শিক্ষার্থীদের তুমুল আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করলেন যশোর নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কলেজের নার্সিং ইনস্ট্রাক্টর ইনচার্জ খুকু বিশ্বাস। নানা অনিয়ম দুর্নীতির এবং অর্থ লুটপাটের অভিযোগ তুলে শিক্ষার্থীরা তার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করেন। আন্দোলনের মুখে রবিবার (১৮ আগস্ট) দুপুর ২টার দিকে তিনি পদত্যাগ করেন।
রবিবার সকাল ৯টার দিকে যশোর নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কলেজের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারী তিন শতাধিক শিক্ষার্থী। একপর্যায়ে নার্সিং ইনস্ট্রাক্টর ইনচার্জের কক্ষে প্রবেশ করে তাকে ঘেরাও করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। টানা পাঁচ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর দুপুর ২টার দিকে যশোরের সিভিল সার্জন ও যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের উপস্থিতিতে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করে পদত্যাগ করেন খুকু বিশ্বাস।
তার পদত্যাগের পর ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন নার্সিং ইন্সট্রাক্টর আরজিনা খাতুন। ইনচার্জের পদত্যাগে সন্তোষ প্রকাশ করে উল্লাস করেন শিক্ষার্থীরা।
তাদের দাবি, আগামী দিনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনও কর্মকর্তা যেন এ ধরনের দুর্নীতি করার সাহস না পায়- সেজন্য দুর্নীতিগ্রস্ত ইনচার্জের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সরকার থেকে দেওয়া প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীর মাসিক স্টাইপেন্ড কর্তন করে বলা হয়, ওই টাকা সরকারের কাছে জমা দেওয়া হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে স্পষ্ট বলা হয়েছে, কোনও টাকা ফেরত নেওয়া হয় না। কলেজের সহকারী শিক্ষকরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সরকারি স্টাইপেন্ডের টাকা আত্মসাৎ করেন, যার প্রধান মদদদাতা ইনচার্জ। হোস্টেলে মেয়েদের ডাইনিং খরচ ১৫০০ টাকা, ২০ দিন খেলেও দিতে হয় ৩০ দিন খেলেও দিতে হয়। যে মাসে ২০ দিন খায় সে মাসের বাকি ১০ দিন ডাইনিং বন্ধ থাকলেও সম্পূর্ণ টাকা নেওয়া হয়। এই টাকা ফান্ডে জমা থাকে বলা হলেও কোনও স্বচ্ছতা দেখাতে পারেননি। ইনচার্জসহ শিক্ষকরা এই টাকা আত্মসাৎ করেন।
তাদের অভিযোগ, একজন স্টুডেন্টের বাবা মারা গেছেন, ইনচার্জের কাছে ছুটি চাইতে গেলে বলেন, ‘মাটি দিয়ে দিতে বলো, দুই দিন পর কলেজ বন্ধ হবে, তখন বাসায় যাবে’। একজন প্রতিষ্ঠান প্রধান কীভাবে এমন কথা বলেন। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী আশিষ মায়ের বয়সী আঞ্জুমান খালার সঙ্গে অশ্লীল আচরণ করে। আমরা লিখিত অভিযোগ দিয়ে শাস্তি দাবি করলে ইনচার্জ তার পক্ষ নিয়ে আমাদের উল্টো হুমকি দিয়েছেন। অভিযুক্ত আশিষ রাত্রিকালীন ডিউটি চলাকালে মাদক সেবন এবং নানা অপকর্মে যুক্ত থাকে। বিষয়টি জানতে পেরে হোস্টেলের মেয়েরা লিখিত অভিযোগ দিলেও ইনচার্জ তার ক্ষমতাবলে কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।
তারা জানান, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগতভাবে ইনচার্জের রুমে ডেকে হেনস্তা করা হতো। ভাইভা ও ফরমেটিভ মার্ক কম দেবে এমন ভয়ভীতি দেখিয়ে সব ম্যামরা শিক্ষার্থীদের দমিয়ে রাখতেন। ঘোষিত ছুটির একদিন পর কলেজে গেলে ছাত্রত্ব বাতিলসহ অভিভাবকের ডেকে অপমান অপদস্থ করা হতো। হোস্টেলের মেয়েদের সঙ্গে অশ্লীল ব্যবহার করা হতো।
এ বিষয়ে যশোরের সিভিল সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসান বলেন, শিক্ষার্থীরা ইনচার্জের রুমে ঢুকে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগগুলো শুনি এবং ইনচার্জের সঙ্গে কথা বলি। আমাদের উপস্থিতিতে ইনচার্জ মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেছেন। কলেজের একজন শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন।