ইরানি চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগের সূচনা গত শতাব্দীর শেষ দিকে আব্বাস কিয়ারোস্তামির হাত ধরে। ইরানের ছায়াছবিকে যে শিখরে তিনি নিয়ে গেছেন, ২০১৬ সালে তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এর সমাপ্তি সূচিত হয়নি, বরং নতুন প্রতিভার অব্যাহত আবির্ভাব প্রমাণ করছে যে ছায়াছবির জগতে ইরান হচ্ছে দীর্ঘ সময় ধরে সৃজনশীলতার ছাপ রেখে যাওয়া একটি দেশ। বিশ্বের প্রধান কয়েকটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে গত দুই দশক ধরে ইরানি ছবির সরব উপস্থিতিও সেই প্রমাণ আমাদের সামনে তুলে ধরে।
সদ্য শেষ হওয়া ৩৫তম টোকিও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ইরানি পরিচালকদের নির্মিত ছবির দুটি প্রধান পুরস্কার লাভ সেই ধারাবাহিকতাকেই যেন আরও একবার সামনে নিয়ে এসেছে। করোনাভাইরাসের বিস্তার গত দুটি চলচ্চিত্র উৎসবের সার্বিক আয়োজনকে বাধাগ্রস্ত করলেও টোকিওর এবারের উৎসব সব দিক থেকেই সেই দুরবস্থা অনেকটা কাটিয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিয়েছে। এবারের উৎসবের জন্য ছবি জমা পড়েছিল মোট ১ হাজার ৬৯৫টি এবং এসব ছবি এসেছে বিশ্বের ১০৭টি দেশ ও ভূখণ্ড থেকে। এ ছাড়া এবারের উৎসবে দর্শক উপস্থিতিও ছিল গত দুই উৎসবের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। ৩৫তম টোকিও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে যে দুটি বিভাগে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়, সেই বিভাগ দুটি হচ্ছে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা এবং এশিয়ার ভবিষ্যৎ।
আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা অবশ্যই হচ্ছে যেন কোনো চলচ্চিত্র উৎসবের মূল আকর্ষণ। চলতি মাসের ২ তারিখে শেষ হওয়া টোকিও চলচ্চিত্র উৎসবের জন্য আসা সব কটি ছবির মধ্য থেকে আয়োজকদের বেছে নেওয়া সেরা ১৫টি ছবি এবারেও মূল প্রতিযোগিতায় জায়গা করে নিয়েছিল এবং চলচ্চিত্রশিল্পের আন্তর্জাতিক পর্যায়ের নেতৃস্থানীয় পাঁচজন ব্যক্তিত্বকে নিয়ে গঠিত জুরিবোর্ড সেই ১৫টি ছবির মধ্যে থেকে শ্রেষ্ঠ ছবির পুরস্কার ছাড়াও বিশেষ জুরি পুরস্কার ও শ্রেষ্ঠ শৈল্পিক অবদান পুরস্কারের বাইরে সেরা পরিচালক, সেরা অভিনেতা ও সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার বিজয়ীদের বেছে নিয়েছেন। ফলে এই বিভাগ সার্বিক অর্থে হচ্ছে উৎসবের দর্পণ, যেখানে প্রতিফলিত হয় এর সাফল্য–ব্যর্থতার দিকগুলো।
অন্যদিকে এশিয়ার ভবিষ্যৎ বিভাগটি চালু হয়েছে ২০১৩ সালে জাপান ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায়। এশিয়ার অপেক্ষাকৃত তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের উৎসাহিত ও সাহায্য করা হচ্ছে এর অন্যতম প্রধান একটি উদ্দেশ্য। জাপানসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশের চিত্রনির্মাতারা এখানে প্রতিযোগিতার জন্য তাঁদের ছবি জমা দিতে পারেন। নবীনের যে সংজ্ঞা উৎসবের আয়োজকেরা নির্ধারণ করেছেন, তা বয়সভিত্তিক নয়, বরং ছবি নির্মাণে জড়িত হওয়ার আলোকে সেটা নির্ধারিত। এখন পর্যন্ত যাঁরা সর্বোচ্চ তিনটি ছবি বানিয়েছেন, সেই পরিচালকদেরই কেবল এই বিভাগে অন্তর্ভুক্ত রাখা হয়। উৎসবের জন্য জমা পড়া ছবিগুলোর মধ্যে থেকে সেই শর্ত পূরণ করা এশিয়ার বিভিন্ন দেশের ১০টি ছবিকে এই বিভাগের প্রতিযোগিতার জন্য বেছে নেওয়া হয় এবং তিন সদস্যের বিচারকমণ্ডলী সেই ১০ ছবির একটিকে পুরস্কৃত করার জন্য বেছে নেন।