বইঃ খেলারাম খেলে যা
লেখকঃ সৈয়দ শামসুল হক
প্রকাশনীঃ ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ
মুদ্রিত মূল্যঃ ৪০০
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ২১২
পার্সোনাল রেটিংঃ ৭/১০
চল্লিশোর্ধ্ব অবিবাহিত এক পুরুষ, যে সাংসারিক বন্ধনে আবদ্ধ হওয়াকে নিজের ইচ্ছের গলায় শিকল তুলে দেওয়া মনে করে। একে সন্তুষ্টি নেই যার প্রচলিত কথায় বহুগামী, এবং ষোড়শী কিংবা অষ্টাদশী বালিকারাই যার প্রথম পছন্দ। ভালোবাসার অভিনয় করে কিভাবে মেয়েদের মন জয় করতে হয় তা তার নখদর্পনে। তেমনই এক বালিকাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে তিন দিনের ট্যুরে নিয়ে যায় রংপুর, এবং প্রতিবারের মত এবারো তার অভীষ্ট সে লাভ করে। কিন্তু মেয়েটা তাকে ভালোবেসে ফেলে, ফেরার পথে সে অধিকার চাই, এবং এক পর্যায়ে অভিমান করে কাঁদতে কাঁদতে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে নির্জন মাঠে।
মধ্যবয়সী সেই পুরুষ গল্পে যার নাম ‘বাবর’ তাদের বাড়ি ছিলো বর্ধমান জেলায়, ৪৭ এর দেশভাগে সে হারায় তার পরিবার, আদরের একমাত্র ছোটবোনকে দাঙ্গাবাজদের কাছে ধর্ষিত হতে দেখেও সে প্রতিবাদ করতে পারেনি, তাকে ফেলে নিজের জীবন নিয়ে পালিয়ে আসে, আর তার কানে বাজতে থাকে বোন ‘হাসনু’র সেই শেষ ডাক “দা–দা”। সেই একই ঘটনার প্রতিফলন কি আবার ঘটবে তার অষ্টাদশী ভ্রমণসঙ্গী ” জাহেদা”র সাথে এই নির্জন মাঠে? এবার কি করবে বাবর? বাঁচাতে পারবে জাহেদাকে? নাকি তার প্রাপ্য সে পেয়ে গেছে, জাহেদা এখন শুধুই বাড়তি ঝামেলা ভেবে, একা ফেলে যাবে তাকে?সময় পেলে অবশ্যই একবার পড়ে দেখুন “খেলারাম খেলে যা”। হ্যাঁ, উপন্যাসটিতে প্রচুর অশ্লীল মন্তব্য আছে, অনেকে সফট পর্ণ ও বলবে হয়তো। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে যে গভীর মর্মার্থ তার জন্য উপন্যাসটিকে খারাপ বলা চলে না। বরং সব মেয়েদের পড়া উচিত, যে সমস্ত বিকৃত মনস্ক পুরুষ আছে তাদের স্বরূপ বা নমুনা যেন জানা থাকে সেজন্য।
ভালোলাগা কিছু লাইন-
“আমরা বাস করছি অতীত এবং ভবিষ্যতের মাঝখানে। যেখানে আগেও ছিলাম, এখনো আছি আর ভবিষ্যতেও থাকবো।”
“মৃত্যুর পরেও আমি বেঁচে থাকতে চাই না। আমার এমন কিছু সম্পদ নেই,অর্জন নেই,উপলব্ধি নেই যা যক্ষের মত আগলে রাখার স্পৃহা বোধ করি ভবিষ্যৎ বংশধরের জন্য। এ জীবন আমি চাইনি, অতএব কারো জীবনের কারণ ও আমি হতে চাই না।”
“বিয়ে করব ভালোবাসে? ভালোবাসা বলে কিছু নেই, ওটা একটা পন্থা, পন্থা কখনো লক্ষ্য হতে পারে না, নিবৃত্তি নেই তাতে। ভালোবাসা একটা অভিনয়ের নাম। ”
“স্বপ্ন হচ্ছে ভবিষ্যৎ। কিন্তু ভবিষ্যৎ আসলে বর্তমানেরই সম্প্রসারণ।”
“যা ভালো লাগে তা ধরে রাখা বোকামী, মানুষ ধরে রাখতে চায় বলেই দুঃখ পায়।”
সংগৃহীত: ফেসবুক ©Nibedita Biswas