অন্যান্য

জগন্নাথ হল ট্র্যাজেডি ও মানবিক সহায়তার দৃষ্টান্ত

কোনো মানুষই মৃত্যুকে স্বাভাবিকভাবে মেনে দিতে পারে না। আবার তা যদি হয় অকালে ঝরে পড়া সম্ভাবনাময় মেধাবী তরুণ-যুবাদের। এ মৃত্যু আরো বেদনার, আরো কষ্টের। হৃদয় ভেঙে যাওয়ার মতো।

১৯৮৫ সালের ১৫ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের ঘটনা বিশ্ব ইতিহাসে এমন এক হৃদয়বিদারক ট্র্যাজেডির দিন। অত্যন্ত জনপ্রিয় নাটক ‘শুকতারা’ দেখার জন্য তৎকালীন পরিষদ ভবনের টিভি কক্ষে উন্মুখ হয়ে কয়েক শ ছাত্র ও কয়েকজন অতিথি এসে উপস্থিত হন। সবার দৃষ্টি নিবদ্ধ টিভির পর্দায়। আকাশ থেকে অঝোর ধারায় বৃষ্টি ঝরছে ও সেই সঙ্গে প্রচণ্ড বেগে দমকা হাওয়া বইছে। রাত ৯টার দিকে হঠাৎ টিভি কক্ষের ছাদ ধসে পড়ে। অনেক মানুষের কান্না আর হাহাকারে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। চারদিকে ভীষণ অন্ধকার। এই অন্ধকারের ভেতর আহতদের চিৎকারে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার শুনে পাশের সবাই শঙ্কিত হয়ে ওঠে। বৃষ্টির পানির সঙ্গে রক্ত মিশে যায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ৩৪ জন তরতাজা যুবকের। পরে আরো ছয়জনসহ মোট ৪০ জনের করুণ মৃত্যু হয়। 

অত্যন্ত হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনার খবর মুহূর্তের মধ্যেই ঢাকা শহরের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। এ খবর রেডিও ও টেলিভিশনের ঘোষণার মাধ্যমে দেশের সর্বত্র আলোচিত হতে থাকে। হলে অবস্থানরত ছাত্র-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যে অবস্থায় ছিলেন, সেই অবস্থায় উদ্ধার তৎপরতায় শামিল হন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, শিক্ষক, অন্যান্য হলের শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শহরের সাধারণ জনতা জাতি-বর্ণ-ধর্ম-গোষ্ঠী-সম্প্রদায়-নির্বিশেষে সাহায্যের জন্য আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসেন। ঘটনাস্থলে এসে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলেও মনে সাহস সঞ্চার করে উদ্ধারকাজে আগুয়ান হয়ে ওঠেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ শহরকেন্দ্রিক মানুষ সর্বশক্তি দিয়ে উদ্ধারকাজে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে। অ্যাম্বুল্যান্স, রিকশা, ভ্যান, ট্যাক্সিসহ সামনে যা পাওয়া যায়, তাতে করেই ছাত্রদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যায়। ঢাকাসহ আশপাশের লোকজন ছুটে আসতে থাকে জগন্নাথ হলের দিকে, যেন শোক মিছিলের হাহাকারের ক্রন্দনরোল সর্বত্র ভেসে যাচ্ছে।

Related posts

২০ নারী পেলেন জয়ী সম্মাননা

News Desk

আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ দল ফাঁস…

News Desk

কিশোরগঞ্জে ৭০০ গ্রাম পানির নিচে, চরম দুর্ভোগে মানুষ

News Desk

Leave a Comment