‘অহন পর্যন্ত কেউ আমরার খবরডাও নিলো না’
বাংলাদেশ

‘অহন পর্যন্ত কেউ আমরার খবরডাও নিলো না’

‘আমার ঘরডা বন্যায় ভাইঙ্গে নিছেগা। এই ঘরডার মইধ্যেই বাইচ্চা কাইচ্ছা লইয়া থাকতাম। ঘর ত ভাঙছেই, ঘরের ভিতরে যা কিছু আছিন, সবতা বন্যার পানি ভাসায়া লইয়া গেছেগা। অহন আমি নিঃস্ব। খুব কষ্টের মধ্যে আছি। খায়া না খায়া আছি। কিন্তু অহন পর্যন্ত কেউ আমরার খবরডাও নিলো না।’

দুচোখে টলমল পানি নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন সম্প্রতি উজানের ঢল আর ভারী বর্ষণের ফলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত নেত্রকোনার বৃদ্ধ ইদ্রিস আলী।

জেলার দুর্গাপুর উপজেলার শাহাপুর গ্রামের বাসিন্দা ইদ্রিস আলী। গত শনিবার (১৩ অক্টোবর) বিকালে সরজমিনে কথা হয় ইদ্রিস আলীসহ তার পরিবারের লোকজনের সঙ্গে।

তারা জানান, ষাটোর্ধ্ব ইদ্রিস আলী দিনমজুরি করে সংসার চালান। স্ত্রী ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন নয় মাস আগে। দিনমজুরি করে যা উপার্জন করেছিলেন সব ব্যয় হয় স্ত্রী চিকিৎসায়। শুধু তাই নয়, চিকিৎসার টাকা জোগাতে তিনি মানুষের কাছ থেকে অনেক টাকা ঋণও করেছেন। তবুও স্ত্রীকে বাঁচাতে পারেননি। চার ছেলেমেয়ের মধ্যে বড় ছেলে বিয়ে করে বউ নিয়ে চট্টগ্রাম চলে গেছেন। বৃদ্ধ বাবা ও ছোট ভাইবোনের খোঁজ-খবরও নেন না। এ অবস্থায় ছোট দুই ছেলে ও এক মেয়ে সন্তানকে নিয়ে তিনি একটি টিনশেডের মাটির ঘরে অতি কষ্টে বসবাস করে আসছিলেন।

পরিবারটিতে একমাত্র ইদ্রিস আলীই উপার্জনশীল ব্যক্তি। তার উপার্জনেই চলে সংসারের ভরণপোষণ। কিন্তু চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে হঠাৎ উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর ভারী বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় তার বসতঘরে পানি ঢুকে পড়ে। ঢলের স্রোতে ভেঙে পড়ে একমাত্র বসতঘরটি। ঘরের ভেতরে চাল-ডালসহ যা ছিল সব ভাসিয়ে নিয়ে যায় বানের পানি।

সেই থেকে দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে একটি ঝুপড়ি ঘরে রাত কাটাচ্ছেন ইদ্রিস আলী। মাথাগোঁজার ঠাঁই একমাত্র বসতঘরসহ সব হারিয়ে বর্তমানে নিঃস্ব অবস্থায় খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি। তার কষ্ট দেখার যেন কেউ নেই।

জানা গেছে, বসতভিটাটুকু ছাড়া তেমন কিছুই নেই ইদ্রিস আলীর। বন্যার কারণে কাজ বন্ধ। তাই চরম খাদ্য সংকটে ভুগছেন। এ ছাড়া ভেঙে যাওয়া ঘরটি মেরামত করা বা নতুন ঘর নির্মাণ করার মতো কোনও সামর্থ্য নেই তার। এ অবস্থায় তিনি তাকিয়ে আছেন সরকারি সহায়তার দিকে। স্থানীয় প্রশাসন কিংবা সরকারের সুদৃষ্টিই কেবল পারে অসহায় ইদ্রিস আলীর পরিবারকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে– এমনটাই বলছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

ইদ্রিস আলীর প্রতিবেশী আবুল খায়ের বলেন, ‘বর্তমানে ছেলেমেয়ে নিয়ে ইদ্রিস ভাই খুব কষ্টে আছেন। খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন। কেউ তাকে কোনও সাহায্য করেনি। বন্যা তাকে নিঃস্ব করে দিয়ে গেছে।’

ইদ্রিস আলীর ভাতিজা ওয়াজিদুর রহমান বলেন, ‘বন্যায় চাচার একমাত্র বসতঘরটি ভেঙে গেছে। তাদের এখন রাতে ঘুমানোর মতো জায়গা নেই। খাবারও নেই। আমার অসহায় চাচাকে একটা ঘর তৈরি করে দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই।’

ইদ্রিস আলীর শিশু ছেলে মারুফ হোসেন বলে, ‘আমরার ঘরডা ভাইঙ্গা গেছে। আমরার সব কিছু ঢলে (বন্যা) ভাসায়া নিছে। অহন আমরা থাকতাম পারতাছি না।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য আজিজুল হক বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে আমরা আমাদের সাধ্যমতো ইদ্রিস আলীর পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবো। তবে বিত্তশালীসহ স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারের প্রতি আমি আহ্বান জানাই, সবাই যেন তার পাশে দাঁড়ায়।’

এ বিষয়ে কথা হলে দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বন্যায় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। একই সঙ্গে কৃষি, মৎস্যসহ রাস্তাঘাট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করছি। তাদের প্রয়োজনীয় সরকারি সহায়তা প্রদান করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত ইদ্রিস আলীর বিষয়টি আমরা জেনেছি। তাকে সব ধরনের সরকারি সহযোগিতা করার চেষ্টা থাকবে আমাদের। আপাতত কিছু সরকারি ঢেউটিন ও নগদ টাকা দিয়ে আমরা তাকে তার ঘরটি নির্মাণের ব্যবস্থা করে দেওয়ার চেষ্টা করবো।’

Source link

Related posts

সাতকানিয়ায় নির্বাচনী সহিংসতায় অস্ত্রধারী ২ জন গ্রেপ্তার

News Desk

কুষ্টিয়ায় করোনায় ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৫ জনের মৃত্যু

News Desk

খায়রুজ্জামানকে হস্তান্তরে স্থগিতাদেশ মালয়েশিয়ার হাইকোর্টের

News Desk

Leave a Comment