Image default
বাংলাদেশ

জুনে স্কুল-কলেজ খুলতে চায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক এবং সমমানের পরীক্ষায় কোনো ধরনের অটোপ্রমোশন দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন শিক্ষা বোর্ড কর্মকর্তারা। বছরের বাকি সময়ের মধ্যেই এসব পাবলিক পরীক্ষা নেওয়ার চিন্তা শিক্ষা বোর্ডগুলোর। করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে সরকার।

গেল বছর করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ বন্ধের কারণে এইচএসসি ও সমমানের শিক্ষার্থীদের বিশেষ পদ্ধতি, অর্থাৎ তাদের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) এবং সমমানের পরীক্ষার ফলের ওপর মূল্যায়ন করে উচ্চ মাধ্যমিকের ফল নির্ধারণ করা হয়। এ ছাড়া, প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত বাকি শ্রেণিগুলোয় দেওয়া হয় অটো প্রমোশন। একই পদ্ধতিতে এ বছর যেতে চাচ্ছে না শিক্ষা বোর্ডগুলো।

এ বছরের এসএসসি ও এইচএসসি এবং সমমানের পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর নেহাল আহমেদ আমাদের সময়কে জানান, সরকারের সিদ্ধান্ত এ বছর এসএসসি ও এইচএসসি এবং সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষা না নিয়ে গ্রেড পয়েন্ট দেওয়ার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, গত বছর বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা গ্রহণ না করে তাদের পূর্ববর্তী দুটি পাবলিক পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এতে করে শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম।

কয়েক বছর ধরে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা ১ ফেব্রুয়ারি এবং এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা সাধারণত ১ এপ্রিল শুরু করে সরকার। পরীক্ষা শেষ করে ৬০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশ করে আসছে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে অতীতের সব শিক্ষাপঞ্জি এলোমেলো হয়ে যায়।

প্রফেসর নেহাল আহমেদ বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতির পরে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব। আমরা এখন করোনা ভাইরাসে সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর প্রথমে শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু করব, এরপর পরীক্ষা নেওয়া হবে। তবে আমাদের কিছু দিন অপেক্ষা করতে হতে পারে। বিদ্যমান করোনা ভাইরাসে সংক্রমণ পরিস্থিতি, সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে ক্লাস শুরু না করা, পরীক্ষার সময় অতিবাহিত হওয়ায় দুটি পাবলিক পরীক্ষার লাখ লাখ শিক্ষার্থী এখন উদ্বিগ্ন। তারা জানে না কবে কখন কী প্রক্রিয়ায় তারা পরীক্ষায় বসতে পারবে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে গত বছর মার্চ মাসে সরকার সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে। অনলাইন ক্লাস চালু করে। তবে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসের বাইরে থেকে গেছে। শিক্ষার্থীরা এক বছরের বেশি সময় ধরে স্বাভাবিক ক্লাস, পরীক্ষার বাইরে।

রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এ বছর এইচএসসি পরীক্ষার্থী সুমাইয়া তাবাসসুম জানান, পরীক্ষা নিয়ে অনেক অনিশ্চয়তায় আছি। এ নিয়ে মানসিক চাপে আছি। পরীক্ষার জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেও এখন পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছি না। নতুন করে সরকার ক্লাস নিয়ে পরীক্ষার আয়োজন করলে আমরা উপকৃত হব। চাঁদপুরের একটি বেসরকারি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. বিল্লাহ হোসেন জানান, সরকার নতুন করে যে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করেছে, তা আমি বুঝতে পারছি না। এখন কলেজ বন্ধ থাকায় আমরা শিক্ষকের কাছেও যোগাযোগ করতে পারছি না। পরীক্ষা শুরুর আগে কয়েকদিন ক্লাস নিয়ে পরীক্ষা না নিলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হব।

ডিজিটাল ডিভাইস এবং উচ্চমূল্যের ইন্টারনেট প্যাকেজের অভাবে অনলাইন ক্লাসে অংশ নেননি কুড়িগ্রাম জেলার এসএসসি পরীক্ষার্থী রাহাত হোসেন। তিনি এখন তার স্কুল পুনরায় চালু হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। তিনি বলেন, আমি সিলেবাসটি দেখছি, তবে তা বুঝতে পারছি না। স্কুল পুনরায় চালু হওয়ার পর আমাকে শিক্ষকদের কাছে যেতে হবে। আমি আরও পড়াশোনা না করে পরীক্ষায় বসতে পারব না।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, এ বছর প্রায় ২২ লাখ এসএসসি ও সমমানের শিক্ষার্থী এবং ১৫ লাখ এইচএসসি ও সমমানের শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতি : সরকার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চলমান বন্ধ ২৯ মে পর্যন্ত বাড়িয়েছে। এসএসসি শিক্ষার্থীদের অবশ্যই ৬০ দিনের ক্লাস অনুষ্ঠিত হবে এবং সংক্ষিপ্ত পাঠ্যক্রমটি শেষ করার পরে পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য আরও ১৫ দিন সময় দেওয়া হবে। এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক আমাদের সময়কে জানান, পরীক্ষা না দিয়ে এসএসসি ও এইচএসসির ফল প্রস্তুত করার কোনো সুযোগ নেই। ‘আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য সংক্ষিপ্ত পাঠক্রমটি সরবরাহ করেছি এবং স্কুল ও কলেজ পুনরায় চালুর পরে এসএসসি এবং এইচএসসি শিক্ষার্থীদের জন্য যথাক্রমে ৬০ এবং ৮০ দিন ক্লাস নেব।’

কখন স্কুল এবং কলেজগুলো আবার কবে চালু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি কোভিড-১৯ মহামারীর উন্নতির ওপর নির্ভরশীল। এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষা কবে : পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে পাঁচ দিনের ক্লাসে অংশ নেবে এবং দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণি সপ্তাহে ছয় দিন চলবে। অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীরা প্রতি সপ্তাহে একদিন স্কুলে ক্লাস করবে। স্কুলগুলোয় মাসে ২০ দিন ক্লাস নেওয়া এবং এসএসসি শিক্ষার্থীদের সাড়ে তিন মাস এবং এইচএসসি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে সাড়ে চার মাসের প্রয়োজন। ২৯ মের পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় চালু হলে এসএসসি পরীক্ষা ১৫ সেপ্টেম্বর এবং এইচএসসি ১৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে পারে।

মহামারী সংক্রমণ পরিস্থিতি সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ও বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট প্রফেসর ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে না আসা পর্যন্ত সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আর খুলতে পারবে না। তিনি বলেন, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশজুড়ে চলাফেরা করার কারণে ৩০ মে পর্যন্ত নতুন সংক্রমণের হার দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আমরা যদি দেশে আরও বেশি ভারতীয় ভাইরাসের ধরন খুঁজে পাই, তবে সংক্রমণের হারও বাড়তে পারে।

করোনা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার স্বার্থে সরকার গত বছরের ১৭ মার্চ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কোচিং সেন্টার ৩১ মার্চ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। বন্ধটি পরে বেশ কয়েকবার বাড়ানো হয়েছে। মহামারীর কারণে গত বছর সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয় সমাপনী (পিইসি), জেএসসি এবং তাদের সমমানের পরীক্ষা হয়নি। প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষার স্তর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থী সারাদেশে প্রায় ২ লাখ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি রয়েছে। জুনে স্কুল-কলেজ খুলতে চায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়

জুন মাস থেকে স্কুল-কলেজ খোলার চূড়ান্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে চায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। করোনা ভাইরাস মহামারী মোকাবিলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ পর্যন্ত কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে তথ্য চেয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) চিঠি দিয়েছে মন্ত্রণালয়। গতকাল মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ ইছমত উল্লাহ স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ তথ্য চাওয়া হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গ্রহণ করা সব কার্যক্রমের সর্বশেষ অগ্রগতি সংক্রান্ত তথ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়েছে। মঙ্গলবারের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সমন্বয় শাখায় মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত মেইলে এ তথ্য পাঠানোর নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।

মাউশির পরিচালক (বিদ্যালয়) অধ্যাপক বেলাল হোসাইন বলেন, আগামী ২৯ মে পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে নতুন করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাজ শুরু করতে নির্দেশ দেওয়া হবে।

Related posts

প্রস্তুত বলী খেলার মঞ্চ, বসেছে মেলা

News Desk

করোনায় ৮৪ শতাংশ মারা গেছেন ৪১-৮০ বছর বয়সী মানুষ

News Desk

বাজেট অধিবেশন শুরু

News Desk

Leave a Comment