‘আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস’ উপলক্ষে মঙ্গলবার ঢাকায় সমাবেশ করেছে বিএনপি। পাশাপাশি বিভাগীয় শহরগুলোতে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের অংশগ্রহণে শোভাযাত্রা, সমাবেশ ও মিছিল করেছেন নেতাকর্মীরা। সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতারা, অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত সংস্কারকাজ শেষ করে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন। সেইসঙ্গে ভোট না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনে থাকার কথা বলেছেন।
চট্টগ্রাম
নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন জারি রাখার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘যতদিন পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার ঘোষণা না দেয়, ততদিন এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং উপদেষ্টাদের আহ্বান জানাই, যতদ্রুত সম্ভব নির্বাচনমুখী সংস্কার সাধন করুন এবং গণতান্ত্রিক নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ আপনারা ঘোষণা করুন। তাহলে এ দেশের মানুষ আশ্বস্ত হবে, বাংলাদেশ সত্যিই প্রকৃত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাবে।’
বিকালে চট্টগ্রাম নগরীর আলমাস মোড়ে বিভাগীয় বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। সমাবেশ শেষে শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি আলমাস হয়ে কাজীর দেউরী, লাভ লেইন, জুবলী রোড, নিউ মার্কেট, কোতোয়ালি হয়ে লালদীঘি পাড়ে এসে শেষ হয়। এতে দলের স্থানীয় নেতারাও অংশ নেন।
খুলনা
বিকালে খুলনায় আয়োজিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য যতটুকু সময় প্রয়োজন এবং সেজন্য যেসব সংস্কার দরকার, তার পদক্ষেপ নিতে হবে, সে পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারকে বিএনপি সমর্থন দেবে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের জন্য বিএনপির নেতাকর্মীরা ১৬ বছর ধরে আন্দোলন করেছেন। তাকে ১৬ দিনের হিসাবে বিচার করলে চলবে না। সরকারের পতন হয়েছে। কিন্তু এখনও গণতন্ত্র ফেরত পাইনি। ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোট নিজের হাতে না দেওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাবো না।’
নগরীর শিববাড়ী মোড়ে জিয়া হলের সামনে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে র্যালি বের করা হয়। এতে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে স্থানীয় নেতারাও অংশ নেন।
সিলেট
বিকালে সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার অবৈধভাবে রাজত্ব করতে গিয়ে দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে। পুলিশকে নিজেদের বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করেছে। গত ১৫ বছরে বিএনপিকে দমন করতে গিয়ে সিলেটের ইলিয়াস আলীসহ ৫২২ জন নেতাকর্মীকে গুম করেছে। হত্যা করেছে ১০ হাজার নেতাকর্মীকে। তারপরও তারেক রহমানের নির্দেশ এবং দেশের প্রতি ভালোবাসা থাকায় বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজপথ ছাড়েননি। এরই ফসল হিসেবে ৫ আগস্ট স্বৈরশাসকের পতন হয়েছে। তাই এই অর্জনকে বৃথা যেতে দেবো না আমরা। সুতরাং অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত মাঠে থাকতে হবে।’ এরপর র্যালি বের করা হয়। এতে কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী এবং মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরীসহ দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
বরিশাল
দুপুরে মহানগর ও জেলা বিএনপির উদ্যোগে বান্দরোড প্লানেট ওয়ার্ড শিশুপার্কের সামনে সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপি। এতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, ‘দেশ স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা মুক্ত হয়েছে। কিন্তু গণতন্ত্র বলতে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার ক্ষমতায় এসে রাষ্ট্র সংস্কার করবে, এ জন্য সময়ের প্রয়োজন।’ বর্তমানে দেশ পরিচালনাকারী অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘তারাও বেশিদিন অনির্ভরযোগ্য হয়ে থাকতে পারবে না। সবচেয়ে বড় অধিকার ভোটের ও বেঁচে থাকার অধিকার এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা- একটা ধাপ পার হয়েছি। বাকিগুলো এ সরকারের সহায়তায় বাস্তবায়ন করা হবে।’
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুকের সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। সমাবেশ শেষে শোভাযাত্রা নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে সমাবেশস্থলে এসে শেষ হয়।
রাজশাহী
বিকালে রাজশাহীতে আয়োজিত বিভাগীয় শোভাযাত্রার আগে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, ‘এখনও আমরা সরকারে যাইনি, মাথায় রাখতে হবে। সংগঠিত হতে হবে, আগামী দিনের জন্য তৈরি হতে হবে। তারেক রহমান বলেছেন, গণতন্ত্রের সংগ্রাম এখনও শেষ হয় নাই। যেদিন ভোট হবে, ভোটের মধ্য দিয়ে মানুষ পছন্দের প্রার্থীকে তার ভোট দিতে পারবে। সেদিন আমরা বুঝবো দেশে গণতন্ত্রের সুবাতাস বইছে। এজন্য বিএনপির নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈসার সভাপতিত্বে সমাবেশ প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হেলালুজ্জামান লালু, হাবিবুর রহমান হাবিব, ইঞ্জিনিয়ার খালিদ চৌধুরী পাহিন, দলের বন ও পরিবেশ সম্পাদক সাবেক সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক শফিকুল হক মিলন।
রংপুর
বিকালে রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে বিভাগীয় সমাবেশ ও গণমিছিলের উদ্বোধন করে বিএনপি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম বলেছেন, ‘আমাদের যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি। অর্ধেক পথ অতিক্রম করেছি। এই বিপ্লব সেদিন সফল হবে যেদিন জনগণ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করতে পারবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, অন্তর্বর্তী সরকার সবকিছু সংস্কার শেষে দ্রুত সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন দেবেন। এর মাধ্যমে আবারও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। বেগম খালেদা জিয়া আবারও প্রধানমন্ত্রী হবেন।’
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শামসুজ্জামান সামুর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম প্রমুখ। সমাবেশ শেষে র্যালি বের করা হয়।
ফরিদপুর
বিকালে শহরের ব্রহ্মসমাজ সড়কে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু। সমাবেশ শেষে শহরে একটি র্যালি বের করা হয়। সমাবেশে বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, বিএনপি এককভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাবে না। আগামী দিনে বিএনপি ক্ষমতায় এলে রাষ্ট্র্রীয়ভাবে জাতীয় সরকার গঠন করে খুনি-লুটেরাদের বিচার করা হবে। আন্তর্জাতিক আদালতে খুনিদের বিচার হবে। গত ১৭ বছর আমরা গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য আন্দোলন করেছি। আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো। এজন্যই দ্রুত সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি।’ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এ এফ এম কাইয়ুম জঙ্গির সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া প্রমুখ।
ময়মনসিংহ
দুপুরে ময়মনসিংহ টাউন হল চত্বরের সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী বলেছেন, ‘বর্তমান সরকারের প্রতি বিএনপির পূর্ণ সমর্থন আছে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে।’ মহানগর আহ্বায়ক একেএম শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশে দলের যুগ্ম মহাসচিব এমরান সালেহ প্রিন্স, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল আলম উপস্থিত ছিলেন। পরে নগরীতে শোভাযাত্রা বের করা হয়।
কুমিল্লা
বিকাল ৪টায় কুমিল্লা টাউন হল মাঠে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘আমরা শপথ নেবো কোনও গণতন্ত্রবিরোধী শক্তির সঙ্গে আমাদের কোনও আপস নাই। যারা জনগণকে হত্যা করেছে তাদের কোনও রেহাই নেই। তাদের বিচার বাংলার মাটিতে আইন অনুযায়ী হবেই হবে। তাদের কেউ রক্ষা করতে পারবে না।’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও দলের ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক হাজী আমিন-উর-রশিদ ইয়াছিন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব জসিম উদ্দিনসহ দলের নেতৃবৃন্দ।