চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায় এবারের ভয়াবহ বন্যায় ৪৭৬ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই এলাকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্টের।
ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বৃহস্পতিবার রাতে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সম্প্রতি অতিবৃষ্টির ফলে সৃষ্ট আকস্মিক ভয়াবহ বন্যায় ফটিকছড়ি উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গত দুই দিন ধরে পানি কমেছে। বন্যার পানি কমলেও ক্ষত রয়ে গেছে। বন্যায় মাছের প্রজেক্ট, ক্ষেতের ফসল, গৃহপালিত প্রাণী, রাস্তা-ঘাট ও ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। টাকার অংকে এ ক্ষতির পরিমাণ ৪৭৬ কোটি টাকার সমপরিমাণ। আমরা বিষয়টি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবহিত করবো।’
ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, বন্যায় ৬০০টি সম্পূর্ণ এবং ৪ হাজার ৮০০টি আংশিকসহ মোট ৫ হাজার ৪০০টি ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। টাকায় যার ক্ষতির পরিমাণ ৯৬ কোটি। কৃষিনির্ভর এ উপজেলায় কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষিতে ক্ষতির পরিমাণ ১২০ কোটি টাকা। মৎস্য খাতে ক্ষতি ৩৮ কোটি টাকা। রাস্তা, ব্রিজ-কালভার্ট, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের ক্ষতি ২২৩ কোটি টাকা। বন্যায় ভেঙে গেছে হালদা নদীসহ বিভিন্ন খালের বাঁধও। পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন এসব বাঁধ ভেঙে ক্ষতি হয়েছে ১৫ কোটি টাকা। এ ছাড়াও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ, নলকূপ ও টয়লেটের ক্ষতির পরিমাণ ১৪ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. সাইফুল্লাহ মজুমদার জানিয়েছেন, ‘ফটিকছরি পৌরসভা এবং ইউনিয়ন মিলে ২০টিতে টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় পানিবন্দি ছিল ৩৯ হাজার ৫৭৮টি পরিবার। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এক লাখ ৬৫ হাজার ৯৫০ জন। ফটিকছড়িতে বন্যায় তিন জনের মৃত্যু হয়। ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ১৫০ টন চাল ৯ লাখ ৭৫ হাজার নগদ টাকাসহ অন্যান্য ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।’
এবার চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার পাশাপাশি মীরসরাই, সীতাকুণ্ড, হাটহাজারী, রাউজান উপজেলাসহ বেশ কয়েকটি উপজেলায় বন্যা দেখা দেয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় মীরসরাই, ফটিকছড়ি, সীতাকুণ্ড ও হাটহাজারীতে।
এদিকে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য এখনও সরকারি সহায়তার পাশাপাশি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন। তবে ব্যক্তি ও সংগঠনের পক্ষ থেকে যেসব ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে সেগুলো বণ্টনে বিশৃঙ্খলাও সৃষ্টি হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত কোনও কোনও পরিবার একাধিক বার সহযোগিতা পেলেও অনেক পরিবার কম পাওয়ার অভিযোগও আছে।
এ প্রসঙ্গে ফটিকছড়ি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘যারা বন্যার্তদের সহযোগিতা করতে চান তারা সরাসরি না দিয়ে উপজেলা প্রশাসনের কাছে জমা দিতে পারেন। তাহলে এসব ত্রাণের সুষম বণ্টন নিশ্চিত হবে। প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সমানভাবে ত্রাণ সহযোগিতা পাবে।’