
এজন্য উন্নত বিশ্বে কপিরাইট বা মেধা সম্পদের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হয়।
ফেসবুক ও ইউটিবও শাস্তি দিতে পারে
ফেসবুক এবং ইউটিউবে ছবি এবং ভিডিও ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীকে অবশ্যই সাবধান হতে হবে।
কোন ব্যক্তি যদি মনে করেন যে তার তোলা ছবি এবং ভিডিও অনুমতি না নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে সেক্ষেতেও তিনি ফেসবুক এবং ইউটিউবে অভিযোগ করতে পারেন।
ফেসবুক বলছে কপিরাইটের বিষয়টিকে তারা বেশ গুরুত্ব দেয়। এর কারণ হচ্ছে, সৃজনশীল কাজে মানুষকে উৎসাহ দেয়া।
ফেসবুক বলছে, কপিরাইটের লঙ্ঘন যাতে না হয় সেজন্য নিজের তোলা ছবি এবং ভিডিও আপলোড করার জন্য তারা পরামর্শ দেয়।
কোন ছবি বা ভিডিওর ক্ষেত্রে যদি কপিরাইট লঙ্ঘন করা হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ফেসবুকের অনলাইন ফর্মে অভিযোগ দাখিল করতে পারেন।
বিষয়টি নিয়ে ফেসবুক নিশ্চিত হলে সংশ্লিষ্ট ছবি এবং ভিডিও সরিয়ে দেয়। যদি কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে বারবার এ ধরণের অভিযোগ আসে তাহলে তার অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
একই শাস্তি দিতে পারে ইউটিউবও।
বাংলাদেশের আইনে শাস্তি কী ?
কপিরাইট বা মেধাস্বত্ব রেজিষ্ট্রার করা জন্য বাংলাদেশে একটি কপিরাইট অফিস আছে। কপিরাইট অফিস একটি আধা-বিচার বিভাগীয় প্রতিষ্ঠান।
কোন ব্যক্তি যদি মনে করেন যে তার তোলা ছবি বা ভিডিও তার অনুমতি না দিয়ে অন্য কেউ ব্যবহার করেছেন তাহলে সেই ব্যক্তি কপিরাইট অফিসে অভিযোগ করতে পারেন।
কপিরাইট পরীক্ষক সৈয়দা নওরিন জাহান নিশা বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আপনি একটা অভিযোগ দাখিল করলে আমরা একটা মতামত দিয়ে দিতে পারবো।”
কপিরাইট নিবন্ধন করা হলে সৃষ্টিশীল কাজের নৈতিক ও আর্থিক অধিকার সংরক্ষণ সহজ হয়।
যদিও আইন অনুযায়ী কপিরাইট নিবন্ধন বাধ্যতামূলক নয়।
কপিরাইট নিয়ে জটিলতা বা দ্বন্দ্ব দেখা দিলে ‘কপিরাইট নিবন্ধন সনদ’ আদালতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
কপিরাইট পরীক্ষক সৈয়দা নওরিন জাহান নিশা বিবিসি বাংলাকে বলেন, কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন করলে সেটি আদালতে দাখিল করা হলে আদালত ধরে নেবে যে তিনিই এর মালিক। তখন বিষয়টি আর অন্য কোনভাবে প্রমাণ করতে হবে না।
আর যদি সার্টিফিকেট না থাকে তাহলে অন্য উপায়ে সেটি আদালতে প্রমাণ করতে হবে।
ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের অনেকে কপিরাইটের বিষয়টি নিয়ে তেমন কিছু জানেন না।
. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
না জেনেই অনেক বিভিন্ন ছবি বা ভিডিও কোন ক্রেডিট দেয়া ছাড়াই ব্যবহার করছেন। এটি কপিরাইটের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
কপিরাইট লঙ্ঘন করা হলে এ সংক্রান্ত মামলা ফৌজদারি বা দেওয়ানী আদালতে করা যায়। এছাড়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কপিরাইট অফিসেও অভিযোগ দাখিল করতে পারেন।
কপিরাইট পরীক্ষক সৈয়দা নওরিন জাহান নিশা বলেন, কপিরাইট বা মেধাস্বত্ব দুইভাবে লঙ্ঘিত হতে পারে। একটি হচ্ছে আর্থিক এবং অপরটি হচ্ছে নৈতিক। দুটিই শাস্তিযোগ্য।