Image default
লাইফ স্টাইলস্বাস্থ্য

৩০ পার হলেই শরীরের বাড়তি যত্ন নিন পুরুষেরা, কোন কোন অভ্যাস বদলাবেন, কী কী স্বাস্থ্য পরীক্ষা জরুরি?

বয়স ৩০ পার করার পর পুরুষদের শরীরের প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। কর্মজীবন ও পরিবারের দায়িত্বের চাপে নিজেদের স্বাস্থ্য অবহেলিত হয়ে পড়ে। কিন্তু এই সময় থেকেই হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবিটিস, কোলেস্টেরল এবং ইউরিক অ্যাসিডের মতো সমস্যা শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। তাই সময়মতো সঠিক পরীক্ষা ও অভ্যাসে পরিবর্তন এনে সুস্থ থাকা যায়।

কী ভাবে শরীরের যত্ন নেবেন?
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ অনির্বাণ দলুই জানাচ্ছেন, বয়স বাড়ার সঙ্গে শরীরে নানা পরিবর্তন আসে এবং নানা অসুখের আশঙ্কাও তৈরি হয়। তাই প্রতিনিয়ত শরীরের দিকে নজর দেওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি নিয়ম মেনে চলা জরুরি।

১) শারীরিক উপসর্গকে গুরুত্ব দিন ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
বুকের মধ্যে চিনচিনে ব্যথা, রাতে ঘাম হওয়া কিংবা বাতানুকূল ঘরে থেকেও ঘেমে যাওয়া এমন লক্ষণ দেখা দিলে তা হালকা গ্যাস্ট্রিক ভেবে উপেক্ষা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এগুলি হতে পারে হৃদরোগের প্রাথমিক লক্ষণ। এ ধরনের সমস্যা হলে দেরি না করে ডাক্তারের কাছে যান এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করান।

২) মানসিক চাপ কমানো
কর্মক্ষেত্রের প্রতিযোগিতা এবং পারিবারিক দায়িত্বে মানসিক চাপ বাড়ে। এই চাপ দিন দিন বেড়ে মানসিক রোগের কারণ হতে পারে। তাই মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করতে হবে। কাজের মাঝে বিরতি নেওয়া, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো এবং বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে মিশে মানসিক স্বস্তি আনা প্রয়োজন। পাশাপাশি প্রতিদিন ১৫ মিনিট ধ্যান এবং যোগাভ্যাস করা ভালো ফল দিতে পারে।

৩) ধূমপানের অভ্যাস পরিবর্তন
ধূমপানের অভ্যাস থাকলে সেটি এখনই পরিবর্তন করা অত্যন্ত জরুরি। ধূমপান শুধু ফুসফুসের ক্যানসার নয় বরং অন্যান্য হৃদরোগ এবং শ্বাসকষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ধূমপান ছাড়তে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন এবং প্রয়োজনীয় সাহায্য নিয়ে অভ্যাস পরিবর্তন করুন।

৪) নিয়মিত শরীরচর্চা
শরীর সুস্থ রাখতে প্রতিদিন ৩০ মিনিটের শরীরচর্চা বাধ্যতামূলক। কাজের ব্যস্ততার জন্য জিমে যাওয়ার সময় না পেলে সকালে হাঁটা, দৌড়ানো, সাইকেল চালানো, কিংবা সাঁতার কাটা, যেকোনো কিছু করলে উপকার পাওয়া যাবে। এতে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং মানসিক চাপ কমে।

৫) সুষম খাবারের অভ্যাস গড়ে তোলা
শরীরকে সুস্থ রাখতে সুষম খাদ্যাভ্যাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তেল, মশলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন এবং বেশি করে সবজি, ফল, এবং শাকসবজি রাখুন দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায়। প্রোটিনের জন্য মাছ, মুরগির মাংস বা ডাল গ্রহণ করতে পারেন। শরীরে পানির চাহিদা মেটাতে পর্যাপ্ত পানি পান করুন।

স্বাস্থ্য পরীক্ষার গুরুত্ব
বয়স ৪০ পার করলে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হৃদরোগ, ডায়াবিটিস, এবং প্রস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। কিছু নির্দিষ্ট পরীক্ষা এই বয়সে করানো আবশ্যক।

বার্ষিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা
বছরে একবার সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো জরুরি। এতে হার্টের অবস্থা, কিডনির কার্যক্ষমতা এবং অন্যান্য সমস্যার আগাম আভাস পাওয়া যায়। পুরুষদের জন্য যেসব পরীক্ষা জরুরি:

হার্টের পরীক্ষা: ECG এবং ইকোকার্ডিওগ্রাম করে হার্টের অবস্থা যাচাই করা।
ডায়াবিটিস পরীক্ষা: রক্তে গ্লুকোজ মাত্রা পরীক্ষা করে ডায়াবিটিস আছে কিনা নিশ্চিত হওয়া।
লিপিড প্রোফাইল: কোলেস্টেরলের মাত্রা, বিশেষ করে এলডিএল এবং এইচডিএল পরীক্ষা করা।
ইউরিক অ্যাসিড পরীক্ষা: ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়লে গাঁটে ব্যথার সমস্যা হতে পারে।
প্রস্টেট ক্যানসার পরীক্ষা: প্রস্টেট ক্যানসারের আশঙ্কা থাকলে প্রস্টেট বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে প্রস্টেট পরীক্ষা করানো।
থাইরয়েড টেস্ট: শরীরের মেটাবলিজম বজায় রাখতে এবং থাইরয়েডের সমস্যা নির্ণয় করতে থাইরয়েড টেস্ট জরুরি।
হরমোন পরীক্ষা: টেস্টোস্টেরনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় হরমোনের পরীক্ষা করা জরুরি।
সবশেষে
বয়স ৩০ পার হলে পুরুষদের শরীরের প্রতি মনোযোগ দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ছোটখাটো অভ্যাসের পরিবর্তন এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে সুস্থ জীবনযাপন সম্ভব।

Related posts

মাছের তেলের সম্পূরকগুলি গবেষণায় প্রথমবারের হৃদরোগের ঝুঁকির সাথে যুক্ত: ‘সর্বজনীনভাবে ভাল বা খারাপ নয়’

News Desk

তলপেটের মেদ দূর করবেন যেভাবে !!

News Desk

ChatGPT স্বাস্থ্য সংকটের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় একটি বিপজ্জনক ত্রুটি দেখায়, গবেষণায় দেখা গেছে

News Desk

Leave a Comment