শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার মধ্য দিয়ে ঢাকার গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় শহীদ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল করিমের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে মানিকগঞ্জের কাটিগ্রামে সোমবার সকালে শোক র্যালি ও স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।
সকাল সাড়ে ১০টায় রবিউল প্রতিষ্ঠিত স্কুল নজরুল বিদ্যাসিঁড়ির সামনে থেকে শোক র্যালি শুরু হয়ে কাটিগ্রাম কবরস্থানের পাশে গিয়ে শেষ হয়। র্যালিতে রবিউলের প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয় ব্লুমসের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী ও ঘনিষ্ঠ জনরা অংশ নেন। পরে তারা রবিউলের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তারা উপজেলার আটিগ্রাম ইউনিয়নের বাসাই গ্রামে ব্লুমস বিশেষায়িত বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে যান। সেখানে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমের সঞ্চালনায় ও প্রতিষ্ঠানের সভাপতি জি আর শওকত আলীর সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন– কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিপ্লব হোসেন সেলিম, ব্লুমসের সদস্যসচিব শহীদ রবিউল করিমের ছোট ভাই শামসুজ্জামান শামস, সহ-সভাপতি ইকবাল হোসেন কচি, রবিউলের স্ত্রী উম্মে সালমা প্রমুখ।
এ সময় বক্তারা বলেন, ‘আমাদের দেশে রবিউলদের সংখ্যা খুবই কম। দেশের জন্য, মানুষের জন্য তারা কাজ করেছেন অনেকটা নীরবেই। রবিউল গ্রামের অবহেলিত বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য ব্লুমস কাটিগ্রাম প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। পাশাপাশি স্বাভাবিক ছেলেমেয়েদের জন্য নজরুল বিদ্যাসিঁড়ি নামে অপর একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি খুব অল্প সময়ে তার সামর্থ্য অনুসারে এসব করেছেন। তার রেখে যাওয়া এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব এখন আমাদের সবার। সবাইকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।’
বক্তারা আরও বলেন, ‘বর্তমানে ব্লুমস পরিচালনার ক্ষেত্রে আর্থিক সঙ্কটসহ নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে আমাদের চলতে হচ্ছে। প্রতিষ্ঠাতা রবিউল থাকলে হয়তো আমাদের এটি নিয়ে ভাবতে হতো না। রবিউলের স্বপ্নে গড়া প্রতিষ্ঠানটি রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। রবিউল আমাদের সবাইকে দেখিয়েছেন কীভাবে ভালোবাসতে হয়, মানুষের সেবা করতে হয়।’
এ সময় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনায় সমাজের সর্বস্তরের সহযোগিতা চান বক্তারা। পরে ব্লুমসের উপস্থিত সব শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়।
এদিকে, বিকাল ৩টার দিকে মানিকগঞ্জের পুলিশ লাইনসের শহীদ রবিউল করিম ফটকের পাশে নির্মিত ম্যুরালে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১ জুলাই হোলি আর্টিজান বেকারিতে দেশি ও বিদেশি নাগরিকদের জিম্মি করে জঙ্গিরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান এসি রবিউল। সে সময় জঙ্গিদের ছোড়া গুলি ও গ্রেনেডের আঘাতে তিনি নিহত হন। একই ঘটনায় বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালাহউদ্দিনও নিহত হন। রবিউল করিমের বাড়ি মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার আটিগ্রাম ইউনিয়নের কাটিগ্রাম গ্রামে।