ভরা মৌসুমেও মিলছে না ইলিশ, সংকটে ঋণগ্রস্ত জেলেরা
বাংলাদেশ

ভরা মৌসুমেও মিলছে না ইলিশ, সংকটে ঋণগ্রস্ত জেলেরা

আষাঢ়-শ্রাবণ ইলিশের ভরা মৌসুম। অথচ আষাঢ় পেরিয়ে শ্রাবণেও ভোলার মেঘনা-তেতুলিয়ায় মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। মাছঘাটগুলোতে নেই কোনও হাঁকডাক। মাছ শিকার করতে না পেরে ঋণগ্রস্ত জেলেরা পড়েছেন মারাত্মক সংকটে। পাওনাদারের ভয়ে এলাকাছাড়া হয়েছেন অনেকে।

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) দুপুরে কথা হয় ভোলা সদরের পূর্ব কালুপুর এলাকার জেলে আবদুল জলিল মাঝির সঙ্গে। তিনি জানান, নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে যে খরচ হয় তার সিকি ভাগ টাকার মাছও পাচ্ছেন না তারা। আশা নিয়ে বারবার নদীতে নামেন, কিন্তু মেলে না মাছ। গত প্রায় দু মাসে জলিল মাঝি প্রায় দুই লাখ টাকা দেনা হয়েছেন। আগের দেনা আছে দেড় লাখ টাকা। সব মিলিয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা দেনা মাথায় নিয়ে ঘুরছেন।

মাছ শিকার করতে না পেরে জীবনযাপন নিয়ে চরম সংকটের কথা উল্লেখ করে এই মৎস্যজীবী জানান, আড়তদার, মুদি দোকানি, ডিজেল ব্যবসায়ীরা পাওনা পরিশোধের জন্য বেশি চাপ দিলে কী করবেন সেটা ভেবে তিনি দিশেহারা। স্থানীয় এক আড়তদারের কাছে দাদন নিয়ে একটি মাছ ধরা ট্রলার করেছেন। গত ২০ জুলাই স্থানীয় বাজার থেকে ডিজেল ও চাল-ডাল আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র নিয়ে সাত জন জেলেসহ সাগর মোহনার হাতিয়া এলাকায় ইলিশ শিকারে যান জলিল। ২১ জুলাই ঝড়ের কবলে পড়ে ট্রলার ডুবে যায় এবং তার সঙ্গে থাকা এক জেলে মারা যান। গতকাল তিনি অন্য জেলেদের সহযোগিতায় এলাকায় ফিরেছেন। এখন নিঃস্ব। পাওনাদাররা টাকার জন্য চাপাচাপি করলে এলাকা থেকে পালানো ছাড়া কোনও পথ থাকবে না তার।

ভোলা সদরের ইলিশা জংশন মাছ ঘাটে দেখা যায়, জেলে আমান সুতার জাল নিয়ে মেঘনায় একদিন-একরাতে মাছ পেয়েছেন মাত্র পাঁচশ’ টাকার। এই মাছ শিকার করতে তার খরচ হয়েছে সাড়ে নয় হাজার টাকা।

কেউ কেউ অবৈধ কারেন্ট জাল দিয়েও মাছ শিকার করছেন। জেলে ফরিদ কারেন্ট জাল নিয়ে পেয়েছেন দুই হাজার একশ পঞ্চাশ টাকার মাছ। তার খরচ হয়েছে ১১ হাজার টাকা। জেলে সাহাবুদ্দিন পেয়েছেন এক হাজার তিনশ টাকার মাছ। এর বিপরীতে তার খরচ হয়েছে ১০ হাজার টাকা।

কারেন্ট জাল ব্যবহার প্রসঙ্গে জেলেরা জানান, এখন কিছু ইলিশ মাছ পাওয়া যায় ভোলা থেকে অনেক দূরে সাগর মোহনার হাতিয়া, সুবর্ণচর এলাকায়। সেখানে যেতে জ্বালানি তেল লাগে অনেক বেশি। নিতে হয় কারেন্ট জাল। কারণ সুতার জালে মাছ তেমন আটকায় না।

নদীতে মাছ না পাওয়ায় অনেক জেলেকে নদীর পাড়ে ট্রলার মেরামত এবং ছেঁড়া জাল ঠিক করতে দেখা গেছে।

মাছ কমে যাওয়ার বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ দেব বলেন, ‘সাগর মোহনার পরে ভোলার চরফ্যাশন থেকে উত্তরে অনেক ডুবোচর। তাই সেখানে পানির গভীরতা কম। ইলিশ গভীর পানির মাছ। অনেক সময় ডুবোচরের কারণে সামনে এগুতে চায় না, তাই মেঘনার শাহবাজপুর চ্যানেলে ইলিশ কম পাওয়া যায়।’

এদিকে সুতার জালে ইলিশ আটকায় না জেলেদের এমন কথার সঙ্গে একমত নন এই মৎস্য কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘সুতার জালের চেয়ে কারেন্ট জাল সহজলভ্য এবং দাম কম। জেলেরা তাই কারেন্ট জালের পক্ষে যুক্তি দাঁড় করাচ্ছেন।’

জেলায় সরকারি তালিকাভুক্ত জেলের সংখ্যা এক লাখ ৬৩ হাজার ৫৪০। বাস্তবে এই সংখ্যা আরও বেশি। মৎস্য আড়তদার আবু তাহের, জামাল কোম্পানি, জামাল ব্যাপারী, দুলাল মহাজন জানান, জেলার কমপক্ষে এক লাখ জেলের কাছে আড়তদারদের ১০ হাজার কোটি টাকা দাদন দেওয়া আছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যবসায়ীর পাওনা আছে কোটি কোটি টাকা। নদীতে মাছ না পাওয়ায় এ বিপুল অংকের টাকা আদায় অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।

Source link

Related posts

গাছে গাছে পাখিদের ‘নিরাপদ নীড়’

News Desk

উখিয়ার শরণার্থী শিবিরে আবারও আগুন

News Desk

রাজশাহী মেডিকেলে ২৪ ঘণ্টায় ১৫ জনের মৃত্যু

News Desk

Leave a Comment