জ্বালানি খাতে দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে বাংলাদেশ ও ব্রুনেই। বাংলাদেশের জ্বালানির ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে একটি স্থিতিশীল ও আঞ্চলিক জ্বালানি রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে ব্রুনেই তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ও পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য রপ্তানির বিষয়ে রাজি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ব্রুনেইয়ের সুলতান হাজি হাসানাল বলকিয়াহ মুইজ্জাদ্দিন ওয়াদ্দৌলাহর আনুষ্ঠানিক বৈঠকে অন্যান্য খাতের পাশাপাশি জ্বালানি খাতে সহযোগিতার বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে।
গতকাল রোববার দুই দেশের শীর্ষ বৈঠক শেষে প্রচারিত যৌথ ঘোষণায় এ কথা বলা হয়েছে। এদিন দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দুই শীর্ষ নেতার বৈঠক শেষে একটি চুক্তি ও তিনটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এগুলো হচ্ছে দুই দেশের মধ্যে আকাশপথে সরাসরি উড়োজাহাজ চলাচলের জন্য চুক্তি এবং বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ, ব্রুনেই থেকে বাংলাদেশে এলএনজি এবং পেট্রোলিয়াম পণ্য সরবরাহ ও সমুদ্রগামী নাবিকদের প্রশিক্ষণ সনদের স্বীকৃতি বিষয়ে সমঝোতা স্মারক।
যৌথ ঘোষণায় বলা হয়েছে, দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদারের ক্ষেত্রে দুই দেশ বাণিজ্য ও বিনিয়োগকে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এই মুহূর্তে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ সম্ভাবনার তুলনায় অনেক কম। তাই দুই দেশ বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়ানোর বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। দুই পক্ষ হালাল বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদারে রাজি হয়েছে।
বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলের সুবিধা কাজে লাগিয়ে ব্রুনেইকে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। এই প্রস্তাব বিবেচনায় নিয়ে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট খাতে বিনিয়োগ সহযোগিতা নিয়ে আলোচনায় আগ্রহ প্রকাশ করেছে ব্রুনেই। অন্যদিকে ব্রুনেই সে দেশের অর্থনীতি বহুমুখীকরণ কার্যক্রমের সুবিধা কাজে লাগিয়ে খাদ্য, কৃষি ও মৎস্যশিল্পে বিনিয়োগে বাংলাদেশকে প্রস্তাব দিয়েছে।
ব্রুনেইয়ে বর্তমানে বাংলাদেশের ২০–২৫ হাজার কর্মী কাজ করছেন। মূলত সে দেশে অবকাঠামো নির্মাণকাজে কর্মীরা যুক্ত রয়েছেন। ব্রুনেই তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশের প্রবাসী কর্মীদের ভূমিকার প্রশংসা করেছে। দক্ষ কর্মী, পেশাজীবীসহ ব্রুনেইয়ের যেসব খাতে প্রয়োজন, সেখানে বাংলাদেশ থেকে আরও কর্মী নিয়োগ নিয়ে আলোচনার বিষয়ে দুই দেশ রাজি হয়েছে। বাংলাদেশ ও ব্রুনেই স্বচ্ছ, নিয়মতান্ত্রিক ও নৈতিক উপায়ে কর্মী নিয়োগপ্রক্রিয়া পরিচালনায় সম্মত হয়েছে।
স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান সামর্থ্য এবং আধুনিক ও উন্নত স্বাস্থ্য অবকাঠামোতে ব্রুনেইয়ের সক্ষমতার বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নিয়ে দুই দেশ স্বাস্থ্য খাতে সমঝোতা স্মারক সইয়ের বিষয়ে আলোচনা করেছে। এই সমঝোতা স্মারকটি হবে স্বাস্থ্য খাতের পেশাজীবী, বিশেষায়িত সেবা খাত ও ওষুধশিল্পে উৎপাদনে জড়িত কর্মীদের প্রশিক্ষণ, নিয়োগের জন্য পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে।
শীর্ষ বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ব্রুনেইয়ের সুলতানের সফর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।
ব্রুনেইয়ের সুলতানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বিস্তৃত আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে ব্রুনেইয়ের ব্যবসা ও বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। এ লক্ষ্যে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা একসঙ্গে কাজ করবেন। এ ছাড়া একটি যৌথ পরামর্শ কমিশন গঠন করে সমস্যা থাকলে তা সমাধানের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।