পাহাড়ি পানির ঢল বাড়িঘর ভাসিয়ে নিয়ে গেছে, কাঁদছেন বিধবা সুরতন
বাংলাদেশ

পাহাড়ি পানির ঢল বাড়িঘর ভাসিয়ে নিয়ে গেছে, কাঁদছেন বিধবা সুরতন

‘বাপুরে শুক্কুরবার দুপুর বেলার মইধ্যেই বাড়িঘরে পাহাড়ের ঢলের পানি আইতে থাহে। শনিবার সারাডা দিন বৃষ্টি আর বৃষ্টি। সন্ধ্যা রাতের পর বানের পানি আইসে মাটির দেয়ালের টিনের থাহার আর রান্নাবান্না করার দুইডা ঘর ভাসায়ে নিয়ে যায়। কোনোমতে জানডা নিয়ে অসুস্থ পোলা, বউ আর নাতিনাতনি নিয়ে পাশের উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিছিলাম। দুই দিন ধইরা পানি কমতে থাহে আর আজ বাড়িতে আইসা দেহি থাহার আর রান্নার ঘর নাই, টিনের কয়ডা চালা ভিটায় পইড়া আছে। গরিব মানুষ, এহন ঘর কেমনে উঠামু। কে আমগোরে টাহাপয়সা দিবো।’

শুক্রবার (১১ অক্টোবর) সকালে আহাজারি করতে করতে কথাগুলো বলছিলেন ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী উপজেলা ধোবাউড়ার কলসিন্ধুরের বল্লমপাড়ার মরহুম আবুল হোসেনের স্ত্রী সুরতন নেছা (৬৫)।

তিনি আরও জানান, পাহাড়ের ঢল আসায় ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় মালামাল নিয়ে যেতে পারেননি। ঘরের হাস মুরগিসহ সব মালামাল বানের পানিতে ভেসে গেছে। এখন পর্যন্ত কোনও সরকারি সাহায্য- সহযোগিতা আসেনি। একমাত্র ছেলে মানিক দুই সপ্তাহ ধরে অসুস্থ হয়ে ঘরে পড়ে আছে। তাকে মানুষের বাড়িতে রেখে এসে দেখেন ঘরবাড়ির এমন অবস্থা।     

টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও ফুলপুর উপজেলা গত শুক্রবার (৪ অক্টোবর) থেকে প্লাবিত হয়। এসব এলাকা থেকে গত কয়েকদিন ধরে ধীরে ধীরে বন্যার পানি নামছে। এরই মধ্যে বন্যার ক্ষত বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বানবাসী মানুষ বাড়ি ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। বিধবা সুরতন নেছার মতো বন্যা কবলিত বেশিরভাগ মানুষের একই অবস্থা। বন্যায় বাড়িঘর ছাড়াও আমন ধানের ফসলি জমি, মাছের খামারসহ রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

হালুয়াঘাটের বনপাড়া গ্রামের মফিজ উদ্দিন (৫৮) জানান, শ্রমিকের কাজ করেন তিনি। চলতি মৌসুমে আমন ধান চাষ করেছিলেন ৬৫ শতক জমিতে, যা পানিতে তলিয়ে গেছে। গত ৭ দিন ধরে পানির নিচে থাকায় আমন ধান নষ্ট হয়ে গেছে। সুদে ঋণ নিয়ে আবাদ করেছিলেন। ধান ক্ষেত পুরোটা নষ্ট হওয়ায় এখন কীভাবে ধার শোধ করবেন এই নিয়ে চিন্তায় ঘুম আসছে না তার।

ফুলপুরের কামাল হোসেন জানান, এর আগে এমন বন্যা কখনও তিনি দেখেননি। দীর্ঘ সময় ধরে পানি বাড়িঘর ও ক্ষেতে খামারে থাকায় সব কিছু নষ্ট হয়ে গেছে। বেশিরভাগ মানুষের ঘর পড়ে গিয়ে পানিতে ভেসে গেছে। কীভাবে ঘর উঠিয়ে আবারও জীবনযাপন করবে এই নিয়ে চিন্তিত গরিব অসহায় মানুষ। ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারিভাবে সহযোগিতার দাবি জানান তিনি।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ছানোয়ার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও ফুলপুর উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকা থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। এখন আর কেউ পানিবন্দি নেই। তবে পুরো এলাকা থেকে পানি নেমে যাওয়ার পরে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা সম্ভব হবে। এরপর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ক্ষতির বিষয়টি অবহিত করা হবে। বরাদ্দ পেলে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করা হবে।’

Source link

Related posts

চট্টগ্রামে ২৪ ঘণ্টায় আরও ৫ জনের মৃত্যু

News Desk

‘নির্বাচন বানচালের চক্রান্ত হলে বিএনপি-জামায়াতকে দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে’

News Desk

পুঁতে ফেলা তিমি দুই মাস পর আবার তোলা হবে

News Desk

Leave a Comment