সময়টা ২০১২ সাল। চীনের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে সি চিন পিং ক্ষমতা গ্রহণ করেন। বিশ্লেষকদের অনেকেই তখন ধারণা করেছিলেন, চীনের ইতিহাসে কমিউনিস্ট পার্টির সবচেয়ে উদার নেতা হতে যাচ্ছেন সি চিন পিং। তাঁর পারিবারিক ইতিহাস ও নেতা হিসেবে তৃণমূল থেকে উঠে আসার কারণে বিশ্লেষকেরা এমনটা মনে করেছিলেন।
এক দশক পরে এসে দেখা যাচ্ছে, বিশ্লেষকদের ওই মনোভাবের অনেক কিছুই ভুল প্রমাণিত হয়েছে। সি চিন পিং নিজ দেশের একজন আইকনিক নেতায় পরিণত হয়েছেন। বিশ্লেষকেরা এখন বলছেন, সি চিন পিং তাঁর লক্ষ্য অর্জনে অবিচল, ভিন্নমতের প্রতি অসহিষ্ণু এবং এমনকি আধুনিক চীনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার অভিলাষ রয়েছে তাঁর।
গত ১৬ অক্টোবর চীনের ক্ষমতাসীন দল চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) সপ্তাহব্যাপী জাতীয় কংগ্রেস শুরু হয়। এই কংগ্রেস ঘিরে কৌতূহলের অন্যতম জায়গা ছিল, দলের সাধারণ সম্পাদক পদে সি চিন পিংয়ের মেয়াদ বাড়ছে কি না। সব জল্পনা শেষ করে আজ রোববার সিকে দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আরও পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি। ফলে আগামী মেয়াদেও চীনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন তিনি। সত্তরের দশকে মাও সে–তুং যেমন চীনে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন, তাঁর পর প্রথম কোনো নেতা হিসেবে চীনের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা হিসেবে নিজের অবস্থান আরও পোক্ত করলেন সি চিন পিং। আগামী বছরের মার্চে দেশটির সরকারের বার্ষিক আইনসভার অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে সিকে আনুষ্ঠানিকভাবে চীনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করা হবে।
সি চিন পিংয়ের জীবন নিয়ে বই লিখেছেন আলফ্রেড এল চ্যান। তিনি এএফপিকে বলেন, ‘সি চিন পিং ক্ষমতার জন্য লড়ছেন, এমন একটি ধারণা মানুষের মধ্যে রয়েছে। তবে আমি এর বিরোধিতা করি। আমার মতে, তিনি তাঁর লক্ষ্য অর্জনে ক্ষমতাকে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করছেন।’
সি চিন পিংয়ের আরেকজন জীবনীকার আদ্রিয়ান গেইজেস বলেন, ‘আমি মনে করি না যে ব্যক্তিগত সমৃদ্ধির আশায় সি চিন পিং কিছু করছেন। যদিও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের অনুসন্ধানে তাঁর পরিবারের সদস্যদের ব্যাপক সম্পদের মালিক হওয়ার তথ্য বেরিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সম্পদের মালিক হওয়া সি চিন পিংয়ের আগ্রহের বিষয় নয়। চীন নিয়ে তাঁর একটি লক্ষ্য আছে। তিনি চীনকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চান।’