করোনাভাইরাসের টিকার মেধাস্বত্ব উন্মুক্ত করার বিষয়ে পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিল যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি। যুক্তরাষ্ট্র এ টিকার মেধাস্বত্ব ছাড় দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে (ডব্লিউটিও) জানিয়ে ছিল। কিন্তু জার্মানি জানিয়েছে, এ মেধাস্বত্ব থাকতে হবে। খবর বিবিসির।
জার্মান সরকার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, মেধাস্বত্ব রক্ষা করা উদ্ভাবনের উৎস এবং এ মেধাস্বত্ব অবশ্যই সংরক্ষণ করতে হবে। জার্মানির এ অবস্থান টিকা সহজলভ্য করার যে প্রক্রিয়া, তা কঠিন করে ফেলছে। কারণ, দেশটির টিকা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান বায়োএনটেক ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান ফাইজারের টিকা বিশ্বজুড়েই ব্যবহৃত হচ্ছে।
শুধু যুক্তরাষ্ট্র যে করোনা টিকার এ মেধাস্বত্বকে সাময়িক ছাড় দিতে সম্মত হয়েছে, বিষয়টা এমন নয়। মেধাস্বত্ব ছাড় দেওয়ার জন্য আরও অনেক দেশই প্রস্তুত। এ প্রসঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) আগেই বলেছিল, তারা মেধাস্বত্বের ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার জন্য প্রস্তুত। এ ছাড়া ইইউর বেশ কয়েকটি দেশ মেধাস্বত্ব ছাড় দেওয়ার প্রস্তাবকে সমর্থনও দিচ্ছে। এ সমর্থক দেশগুলোর বক্তব্য হলো, মেধাস্বত্বে ছাড় দেওয়া হলে জীবনরক্ষাকারী এই করোনা টিকাগুলো অনেক প্রতিষ্ঠানই তৈরি করতে পারবে। ফলে অনেক গরিব দেশের জন্য এ টিকা পাওয়া সহজ হবে।
তবে মেধাস্বত্ব ছাড় দেওয়ার বিরোধীরা বলছে, টিকা সহজলভ্য করার লক্ষ্যে এ উদ্যোগ সফল না–ও হতে পারে। এই বিরোধিতাকারীদের মধ্যে ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।
মেধাস্বত্ব ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব ডব্লিউটিওতে প্রথম উত্থাপন করেছিল ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপর থেকে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে দেনদরবার করছে সংস্থাটি।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে এ প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছিল। তখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলো করোনার টিকার মেধাস্বত্ব গরিব দেশগুলোর সঙ্গে ভাগ করে নিতে নারাজ ছিল।
কিন্তু সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ওপর এ ব্যাপারে চাপ বাড়ছিল। এরপর গত বুধবার ডব্লিউটিওতে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি ক্যাথেরিন বলেন, করোনা মহামারি বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে টিকার মেধাস্বত্ব উন্মুক্ত করার বৈশ্বিক আহ্বানকে ওয়াশিংটন এখন সমর্থন করছে। করোনা মহামারির অস্বাভাবিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এটা অসাধারণ একটি উদ্যোগ।
ডব্লিউটিওর মহাপরিচালক এনগোজি ওকোনজো-ইওয়েলা যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বিবিসিকে বলেন, সমঝোতার মাধ্যমে সদস্যদেশগুলোর একটি বাস্তববাদী সমাধানে পৌঁছানো উচিত। টিকা তৈরির ক্ষেত্রে বর্তমানে যে অসমতা রয়েছে, তা ঠিক নয়।
মার্কিন প্রশাসনের এমন নীতিগত অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। একটি ভার্চ্যুয়াল সম্মেলনে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লায়েন বলেন, করোনার টিকার মেধাস্বত্ব উন্মুক্ত করতে মার্কিন–সমর্থিত প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় প্রস্তুত রয়েছে ইউরোপ।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে করোনা টিকার প্রধান রপ্তানিকারক ইউরোপ। ইউরোপের দেশগুলোয় উৎপাদিত হওয়া ২০ কোটি ডোজের বেশি টিকা রপ্তানি করা হয়েছে। নিজস্ব প্রয়োজনের চেয়ে বেশি টিকা রপ্তানি করেছে ইউরোপ। টিকার বৈশ্বিক উৎপাদন বাড়ানোর পক্ষে আমরা।’
ডব্লিউএইচওর প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস মার্কিন প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এটা এক স্মরণীয় মুহূর্ত।
তবে জার্মানি এতে ছাড় দিতে রাজি নয়। তারা এ জন্য বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করেছে। মেধাস্বত্বে ছাড় দিলে টিকার মান নিয়ন্ত্রণও সহজ হবে না বলে মন্তব্য করেছে দেশটি।