Image default
খ্রিষ্টানধর্ম

প্রার্থনা বিষয়ে যীশুর শিক্ষা, ইতিহাস ও অনুশীলন

যীশুর প্রার্থনা, যা আমরা সাধারণত “প্রভুর প্রার্থনা” বা “অভিভাবক প্রার্থনা” হিসেবে জানি, খ্রিস্টীয় ধর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। এই প্রার্থনাটি যীশু খ্রীষ্ট কর্তৃক তাঁর শিষ্যদের শিক্ষা দেওয়া হয়েছিল, এবং এটি নতুন Testament এর ম্যাথিউ (৬:৯-১৩) ও লূক (১১:২-৪) গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে।

ইতিহাস

যীশুর প্রার্থনা খ্রিস্টীয় বিশ্বাসের শিকড়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি যীশুর সময়ের একটি ধর্মীয় ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে উদ্ভূত হয়েছিল, যেখানে ইস্রায়েলিরা রোমান শাসনের অধীনে ছিল এবং তাদের ধর্মীয় জীবন সংকটে পড়েছিল। যীশু তাঁর অনুসারীদেরকে এই প্রার্থনার মাধ্যমে ঈশ্বরের সাথে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করতে এবং তাঁদের দৈনন্দিন জীবনে সহায়তা প্রার্থনা করতে উৎসাহিত করেছিলেন।

এই প্রার্থনার মূল বিষয়বস্তু হলো ঈশ্বরের পিতৃত্ব, মানুষের দৈনন্দিন প্রয়োজন, এবং ঈশ্বরের রাজ্যের আগমন। এটি কেবল একটি প্রার্থনা নয়, বরং এটি খ্রিস্টীয় জীবনের একটি গাইডলাইন হিসেবে কাজ করে।

প্রার্থনার মূল বিষয়বস্তু

যীশুর প্রার্থনা প্রধানত সাতটি অংশে বিভক্ত:

1. পিতা আমাদের: এখানে ঈশ্বরকে “পিতা” হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে, যা আমাদের মধ্যে একটি পারিবারিক সম্পর্কের ইঙ্গিত দেয়।
2. তুমি আকাশে আছো: ঈশ্বরের মহিমান্বিত অবস্থান ও তাঁর সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি।
3. তোমার নাম পবিত্র হোক: ঈশ্বরের নামের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভক্তি প্রকাশ।
4. তোমার রাজ্য আসুক: ঈশ্বরের রাজ্য প্রতিষ্ঠার প্রার্থনা, যা পৃথিবীতে শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার প্রতীক।
5. তোমার ইচ্ছা হোক: ঈশ্বরের ইচ্ছা বাস্তবায়নের জন্য প্রার্থনা।
6. দৈনন্দিন রুটি দাও আমাদের: আমাদের দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটানোর জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা।
7. আমাদের অপরাধ আমাদের ক্ষমা করো: মানুষের প্রতি সহানুভূতি ও ক্ষমার আবেদনের প্রকাশ।
8. আমাদের পরীক্ষা দিও না: দুষ্টের প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রার্থনা।

ক্যাথলিক বিশ্বাস অনুযায়ী প্রভুর প্রার্থনা :(মথি ৬:৯-১৩ পদ)

হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতা ,
তোমার নাম পূজিত হোক,
তোমার রাজ্য প্রতিষ্ঠা হোক,
তোমার ইচ্ছা যেমন স্বর্গে তেমনি মর্ত্যেও পূর্ণ হোক।
আমাদের দৈনিক অন্ন অদ্য আমাদিগকে দাও।
আমরা যেমন অপরাধীকে ক্ষমা করি,
তেমনি তুমিও আমাদের অপরাধ ক্ষমা কর।
আমাদিগকে প্রলোভনে পড়িতে দিও না,
কিন্তু অনর্থ হইতে রক্ষা কর।
আমেন।

প্রোটেস্ট্যান্ট বিশ্বাস অনুযায়ী প্রভুর প্রার্থনা : (মথি ৬:৯-১৩ পদ)

হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতা ,
তোমার নাম পবিত্র বলিয়া মান্য হউক,
তোমার রাজ্য আইসুক,
তোমার ইচ্ছা সিদ্ধ হউক,
যেমন স্বর্গে তেমনি পৃথিবীতেও হউক;
আমাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য আজ আমাদিগকে দেও;
আর আমাদের অপরাধ সকল ক্ষমা কর,
যেমন আমরাও আপন আপন অপরাধীদিগকে ক্ষমা করিয়াছি;
আর আমাদিগকে পরীক্ষাতে আনিও না,
কিন্তু মন্দ হইতে রক্ষা কর।
কারণ রাজ্য, পরাক্রম ও মহিমা যুগে যুগে তোমার।
আমেন।

অনুশীলন

যীশুর প্রার্থনা কেবল এক ধরণের ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং এটি বিশ্বাসীদের জীবনে একটি মৌলিক ভূমিকা পালন করে। অনেক খ্রিস্টান নিয়মিতভাবে এই প্রার্থনা পড়েন এবং এটি তাঁদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে, খ্রিস্টীয় সাপ্তাহিক উপাসনার সময় এই প্রার্থনা উচ্চারণ করা হয়।

বিশেষ ধর্মীয় অনুষ্ঠান, যেমন ব্যাপটিজম, ক্রীস্টমাস, এবং ঈস্টারের সময়ও এই প্রার্থনা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। অনেক ধর্মীয় গোষ্ঠী যীশুর প্রার্থনাকে তাঁদের ধর্মীয় চর্চার কেন্দ্রে রাখে।

উপসংহার

যীশুর প্রার্থনা কেবল একটি প্রার্থনাই নয়, বরং এটি খ্রিস্টীয় বিশ্বাসের একটি মৌলিক অংশ। এটি আমাদের শেখায় কিভাবে ঈশ্বরের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে হয়, আমাদের প্রয়োজন মেটাতে হয় এবং অপরের প্রতি দয়া ও সহানুভূতি প্রদর্শন করতে হয়। এই প্রার্থনা আমাদের জীবনকে সঠিক পথে পরিচালনা করার জন্য একটি মানচিত্র হিসেবে কাজ করে, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রেরণা জোগায়।

Related posts

কাজা নামাজ কী? জানুন কাজা নামাজ আদায়ের সঠিক নিয়ম

লেমন কাওসার

সরস্বতী পূজার আগে কুল খাওয়া নিষিদ্ধ কেন?

Sanjibon Das

বৈবাহিক ধর্ষণ সম্পর্কে ইসলাম কি বলে? স্বামী কি স্ত্রীকে সহবাসে বাধ্য করতে পারে?

News Desk

Leave a Comment