ঘরের উষ্ণতা কমানোর জন্য ব্যবহার করা হয় শীতাতপনিয়ন্ত্রণ (এসি) যন্ত্র। আবার এই যন্ত্রের (আউটডোর ইউনিট) কারণেই ঘরের বাইরের তাপমাত্রা বাড়ে। ঢাকায় প্রতিবছর ২০ শতাংশ হারে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। এতে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি ঢাকা শহরের তাপমাত্রাও দিন দিন বাড়ছে।
গতকাল শুক্রবার সকালে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) আয়োজিত ভার্চ্যুয়াল নগর সংলাপে এ মত দেওয়া হয়। ‘ভবনে এসি ব্যবহারজনিত বিদ্যুৎ–চাহিদা ও নগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি: টেকসই ভবন ও শহর বিনির্মাণে করণীয়’ শীর্ষক সংলাপে বক্তারা বলেন, দেশের বর্তমান বাস্তবতায় শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব নয়। কিন্তু যন্ত্রগুলোর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বিদ্যুতের চাহিদা কমানো সম্ভব; আর ভবনে প্রাকৃতিক আলো-বাতাস ঢোকার ব্যবস্থা রাখতে পারলে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের চাহিদাও কমানো সম্ভব।
গবেষণায় বাংলাদেশে গত ছয় বছরে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বিক্রির তথ্য বিশ্লেষণ করে বলা হয়েছে, সারা দেশে আনুমানিক ২৮ লাখ ইউনিট শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। এই যন্ত্রগুলো গড়ে ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় দৈনিক ৮ ঘণ্টা করে চালালে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হয়, ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় চালালে অন্তত ২৫ শতাংশ বিদ্যুতের ব্যবহার কমানো সম্ভব। এ ছাড়া এই যন্ত্রগুলো নগরের উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী বলে উল্লেখ করা হয়।
সংলাপে আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, কার্যকর নগর-পরিকল্পনা, ইমারত বিধিমালা এবং এসি ব্যবহারের সঠিক নীতিমালা থাকলে এসির ব্যবহার কমানোর পাশাপাশি বিদ্যুতের ওপর চাপ বহুলাংশে কমানো যেত। শুধু ঢাকা শহরেই প্রতিবছর এসির ব্যবহার ২০ শতাংশ হারে বাড়ছে। তিনি বলেন, সঠিক পরিকল্পনা ও নীতিমালা প্রণয়ন করে এসির ব্যবহার সীমিত করার মাধ্যমে সারা দেশের বিদ্যুতের চাহিদা বহুলাংশে কমানো সম্ভব। এসির আউটডোর ইউনিটের কারণে পরিবেশের তাপমাত্রা বাড়ে উল্লেখ করে আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, যন্ত্রটির ১০ মিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে তাপমাত্রা স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে ৫ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি হয়। লাখ লাখ ইউনিট এসি ব্যবহারের কারণে সামগ্রিকভাবে নগরের তাপমাত্রা বাড়ে।
এসির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার মনস্তাত্ত্বিক কারণগুলো অনুসন্ধান করে এর ব্যবহার কমানোর ব্যাপারে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ প্রয়োজন বলে সংলাপে মত দেন আইপিডির উপদেষ্টা ও পরিকল্পনাবিদ আকতার মাহমুদ। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, সারা বিশ্বেই এসি ব্যবহারের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে। পাশাপাশি নগরে ভবনের আকার-আয়তন বাড়ার কারণে তাপমাত্রা বাড়ছে, যার রাশ টেনে ধরা প্রয়োজন।