নেই অনার্সের অনুমোদন, তবু প্রতিমাসে তুলছেন ৫ লাখ টাকা বেতন
বাংলাদেশ

নেই অনার্সের অনুমোদন, তবু প্রতিমাসে তুলছেন ৫ লাখ টাকা বেতন

অনার্স ক্লাসের অনুমোদন নেই। নেই কোনও ছাত্র-ছাত্রী। কিন্তু শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ১৪ জন। ২০২১ সাল থেকে প্রতিমাসে ৫ লাখ ২০ হাজার টাকা বেতনও তুলছেন তারা। বাগেরহাট জেলার বঙ্গবন্ধু সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষকদের কথা বলা হচ্ছে। নিয়মবহির্ভূতভাবে এই শিক্ষকদের বেতন চালু করতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ঘুষ দেওয়ার কথা স্বীকার করেন কলেজটির অধ্যক্ষ মো. হাফিজুর রহমান।

ঘুষ দিয়ে অনার্স ক্লাসের বেতন তোলা শিক্ষকরা হলেন- মল্লিক শামছুজ্জোহা, সৈয়দ তরিকুল ইসলাম, আব্দুল জলিল সানা, অনুপমা মণ্ডল, মো. আল আমিন, দেলোয়ার হোসেন, মো. রুহুল কুদ্দুস, তামান্না জাহান, শেখ ফরিদ, আব্দুল্লাহ আল মামুন, জোবায়দা গুলশানারা, মাহামুদুল হাসান, আব্দুর রহিম ও সাদেকুর নাহার। তারা সবাই ১৪ লাখ টাকা করে ঘুষ দেন সংশ্লিষ্ট শাখায়। যাতে করে অনার্সের শিক্ষক হয়ে ক্লাস না করে বেতন তুলে পকেটে ভরা যায়। এভাবে ২০২১ সাল থেকে কাগজে-কলমে শিক্ষক বনে যাওয়া তারা সবাই বেতন উঠিয়ে দিব্বি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। 

কলেজ সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুরুতে ১৯৯৪ সালে ‘মোংলা মহিলা কলেজে’ নামকরণ করা হলেও পরে সেটা পরিবর্তন করে ‘বঙ্গবন্ধু সরকারি মহিলা কলেজে’ করা হয়। অবৈধভাবে সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার জন্য দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা কৌশলে এর নাম পরিবর্তন করেন। এরপর বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যবহার এবং বিশেষ সুবিধা (ঘুষ) দিয়ে ডিজি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অডিট রিপোর্টে অনার্স ক্লাস না থাকার বিষয়টিকে এড়িয়ে যাওয়া হয়। এরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিশেষ টাস্কফোর্সের মাধ্যমে শিক্ষক-কর্মচারীর পদ সৃষ্টি করা হয়। কেবল ইন্টারমিডিয়েট থেকে ডিগ্রি পর্যন্ত ক্লাসের অনুমোদন থাকা কলেজে অনার্স পর্যন্ত বেতন চালু করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। এরপর থেকে ক্লাস না করে কেবল হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে ২০২১ সালের মে মাস থেকে অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে বেতন তুলছেন অনার্স ক্লাসের জন্য নিয়োগ পাওয়া এই ১৪ জন শিক্ষক।

এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ মো হাফিজুর রহমান জানান, ইন্টারমিডিয়েট ও ডিগ্রিতে এসব শিক্ষকদের ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর ঘুষ দিয়ে অনার্সের বেতন পাওয়ার বিষয়ে অকপটে স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘ওই টাকা (ঘুষ) সংশ্লিষ্ট শাখা ও ঢাকায় যাতায়াত বাবদ খরচ করা হয়েছে। অবশিষ্ট টাকা নিজস্ব ফান্ডে রেখে কলেজের অবকাঠামোর কাজে ব্যয় করা হচ্ছে।’

তবে কলেজে অবকাঠামোর দৃশ্যমান কোনও উন্নয়ন চোখে পড়েনি। প্রতিষ্ঠার ৩০ বছরেও মাতৃভাষার প্রতীক একটি শহীদ মিনারও স্থাপন করা যায়নি এই কলেজে।

এ বিষয়ে ফাদার মারিনো রিগন শিক্ষা ফাউন্ডেশনের সভাপতি সুভাষ বলেন, ‘যদি কোনও কলেজ বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনার্সের শিক্ষার্থী না থাকে, ক্লাস না হয়, তাহলে সেখানে কেন শিক্ষক থাকবে? সেখানে তো কোনও শিক্ষক থাকার যৌক্তিকতা নাই। তারপর আবার শিক্ষকরা নিয়মিত বেতন তুলছেন। এটা তারা কীসের ভিত্তিতে ওঠায়? এটা তো চরম অনিয়ম এবং দুর্নীতি।’ যেসব শিক্ষক অপকৌশলের আশ্রয় নিয়ে ঘুষ দিয়ে বেতন চালু করেছে, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা উচিত। অবিলম্বে এই লুটপাট বন্ধ করে দিতে সরকারের প্রতি দাবি জানান প্রবীণ এই শিক্ষাবিদ।

এদিকে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট মোংলার সভাপতি মো. নুর আলম শেখ বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন আমাদের জাতির একটা বিশেষ কালপর্ব। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতার সূত্রপাত ঘটে। এটি একটি সংস্কৃতির অংশ। ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি বা স্মারক হিসেবে শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনার সারা দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাকা বাঞ্ছনীয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সরকারি মহিলা কলেজে না থাকা কলঙ্কজনক এবং অপরাধ।’

ঘুষ দিয়ে অনার্স ক্লাস না নিয়ে দীর্ঘদিন বেতন তোলার বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘এর উত্তর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ডিজি দেবেন।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কলেজের অন্য বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, ‘অভিযুক্ত শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন গত ৫ আগস্ট দেশের পটপরিবর্তনের পর বেশ প্রভাবশালী হয়ে উঠেছেন। বিএনপিদলীয় সমর্থক পরিচয় দিয়ে নিজেকে অধ্যক্ষের চেয়ে বড় শিক্ষক মনে করেন তিনি। কলেজে তার স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে কোনও শিক্ষক কথা বললে তাকে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের দিয়ে ভয় দেখান।’

Source link

Related posts

রংপুরে কালবৈশাখীর তাণ্ডব, আহত ৩৫

News Desk

সেই অধ্যক্ষকে সন্দ্বীপে বদলি

News Desk

পাটুরিয়া ঘাটে ঢাকামুখী মানুষের ভিড়

News Desk

Leave a Comment