‘রাতের খাবার সেরে ঘুমের প্রস্তুতি চলছিল। সময় তখন রাত পৌনে ১২টা। এমন সময় চিৎকার, আগুন আগুন! স্থানীয়দের কাছে থাকা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অফিসের নম্বরে ফোন ঢুকছিল না। বাধ্য হয়ে পুলিশে খবর দিলাম। পরে পুলিশ সদস্যরা দ্রুত এসে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আগুন নেভাতে শুরু করলেন। প্রথম ফায়ার ফাইটার তারা (পুলিশ)। ফায়ার সার্ভিসেও খবর দিলেন তারাই। তিনটি পরিবারের সব পুড়ে ছাই হলেও রক্ষা পেলো ঘনবসতির পুরো এলাকা।’
এভাবেই ঘটনার ভয়াবহতা ও আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার বর্ণনা দিচ্ছিলেন স্থানীয় গৃহবধূ আশা। শুক্রবার (২৮ জুন) রাতে কুড়িগ্রাম শহরের পুরাতন হাসপাতালপাড়ার ডায়াবেটিক হাসপাতাল মোড়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ অফিসের পেছনের আবাসিক এলাকায় অগ্নিকাণ্ড ঘটে। বস্তির মতো ঘনবসতিপূর্ণ ওই এলাকায় অগ্নিকাণ্ডে তিনটি পরিবারের সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। প্রায় দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে পুলিশ, এলাকাবাসী, ফায়ার সার্ভিস ও রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবকদের ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
মধ্যরাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, শহরের পুরাতন হাসপাতালপাড়ার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় স্বাচ্ছন্দ্যে প্রবেশ করার সুবিধা নেই। সংকীর্ণ গলির ভেতর কিছুক্ষণ পর পর পুলিশ সদস্যদের প্রহরা। কুড়িগ্রাম সদর ফাঁড়ি পুলিশের সহকারী শহর উপপরিদর্শক (এটিএসআই) দুলাল হোসেনসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। কয়েকজনের পোশাক পানিতে ভিজে গেছে। ফায়ার সার্ভিস ও রেড ক্রিসেন্ট সদস্যরা প্রাণপণ চেষ্টা করছেন আগুন নিয়ন্ত্রণের। কিন্তু প্রবেশপথ সংকীর্ণ হওয়ায় আগুনের কাছে পৌঁছাতে বেগ পেতে হচ্ছিল। পরে দেড় ঘণ্টাব্যাপী সমন্বিত প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ততক্ষণে ছয়টি পরিবারের ঘরে থাকা জিনিসপত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায়।’
আগুনে পুড়ে যায় স্থানীয় বাসিন্দা বদিয়ত, সুবেল, শাহজাহান, জামাল, ফাতেমা, বিলাতু, নুরজাহান ও রাবেয়া নামে কয়েকটি পরিবারের বসতঘর। এদের মধ্যে সুবেল নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) কুড়িগ্রামের কর্মচারী।
মধ্যরাতেই ঘটনাস্থলে যান পুলিশ সুপার (এসপি) আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদুর রহমানসহ পুলিশ কর্মকর্তারা। পরে শনিবার (২৯ জুন) সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মুসফিকুল আলম হালিম।
এটিএসআই দুলাল বলেন, ‘আগুন লাগার খবর পেয়ে আমরা দ্রুত আসি। এরপর স্থানীয় কয়েকজন মিলে বালতি দিয়ে পানি দেওয়া শুরু করি। জিনিসপত্র সরিয়ে নিয়ে আগুন ছড়িয়ে পড়া রোধ করার চেষ্টা করি। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা পৌঁছে এক ঘণ্টারও বেশি সময় চেষ্টা করে আগুন নেভান।’
পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এলাকাবাসীর বরাতে জানান, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত। দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের আরও দুটি বাড়িতে। শাহজাহান নামে এক বাসিন্দার বাড়িতে স্টেশনারি ও প্রসাধনীসামগ্রীর স্টোর রুম থাকায় দাহ্যপদার্থের সংস্পর্শে আগুন নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে। সেখানে থাকা বডিস্প্রেসহ বিভিন্ন প্রসাধনী কনটেইনার বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে থাকে।
এলাকাবাসী জানান, শাহজাহানের বাড়ির রুম ভাড়া নিয়ে সাগর ও সমীর নামে দুই ভাই প্রসাধনীসামগ্রী রেখেছিল। সেখান থেকে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটের মাধ্যমে আগুনের সূত্রপাত। দাহ্যপদার্থের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো.শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘পাম্প মোটরের বৈদ্যুতিক সংযোগ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে। গুদামজাত প্রসাধনী জাতীয় দাহ্যপদার্থের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে কাজ চলছে।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুত করে সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’