অল্প পুঁজিতে করা যায় এমন ব্যবসার আইডিয়া খুঁজে থাকেন অনেকেই। প্রথম দিকে অল্প পুঁজিতে ব্যবসা করাটাই অধিক বুদ্ধিমানের কাজ। যদিও ব্যবসা করতে গেলে, অবশ্যই ঝুঁকি নিতে হয়। তবে, কম পুঁজির ব্যবসায় ঝুঁকি কম থাকে বলে, সবাই কম পুঁজিতে ব্যবসা করতে চায়।
অল্প পুঁজিতে ব্যবসা সাধারণত ১ কোটি টাকার নিচের ব্যবসাকে বোঝায়। পুঁজির পরিমাণ অল্প হলেও লাভের পরিমাণ কিন্তু অনেক বেশি। অল্প পুঁজির এমন কিছু ব্যবসা আছে যার মাধ্যমে বড় ব্যবসায় রূপান্তর করা সম্ভব। এসব ব্যবসার ঝুঁকির পরিমাণও অনেক কম। আমরা ১০টি ব্যবসায় আইডিয়া শেয়ার করছি, এখন পছন্দ আপনার। জেনে নিতে পারেন, কিভাবে একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়া যায়। নার্সারি শব্দটি শুনলে মনে হতে পারে, এসব আবার ব্যবসা হল নাকি! আসলে পুরানো ধাঁচের নার্সারি না করে একটু স্মার্ট পদ্ধতি করলে খুব সহজে লাভবান হতে পারবেন। বর্তমানে শহরের অধিকাংশ মানুষ ফ্লাটে, বারান্দায়, ছাদে টবে ফুল, ফল কিংবা বনসই জাতীয় গাছ লাগায়।
গ্রাহক চাহিদা আছে এমন গাছ নির্বাচন করে তার নার্সারি করেন। তাহলে বিক্রির পরিমাণ অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া বিলাসবহুল বনসই, অর্কিড কিংবা ফল-ফুলের নার্সারি করের অধিক টাকা আয় করতে পারবেন। গ্রামে থাকলে নার্সারি করা অনেক সহজ। কিন্তু শহরের হলে সহজের পাশাপাশি আয়ের পরিমাণও বেশি থাকবে। শহরের ক্ষেত্রে আপনি যদি আপনার নিজের বাসার ছাদে কিংবা অন্যের বাসার ছাদ ভাড়া নিয়ে কাজ করেন, তাহলে শহরেরই বিক্রি করতে পারবেন দ্রুত। বর্তমানে বিভিন্ন বৃক্ষ মেলা হয়, যেখানে অনেক লাভের বিনিময় গাছ বিক্রি করা সম্ভব।
মোবাইল রিপেয়ারিং (Mobile Repairing) |
আজ মানুষের হাথে হাথে এবং ঘরে ঘরে স্মার্টফোন আছে। আর, এই স্মার্টফোন ফোন গুলি খারাপ নিশ্চই হয়। তাই, আপনি যদি মোবাইল রিপেয়ারিং এর কাজটি শিখে একটি ছোট্ট দোকান দিয়ে বসতে পারেন তাহলে আপনি অনেকটাই কমিয়ে নিতে পারবেন। কারণ, মানুষ মোবাইল কিনবের আর মোবাইল যিহেতু একটা ইলেকট্রনিক তাই ও খারাপ হবেই এবং মানুষ আপনার কাছে আসবেই। মোবাইল রিপেয়ারিং এর কাজ শুরু করতে আপনার বেশি পুঁজির প্রয়োজন হবেনা। আপনার প্রথোম একটি মোবাইল রিপেয়ারিং এর কোর্স করতে হবে যেটা ৩ থেকে ৪ মাসেই হয়ে যাবে। এবং, এই কাজ বা কোর্স করতে আপনার বেশি পয়সার প্রয়োজন নেই। কেবল ৩ থেকে ৫ হাজারে এই কোর্স করা যায়। আপনি যদি চান তাহলে ইউটিউব এ ভিডিও দেখে ফ্রি তে মোবাইল রিপেয়ারিং এর কাজ শিখতে পারবেন।
নিজের রিপেয়ারিং ব্যাবসা জন্য আপনার একটি দোকানের প্রয়োজন হবে। মোনে রাখবেন, মোবাইল রিপেয়ারিং ব্যবসার জন্য আপনার বেশি বোরো দোকানের প্রয়োজন হবেনা। কেবল নিজের কাজ টুকু করার মতো একটি ছোট্ট দোকান নিলেই হবে। তাই, এখানেও আপনার বেশি টাকার প্রয়োজন নেই। এখন, কোর্স করার পর নিজের দোকান নেয়ার পর আপনার টাকার প্রয়োজন হবে যন্ত্র পাতি কেনার জন্য। মোবাইল রিপেয়ারিং এর কাজ করার জন্য আপনার কিছু যন্ত্র পাটির প্রয়োজন যেগুলি ২ থেকে ৩ হাজার টাকার ভেতরে এসেযাবে। তাই, এই মোবাইল রিপেয়ারিং এর ব্যাবসা আপনি ১০ হাজার টাকার ভেতরে আরম্ভ করে মাসে হাজার হাজার টাকা আয় করতে পারবেন। মোবাইল রিপেয়ারিং এর এই ছোট ব্যবসার ধারনা নিয়ে আজ অনেকেই এগিয়ে গেছে।
ফুলের দোকান (Flower Shop) |
আজকাল সেই বিসনেস তাড়াতাড়ি চোখে পড়ে বা তাড়াতাড়ি সাকসেস হয় যেগুলি অনন্য এবং মার্কেটে খুব কম পরিমানে রয়েছে এবং যেগুলির চাহিদা অনেক বেশি। সেরকমই, ফুলের দোকানের ব্যবসা খুব কম লোকেরা করছেন এবং এই ব্যবসার চাহিদাও অনেক রয়েছে। তাই, আপনি অনেক রকমের ফুল গাছ এবং ফুল নিজের দোকানে রেখে সেগুলি বিক্রি করতে পারেন। মানুষে বিয়ে, জন্মদিন বা যেকোনো উপলক্ষতে ফুল বা ফুল দিয়ে সাজানো ফুলের তোড়া দিয়ে অনেক ভালো বসেন। আর তাই, এই রকমের উপহার আজকাল অনেক জনপ্রিয়।
আপনি, অনেক কম টাকা লাগিয়ে একটি ফুলের দোকান খুলে তাতে অনেক রকমের ফুলের তোড়া বানিয়ে সেগুলি বিক্রি করতে পারেন। এই ব্যবসাটা অনেক কম লোকেরা করে আর তাই এর চাহিদা বেশি এবং এতে আপনি কম সময়ে সাকসেস হতে পারবেন। ফুলের দোকান এর ব্যবসা করতে আপনার বেশি টাকার প্রয়োজন হবেনা। আপনার, কেবল একটি ছোট্ট দোকান নিতে হবে এবং অনেক রকমের ফুল কিনতে হবে। বাকিটা আপনার হাতের কাজ এবং বুদ্ধির ওপরে নির্ভর করবে। এক একটি ফুলের তোড়া আপনি বানিয়ে নিজের মন মতো দাম দিয়ে বিক্রি করতে পারবেন। এই ফুলের দোকানের ব্যবসা কম টাকাতে অনেক লাভের ব্যবসা হয়ে দাঁড়াবে।
অনলাইন টিউশনি |
যাদের মেধা ভাল এবং শিক্ষকতার অভ্যাস আছে তারা চাইলে অনলাইনে শিক্ষকতা করতে পারেন। অনলাইনে শিক্ষকতা করার জন্য খুব বেশি পুঁজির প্রয়োজন নেই। একটি ভিডিও ক্যামেরা এবং একটি ভাল মাইক্রোফোন হলেই শুরু করে দেয়া সম্ভব অনলাইন টিউশনি। ফেসবুক পেজ, ফেসবুক গ্রুপ, ইউটিউব সহ অনেক মাধ্যমে আপনি সম্পূর্ণ ফ্রিতে আপনার ভিডিও আপলোড দিয়ে টিউশনি করাতে পারেন। ভিউ বৃদ্ধি পেলে ফেসবুক বা ইউটিউবকোম্পানি আপনাকে টাকা প্রদান করবে। এছাড়া আপনার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেলে, প্রি-পেমেন্ট পদ্ধতিতে অনলাইনে লাইভ ক্লাস নিতে পারেন।
ব্লগিং (Blogging) দ্বারা আনলাইন ব্যবসা |
আপনি যদি ঘরে বোসে অনলাইন ব্যবসা করতে চান তাহলে ব্লগিং বিজনেস আপনার জন্য অনেক ভালো একটি বিজনেস প্রমাণিত হবে। আজ, লক্ষ লক্ষ লোকেরা কেবল একটি ব্লগ বানিয়ে নিজের ঘরে বোসে কাজ কোরে টাকা আয় করছেন। কেবল টাকা আয় করাটাই বোরো কথা না, কিন্তু আপনি ব্লগিং এর মাধ্যমে ঘরে বোসে অনলাইন আয় করতে পারবেন। আর, যদি আপনার ব্লগ লোকেদের ভালো লাগে এবং ব্লগ টি যদি সাকসেস হয়ে যায়, তাহলে আপনি ভাবতেও পারবেননা যে কতটা ইনকাম আপনার হবে।
আসলে, ব্লগ থেকে আয় করাটা অনেক সোজা যদি আপনি তাকে ভালোকোরে করতে পারেন। আপনার একটি ব্লগ বানাতে হয় যেটা আপনি ব্লগার ওয়েবসাইট থেকে ফ্রি তে বানিয়ে নিতে পারবেন। তারপর আপনার নিজের ব্লগে আর্টিকেল লিখতে হবে। আপনি যেকোনো জিনিসের বিষয়ে লিখতে পারবেন আপনার যা ভালো লাগে এবং লোকেদের যা ভালো লাগে।
যখন আপনি ভালো ভালো আর্টিকেল নিজের ব্লগে লিখবেন তখন গুগল এবং ইয়াহুর মতো সার্চ ইঞ্জিন থেকে আপনার ব্লগে ভিসিটর্স বা ট্রাফিক আসবে। আর, যখন একটু ভালো সংখ্যাতে আপনার ব্লগে ট্রাফিক বা ভিসিটর্স আসবে তখন আপনি গুগল এডসেন্স এর দ্বারা নিজের ব্লগে বিজ্ঞাপন লাগিয়ে টাকা আয় করতে পারবেন। আপনি বিশ্বাস করেন, আজ দুনিয়াভরে হাজার হাজার লোকেরা ব্লগ এবং গুগল এডসেন্স এর মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা কমিয়ে নিচ্ছে। এতে আপনার বেশি টাকার কোনো প্রয়োজন নেই। আপনি এই অনলাইন ব্যবসাটি এক টাকা খরচ না করেই আরম্ভ করতে পারবেন।
ইউটিউব (YouTube)চ্যানেল দ্বারা অনলাইন ব্যবসা |
যদি আপনি অনলাইন ব্যবসা করতে চাচ্ছেন তাহলে ইউটিউব চ্যানেল বানিয়ে তাকে একটি ভালো ব্যবসা হিসেবে চলতে পারবেন। ব্লগের মতোই ইউটিউবে চ্যানেল বানিয়ে তাতে ভিডিও আপলোড করে আপনি ঘরে বোসে টাকা আয় করতে পারবেন। এই ব্যবসা এ আপনি কোনো পুঁজি না লাগিয়েই নামতে পারবেন। বাস, আপনার নিজের ট্যালেন্ট এবং ভালো ভালো ভিডিও বানানোর যোগ্যতা থাকতে হবে। ইউটিউব চ্যানেল বানিয়ে তাতে ভিডিও আপলোড করে লোকেরা লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করছে। কিন্তু, মনে রাখবেন এই ব্যবসা থেকে টাকা আয় করার জন্য আপনার কিছু সময় দিতে লাগবে। আপনি যদি অল্প সময় দিতে পারেন, ভালো ভালো ভিডিও বানিয়ে নিজের চ্যানেলে আপলোড করতে পারেন তাহলে আপনার ইনকাম করার সুযোগ হয়ে উঠবে। আর, তার পর থেকে আপনি ভালো টাকা আয় করতে পারবেন।
হস্তশিল্পের ব্যবসা |
বাংলায় রয়েছে হস্তশিল্পের বিপুল সম্ভার। বিকনা আর দরিয়াপুরের ডোকরা, পিঙ্গলার পটচিত্র, নতুনগ্রামের পেঁচা, ঘুর্ণির মাটির পুতুল, মেদিনীপুরের মাদুর, কুচবিহারের শীতলপাটি. চড়িদার ছৌ মুখোশ রয়েছে হাজারো রকমের হস্তশিল্প। দেশ বিদেশের বাজারে চাহিদাও রয়েছে যথেষ্ট। নিজেদের দক্ষতা আর সৃজনীকে কাজে লাগিয়ে নানা নতুন ধরণের পণ্যও তৈরি করছেন এই সব গ্রামীণ শিল্পীরা। এই সমস্ত হস্তশিল্প নিয়ে অনলাইন বিজনেস করে নিয়মিত লাভ করা সম্ভব।
অল্পটাকায় ব্যবসা শুরু করতে হলে নানা ধরণের হস্তশিল্পের সামগ্রী সংগ্রহ করুন শিল্পীদের থেকে। আপনি নিজের মতো ডিজাইন দিয়েও জিনিস বানিয়ে নিতে পারেন।
ফাস্ট ফুড ট্রাক / ষ্টল |
আজকাল লোকেরা বাইরে টেস্টি বা স্বাদের খাবার (ফাস্ট ফুড) খেয়ে অনেক ভালো বাসে। তাই, এই ফাস্ট ফুড এর ব্যবসা আজকাল অনেকটাই লাভজনক এবং কম টাকা দিয়ে আপনি আরম্ভ করতে পারবেন। নিজের ষ্টল বা দোকানে আপনি অনেক রকমের মোমো, চাওমিনে, চপ, পাও ভাজি, ধোসা, ঘুগনি, কফি আদি খাবার লোকেদের খায়িয়ে টাকা আয় করতে পারবেন। এই ব্যবসা আপনি অনেক কম টাকা দিয়ে শুরু করতে পারবেন। আপনার খাবার বানানোর কিছু জিনিস লাগবে এবং একটি কারিগর যে খাবার বানাবে। তারপর একটি দোকান বা ট্রাক (খাবারের গাড়ি) যেটা দিয়ে আপনি জাগায় জাগায় গিয়ে লোকেদের খাবার খাওয়াতে পারবেন। মনে রাখবেন, আপনি যদি এই ফাস্ট ফুড খাবার ব্যবসা একটি দোকান নিয়ে করেন তাহলে কেবল একটি জাগার থেকে লোকেরা (customer) আসবেন। এবং, যদি আপনি এই ব্যবসা একটি ছোট্ট ট্রাক (ট্রাক) এ শুরু করেন তাহলে আপনি অনেক জায়গায় গিয়ে গিয়ে নিজের খাবার বিক্রি করতে পারবেন। এতে লোকেরা আপনাকে চিনবে জানবে এবং আপনার বেশি বিক্রি হবে।
পুরনো জিনিসের দোকান (Antique shop) |
পুরনো জিনিসের দোকান দিলে খুব কম পুঁজিতে বেশি লাভবান হওয়া সম্ভব। প্রথম দিকে আপনি পুরানো বই, পণ্য বিক্রি করতে পারেন। পুঁজি বাড়লে দুর্লভ পণ্য রাখতে পারেন, এসব পণ্যের চাহিদা অনেক। চাই
লে অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিভিন্ন মানুষের নিকট থেকে সংগ্রহ করতে পারেন। আবার চাইলে অনলাইনেও আপনার পুরনো জিনিস বিক্রি করতে পারেন।
দর্জি (Tailor) |
গতানুগতিক ভাবে নয় বরং আপনি স্মার্ট পদ্ধতিতে দর্জি ব্যবসা করতে পারেন। এটা অনলাইন এবং হোম ডেলিভারি ভিত্তিক হতে পারেন। মানুষ অনলাইনে অর্ডার করবে আপনি মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাপ ও কাপড় নিয়ে আসবেন। এছাড়া নতুন নতুন আকর্ষণীয় ডিজাইনের কাপড় তৈরি করে অনলাইনে বিক্রি করতে পারেন। দর্জির কাজ করতে খুব বেশি পুঁজির প্রয়োজন নেই। আর দর্জির চাহিদা সারা বছরই থাকে এবং বিভিন্ন উৎসবে এর চাহিদা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
বড় দোকানে স্থানীয় জিনিস সরবরাহ |
এই ছিল আজকে অল্প পুঁজিতে ১০টি লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া। চেষ্টা করেছি কম পুঁজিতে, সহজ ব্যবসাগুলো তুলে ধরার। এখন আপনার কাজ, আপনি যে কাজে পারদর্শী সেই ব্যবসাটি এখনই শুরু করে দেয়া।