চীনে ‘বিরল ও নাটকীয়’ এক বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভ করেছেন একজন ব্যক্তি। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের কর্তৃত্ববাদী শাসন ও তাঁর সরকারের নেওয়া কথিত জিরো কোভিড নীতির বিরুদ্ধে বেইজিংয়ে এ বিক্ষোভ করেন তিনি। অনলাইন মাধ্যমগুলোয় ‘রহস্যময়’ সেই বিক্ষোভকারীর পরিচয় হন্যে হয়ে খুঁজছেন অনেকেই।
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ২০তম কংগ্রেসের প্রাক্কালে গত বৃহস্পতিবার বিরল এই বিক্ষোভ করে অনেকের প্রশংসা কুড়াচ্ছেন ওই ব্যক্তি। কাল রোববার এই কংগ্রেস শুরু হচ্ছে। কংগ্রেসে ৬৯ বছর বয়সী সি চিন পিং তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে পারেন। ওই বিক্ষোভকারী সি চিন পিংকে অপসারণের দাবি তুলেছেন।
বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, বেইজিংয়ের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় হাইদিয়ান এলাকার একটি সেতুতে দুটি বড় ব্যানার ঝুলছে। একটি ব্যানারে লেখা ছিল: ‘কোনো কোভিড পরীক্ষা নয়, আমরা খেতে চাই। কোনো বিধিনিষেধ নয়, আমরা স্বাধীনতা চাই।
কোনো মিথ্যা নয়, আমরা মর্যাদা চাই। কোনো সাংস্কৃতিক বিপ্লব নয়, আমরা সংস্কার চাই। কোনো নেতা নয়, আমরা ভোট চাই। দাস না হয়ে আমরা নাগরিক হতে চাই।’
আরেকটি ব্যানারে অধিবাসীদের স্কুল ও কর্মক্ষেত্রে ধর্মঘট শুরুর আহ্বান জানানো হয়। চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে একজন স্বৈরশাসক ও জাতীয় বিশ্বাসঘাতক আখ্যা দিয়ে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে বলা হয়।
ভিডিওতে দেখা যায়, সেতু থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উড়ছে। গাড়ির চাকায় আগুন দেওয়ায় এক ব্যক্তি লাউডস্পিকারে প্রতিবাদী স্লোগান দিচ্ছেন। ঠিক কী কারণে সেতু থেকে ধোঁয়া উড়ছিল, তা জানা যায়নি। তবে ঘটনাস্থলে পুলিশের উপস্থিতি দেখা গেছে। সি ও তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে একজন ব্যক্তির এমন বিক্ষোভ নিয়ে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যমগুলো নীরব। কিন্তু কমলা রঙের পোশাক ও হলুদ টুপি পরে প্রতিবাদ জানানো সেই ব্যক্তির ছবি দ্রুত অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। সাহস দেখিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করায় অনেকে ওই ব্যক্তিকে ‘নায়ক’ বলে তাঁর প্রশংসা করছেন। তবে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে দ্রুত সেই প্রতিবাদ থামানো হয়।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী বিক্ষোভে জড়িত থাকায় এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সেই বিক্ষোভের ছবিতে দেখা যাচ্ছে পুলিশ কর্মকর্তারা ওই ব্যক্তিকে ঘিরে রেখেছেন। বিষয়টি নিয়ে জানতে বিবিসির পক্ষ থেকে স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগও করা হয়। কিন্তু পুলিশের কাছ থেকে সাড়া মেলেনি।
চীনের উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ হেইলংজিয়াংয়ের একটি গ্রামের একজন গবেষক ও পদার্থবিদকে সন্দেহভাজন সেই বিক্ষোভকারী ব্যক্তি হিসেবে ধরে নিয়ে অনলাইন মাধ্যমে তাঁর অবস্থান জানার চেষ্টা চলছে। ওই গ্রামের স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে বিবিসি নিশ্চিত হয়েছে, এই নামের একজন ব্যক্তি সেখানে থাকতেন। এর আগে ওই গবেষক গবেষণাবিষয়ক জনপ্রিয় ওয়েবসাইট রিসার্চ গেটে একটি ‘ইশতেহার’ পোস্ট করেছিলেন। পরে অবশ্য কথিত সেই ইশতেহার সরিয়ে নেওয়া হয়। তবে ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে নেওয়ার আগে অনেকে তার কপি সংরক্ষণ করে রাখেন। সেই ইশতেহারের এক কপি তারা পেয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।