পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির অভ্যন্তরে ক্ষোভ-বিক্ষোভের পরিস্থিতি যে চরম আকার নিয়েছে তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি সাংসদ দিলীপ ঘোষ। এবিষয়ে তার সাফ কথা, ‘দলের মধ্যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।’
পশ্চিমবঙ্গে একের পর এক ভোটে বিজেপির এই হতাশজনক ফলের কারণ নিয়ে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে আমরা পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এগিয়েছি। নির্বাচনে ভালো ফল হয়েছে। এজন্য আমাদের নেতারা পরিশ্রম করেছেন। আত্মত্যাগ করেছেন। এসব দেখে সাধারণ মানুষ আমাদের প্রধান বিরোধী দল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু গত বিধানসভা ভোটের পর থেকে রাজনৈতিক সন্ত্রাসের কারণে আমাদের ৬০ জন কর্মী প্রাণ দিয়েছেন। হাজার হাজার কর্মীর ঘর-বাড়ি ভেঙে লুট করা হয়েছে। ঘরছাড়া হয়ে আছেন এখনও অনেকেই। এর ফলে একটা ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। নেতারা বাড়িতে বসে গেছেন, বাইরে বের হচ্ছেন না। এরই মধ্যে আমাদের দলের সাংগঠনিক পরিবর্তন চলছে। রাজ্য সভাপতির পরিবর্তন হয়েছে। যতক্ষণ এটা শেষ হচ্ছে না। সবাই মাঠে নামতে পারছেন না।’
দিলীপ ঘোষ আরও বলেন, ‘যেহেতু দলের সর্বস্তরের কমিটি গঠন এখনও চলছে। তাই নেতা-কর্মীদের মধ্যে একটা সংশয় তৈরি হচ্ছে। আমি দলের কোথায় থাকব সেটা আগে জানি, তারপর নামব–এরকম অনেকই ভাবছেন। রাজনীতিতে এটা হয়। আমি দলের নীতি নির্ধারকদের বলেছিলাম, এই প্রক্রিয়া তাড়াতাড়ি শেষ করুন। এত লম্বা প্রক্রিয়া চললে, কাজ করব কখন আমরা। মাঝখানে আবার বিভিন্ন ভোট ঢুকে পড়েছে। তার ফলে শীর্ষনেতারা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ফলে যারা এতদিন কাজ করছিলেন, তারা হতাশায় ভুগছেন। দলের ভোটের ফল ভালো হচ্ছে না। যে গতিতে আমরা এগোচ্ছিলাম, তা থমকে গেছে। মনে হচ্ছে, আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি।’
দলের নির্বাহী নেতাদের মনে চাপ বাড়ছে বলে দাবি করে তিনি বলেন, ‘দলীয় নেতা-কর্মীরা ভাবছেন, আমরা যেভাবে এতদিন দলকে নিয়ে লড়লাম, যা সাধারণ মানুষ স্বীকৃতি দিল, সেই জায়গাটা হারিয়ে যাচ্ছে। পেছন থেকে অন্য একটি দলকে এগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আর এই কারণে অনেকে হতাশায় মন্তব্য করছেন। এসবের আবার পালটা মন্তব্যও হচ্ছে। আর তা সংবাদমাধ্যম, সোশাল মিডিয়ায় চলে আসছে। এজন্য দলে একটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দলের নেতারা কাজ চান। তারা কেন ঘর থেকে বের হচ্ছেন না, তা পর্যালোচনা করে যারা দায়িত্বে আছেন তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সবাইকে কাজে লাগতে হবে। যারা এতদিন লড়াই করে দলকে জিতিয়েছেন তারা জানেন কী করে লড়তে হয়।’
এই বিষয়ে দিলীপ ঘোষ আরও বলেন, ‘অনেক নতুন মানুষ দলে এসেছেন, তারা এখনও পরীক্ষিত নন। আর এজন্যই পুরানোদের মনে হচ্ছে আমরা দলকে দাঁড় করালাম, অন্য কেউ তা নিয়ে যাচ্ছে। এমনকী টিকিটও বাইরের লোকরা নিয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে হতাশা তৈরি হচ্ছে, তাই মন্তব্য করছেন। এটা অনেকে বেসুরো বলছেন। এসব কিছুই নয়। এরা দলে কাজ করবেন। জায়গাটা করে দিতে হবে। তাড়াতাড়ি করতে হবে। আমরা মনে হয়, তাহলে সেই কর্মীরাই দলকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।’