সাতক্ষীরার শ্যামনগরের যশোরেশ্বরী কালীমন্দিরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দেওয়া সেই সোনার মুকুট চুরির ঘটনায় কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। চুরির ঘটনায় থানায় কোনও মামলাও হয়নি। তবে চোরকে ধরিয়ে দিতে পারলে পুরস্কার দেওয়া হবে বলে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, মন্দিরের পুরোহিত দিলীপ কুমার মুখার্জিসহ মন্দির-সংশ্লিষ্ট ৭ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ সকালে তাদের শ্যামনগর থানায় নিয়ে যায়। শুক্রবার (১১ অক্টোবর) রাত পর্যন্ত কাউকে ছাড়া হয়নি।
শ্যামনগর উপজেলা হিন্দু ছাত্র মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক অনুপম কুমার ঘোষ বলেন, ‘মুকুট চুরি হয়ে যাওয়ার পর পুরোহিত, তত্ত্বাবধায়কসহ সাত জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তারা এখনও সেখানেই আছেন, এজন্য ফোন ধরছেন না।’
তিনি বলেন, ‘মন্দিরটি সর্বজনীন নয়, এজন্য সেখানে কোনও কমিটিও নেই। দুজন ব্যক্তি মন্দিরটিকে প্রায় পারিবারিক মন্দির হিসেবে কুক্ষিগত করে রেখেছেন। কমিটি না থাকায় মামলার বিষয়টি হয়তো দেরি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকাল থেকেই মন্দিরটি তালাবদ্ধ আছে। শুক্রবার সেখানে কোনও পূজা হয়নি।’
শ্যামনগর প্রেসক্লাবের সভাপতি সামিউল মনির বলেন, ‘মুকুট চুরি করা যুবককে আমাকের এলাকার কেউ কখনও দেখেনি। বিভিন্ন এলাকার মানুষকে ভিডিও দেখানো হলেও কেউ চিনতে পারছে না। তবে ওই যুবককে দুই-তিন দিন ধরে অনেকেই মন্দিরের আশপাশে ঘোরাফেরা করতে দেখেছেন বলে জানা গেছে।’
এদিকে, সাতক্ষীরার শ্যামনগরের যশোরেশ্বরী মন্দিরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দেওয়া প্রতিমার মাথার সোনার মুকুট চুরি হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন। শুক্রবার ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে উদ্বেগ জানায় দেশটির হাইকমিশন। ওই ফেসবুক পোস্টে লেখা হয়, ২০২১ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকালে সাতক্ষীরা জেলার যশোরেশ্বরী কালীমন্দিরে যে মুকুট উপহার দেওয়া হয়েছিল, সেটি চুরি হয়ে যাওয়ার খবর আমরা দেখেছি। আমরা এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং চুরির তদন্ত, মুকুট উদ্ধার ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ জানাচ্ছি।
শ্যামনগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ফকির তাইজুল ইসলাম বলেন, ‘মন্দিরের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে জড়িত ব্যক্তিকে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। ওই ঘটনায় এখনও কোনও মামলা হয়নি। তবে মামলার প্রক্রিয়া চলছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মন্দির কমিটির যারা ছিলেন তাদের ডাকা হয়েছে। এসপি স্যারও পুরোহিতসহ সকলের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমরা কাউকে আটক বা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসিনি। আমরা সকলের সহযোগিতা চাচ্ছি। এই ঘটনায় তদন্ত চলছে। যাচাই-বাছাই শেষে বিস্তারিত বলতে পারবো।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘মন্দিরের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, ঘটনার সময় মন্দিরের ফটকে তালা দেওয়া ছিল না। সেই সুযোগে ৩০-৩২ বছর বয়সের সাদা গেঞ্জি পরিহিত এক যুবক মুকুটটি চুরি করে নিয়ে যাচ্ছেন। ফুটেজটি স্থানীয় লোকজনকে দেখানো হয়েছে। কিন্তু কেউ তাকে শনাক্ত করতে পারছে না। খুব দ্রুতই তাকে আটক করতে সক্ষম হবো বলে আশা করছি। সোনার মুকুট চোরের সন্ধান বা ধরিয়ে দিতে পারলে তাকে উপযুক্ত পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা করেছি।’
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ২৭ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যশোরেশ্বরী কালীমন্দির পরিদর্শনে এসে সোনার মুকুট পরিয়ে দিয়েছিলেন। এর আগে বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) দুপুর ২টা ৪৭মিনিট থেকে ২টা ৫০মিনিটের মধ্যে মুকুটটি চুরি হয়। এ ঘটনার পর মন্দিরের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে এক যুবককে মুকুটটি চুরি করে নিয়ে যেতে দেখা যায়।