মহাসড়কে পানি কমার অপেক্ষায় পণ্যবোঝাই ৮ হাজার গাড়ি, রাতে হয় চুরি
বাংলাদেশ

মহাসড়কে পানি কমার অপেক্ষায় পণ্যবোঝাই ৮ হাজার গাড়ি, রাতে হয় চুরি

গত তিন দিন ধরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বন্ধ রয়েছে যান চলাচল। এ কারণে উভয় পাশে আটকা পড়েছে কমপক্ষে ৮ হাজার পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ডভ্যানসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। বন্যায় মহাসড়কের ফেনীর লালপুল অংশে কোমর থেকে গলাসমান পানি থাকাতে বন্ধ রয়েছে যান চলাচল। ফলে চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের পণ্য পরিবহন বন্ধ রয়েছে।

শনিবার (২৪ আগস্ট) সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন খ্যাত ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের মীরসরাইয়ের নিজামপুর কলেজ থেকে ফেনী পর্যন্ত কয়েক হাজার পণ্যবাহী গাড়ি আটকা পড়েছে। একইভাবে ফেনীর অপর প্রান্তে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে সড়কে আটকে আছে চট্টগ্রামগামী কয়েক হাজার পণ্যবোঝাই যান। আটকে পড়া চালকরা জানিয়েছেন, উভয় পাশে কমপক্ষে ৮ হাজার গাড়ি পণ্য নিয়ে সড়কে দাঁড়িয়ে আছে। পানি কমার জন্য অপেক্ষায় আছেন তারা।

মীরসরাইয়ে আটকে পড়া পণ্যবোঝাই ট্রাকের চালক মো. স্বাধীন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) দুপুর থেকে ট্রাক নিয়ে আটকা পড়েছি। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে গম নিয়ে ঢাকার নারায়ণগঞ্জে যাচ্ছিলাম। ফেনীতে সড়কের ওপর পানি বেশি থাকার কারণে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। আমার আগে হাজার হাজার গাড়ি পণ্য নিয়ে আটকে আছে। পানি কমার অপেক্ষায় আছি।’

নজরুল ইসলাম নামে আরেক চালক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার থেকে সড়কে পণ্য নিয়ে আটকে আছি। শুক্রবার রাতে চারটি ট্রাকে চুরি হয়েছে। দুটি গাড়ির গ্লাস ভেঙে দিয়েছে। কয়েকটি গাড়ি থেকে রাতের আঁধারে ব্যাটারিসহ নানা যন্ত্রাংশ খুলে নিয়ে গেছে। গাড়িতে থাকা মালামাল নিয়ে যাওয়ার জন্য তালা ভাঙার চেষ্টাও করেছে কেউ কেউ। পরে সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং শিক্ষার্থীদের সহায়তায় দুষ্কৃতকারীদের তাড়ানো হয়। গাড়ি থেকে মালামাল কিংবা কোনও ধরনের যন্ত্রাংশ খোয়া যাবে এমন ভয়ে রাতে ঘুমাইনি।’

সাজ্জাদ হোসেন নামে অপর এক চালক বলেন, ‘আমি চাল নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিলাম। এরই মধ্যে এ অবস্থায় পড়েছি। ফেনীর লালপুল থেকে চৌদ্দগ্রাম পর্যন্ত সড়ক এখনও পানির নিচে। এ কারণে যানবাহন চলাচল করছে না। দুই পাশে কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ হাজার পণ্যবোঝাই গাড়ি আটকে আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পকেটে টাকা আছে, তবে আশপাশে দোকানপাট নেই। খাওয়ার জন্য তেমন কিছু নেই। ঘরবাড়ির সঙ্গে এখানে অনেক দোকানপাটও বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে আমাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।’

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মো. সাইফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার পর থেকে চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। রেললাইনে পানি থাকার কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। কবে নাগাদ ট্রেন চলাচল সচল হবে এ বিষয়ে এখনও নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।’

এদিকে, রেল ও সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন আড়তে পণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে সবজির বাজারে সংকট সবচেয়ে বেশি সৃষ্টি হয়েছে। এ সুযোগে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।

এ প্রসঙ্গে আন্তজেলা মালামাল পরিবহন সংস্থা ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি মনির আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার থেকে চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের পণ্য পরিবহন বন্ধ রয়েছে। ফেনীসহ বিভিন্ন স্থানে সড়কের ওপর পানি থাকায় গাড়ি চালানো যাচ্ছে না। কখন সড়ক থেকে পানি নামবে আমরা সেদিকে তাকিয়ে আছি। পানি কমলে আবারও গাড়ি চলাচল শুরু করবে।’

শুক্রবার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কোনও আমদানি পণ্য দেশের কোথাও নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একইভাবে রফতানি পণ্যও চট্টগ্রাম বন্দরে আনা যায়নি। সড়ক এবং রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকায় চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের পণ্যের সাপ্লাই চেইন বন্ধ হয়ে গেছে।’

এ ব্যাপারে দেশের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্যের বাজার চাকতাই আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তিন দিন ধরে চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ বন্ধ। এ কারণে পণ্যবাহী গাড়ি চট্টগ্রামের আড়তে আসেনি। চট্টগ্রাম থেকে পণ্য নিয়ে দেশের অন্য কোথাও যেতে পারেনি। পণ্যের সাপ্লাই চেইন ভেঙে পড়ায় চাকতাই-খাতুনগঞ্জে পাইকারিতে দাম কিছুটা বেড়েছে।’  

Source link

Related posts

কুড়িগ্রামে হাজারো পরিবার পানিবন্দি, চলছে ত্রাণ বিতরণ

News Desk

ভিক্ষুকের ছুরিকাঘাতে ভিক্ষুকের মৃত্যু

News Desk

আগের চেয়ে বেশি সুবিধা পাবেন প্লট মালিকেরা

News Desk

Leave a Comment