হিমেল বাতাসের সঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, শীত বাড়ছে দিনাজপুরে
বাংলাদেশ

হিমেল বাতাসের সঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, শীত বাড়ছে দিনাজপুরে

দিনাজপুরে উত্তরের হিমেল বাতাস সক্রিয় হয়ে পড়েছে। ঘণ্টায় ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বইছে। সকাল থেকেই ওঠেনি সূর্য, সেই সঙ্গে পড়ছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। এতে করে রাস্তাঘাটে লোকজনের উপস্থিতি কমে গেছে। আগামী ২-৩ দিনে এই অঞ্চলের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে কমে যাবে। দিনের তাপমাত্রা ৫ থেকে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং রাতের তাপমাত্রা ২ থেকে ৩ ডিগ্রি কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা।

অবস্থানগত কারণে যেসব এলাকায় শীতের তীব্রতা বেশি এবং হিমালয় থেকে আসা হিমেল বাতাসের প্রভাব বেশি তার মধ্যে অন্যতম উত্তরের জেলা দিনাজপুর। গত কয়েকদিন ধরে এই জেলায় হিমেল বাতাসের প্রভাব না থাকলেও মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) বিকাল থেকেই বইছে হিমেল বাতাস। যদিও তাপমাত্রা তেমন একটা কমেনি। তবে আবহাওয়া অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘এই বাতাসের গতিবেগ বাড়ায় কমবে তাপমাত্রা।’

দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন জানান, বুধবার (৮ জানুয়ারি) সকাল ৬টায় এই জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৫ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ৮৯ শতাংশ এবং বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২ কিলোমিটার।

তবে সকাল ৯টায় চূড়ান্ত তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। যেখানে তাপমাত্রা একই থাকলেও বাতাসের গতিবেগ বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করা হয়। সকাল ৯টায় বাতাসের গতিবেগ ছিল ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে। এতে করে দিনের তাপমাত্রা ৫ থেকে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে যেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রাও ২ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এর আগে, মঙ্গলবার এই জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় এক কিলোমিটার। সোমবার এই জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৩ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদফতরের এই কর্মকর্তা জানান, গত কয়েকদিন ধরেই হিমালয়ের সম্মুখে একটি ঘূর্ণায়মান অর্থাৎ বৃহৎ আকারের জলীয় বাষ্পের বলয় বিরাজ করছে। যেটি একটি প্রাচীরের মতো কাজ করছে এবং উত্তরের হিমেল বাতাসকে আটক দিয়েছে। ফলে গত কয়েকদিন ধরেই এই এলাকার ওপর দিয়ে হিমেল বাতাস বয়নি। এতে করে শীতের তীব্রতা কমেছিল, বেড়েছিল তাপমাত্রা। তবে হিমালয়ের কাছে থাকা জলীয় বাষ্পের বলয়টি দ্রুত গতিতে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে সরে যাওয়ার কারণে উত্তরের জেলাগুলোতে বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকায় বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে এবং বুধবার দিবাগত রাত থেকেই তাপমাত্রা দ্রুত হ্রাস পেতে পারে। ফলে ৯ বা ১০ তারিখ থেকে কিছু কিছু স্থানে শৈত্যপ্রবাহ বিরাজ করতে পারে, যেটি পরবর্তীতে আরও বিস্তার লাভ করতে পারে।

আবহাওয়াবিদ তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘উত্তরের হিমেল বাতাস সক্রিয় হয়ে পড়েছে এবং বাতাসের গতিবেগ বেড়ে গেছে। এটা ২ থেকে ৩ দিন অব্যাহত থাকবে, তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে কমবে।’

এদিকে, হিমেল বাতাসের পাশাপাশি বুধবার সকাল থেকে দেখা যায়নি সূর্যের মুখ। ঘন কুয়াশার প্রভাব তেমন একটা না থাকলেও কুয়াশার প্রভাব রয়েছে। একই সঙ্গে আকাশে মেঘও দেখা যাচ্ছে। বেলা পৌনে ১২টা থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়তে শুরু করে। এতে করে মানুষজনের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্যতা কমেছে। রাস্তাঘাটে লোকজনের উপস্থিতি কম, আর যারা বের হয়েছেন তাদের দুপুরেও গরম কাপড় পরিধান করে চলাচল করতে দেখা গেছে।

কালিতলা এলাকার অটোরিকশাচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সকাল থেকেই বাতাস বইছে। সকালে যেমন গতি ছিল এখন গতি তার চেয়ে বেশি। ফলে রাস্তাঘাটে লোকজন কম, এজন্য খুব একটা ভাড়া হয়নি। আর হাত-পায়ে ঠান্ডাও লাগছে। দুপুরের পর বাড়ি চলে যাবো। শুধু শুধু এই শীতে কষ্ট করে লাভ কী, উপার্জন তো হচ্ছে না।’

গণেশতলা এলাকায় কথা হয় অটোরিকশাচালক ফিরোজের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার কিছু ভাড়া আছে চুক্তিভিত্তিক। প্রতিদিন সকাল হলে সেই সব ভাড়ার যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে বাকি সময়টুকু রাস্তাঘাটে ভাড়ায় যাত্রী বহন করি। কিন্তু আজকে যে অবস্থা, চুক্তির ভাড়াগুলো নিয়ে এসেছি। আর কাজ করা যাবে বলে মনে হচ্ছে না। যে ঠান্ডা পড়েছে, এতে করে চলাচল করা মুশকিল। বিশেষ করে বাতাস কাবু করে দিয়েছে আমাকে।’

জেলা সদরের খামারকান্তবাগ এলাকার কৃষক সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যে ঠান্ডা পড়েছে। লোকজন কাজে আসতে চাইছে না। আমার বোরো ধানের বীজতলার চারা অনেকটা বড় হয়েছে। এখন জমি তৈরি করতে হবে। কয়েকদিন ধরেই লোক খুঁজতেছি। কিন্তু পানির মধ্যে কাজ করতে হবে এজন্য তারা আসতে চাইছে না। চুক্তিভিত্তিক টাকা চায়, যেটা করলে আমাদের ক্ষতি।’

সদরের রাজারামপুর এলাকার নয়ন ইসলাম বলেন, ‘সকাল থেকে তো সূর্য ওঠেনি। আবার প্রচণ্ড বাতাস। দুপুর থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে। এজন্য মানুষের কষ্ট বাড়ছে। শীতের সময় বৃষ্টি, যদি বেশি হয় তাহলে তো আরও সমস্যা হবে।’

Source link

Related posts

কর কমবে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ পণ্যে

News Desk

শতাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে শিমুলিয়া ছেড়ে গেলো ফেরি

News Desk

‘শীতজনিত রোগে’ বরিশালে ৫ শিশুর মৃত্যু, হাসপাতালে দেড় শতাধিক

News Desk

Leave a Comment