Image default
বাংলাদেশ

খুলনা বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৮৫ চীনা নাগরিক করোনা শনাক্ত

খুলনার খালিশপুর ৩৩০ মেগাওয়াট ডুয়েল ফুয়েল কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্টে কর্মরত ৮৫ জন চীনা নাগরিক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। করোনা শনাক্ত হওয়া চীনা নাগরিকদের মধ্যে ইতিমধ্যে ১৯ জন নেগেটিভ হয়েছেন। কিন্তু এখনও ৬৬ জন আক্রান্ত রোগী আছে। ওই প্লান্টে ১৮৫ জন চীনা নাগরিক কর্মরত রয়েছেন।

বিষয়টি তদন্তে গতকাল বৃহস্পতিবার (২০ মে) রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইডিসিআর) খুলনা বিভাগীয় কো-অর্ডিনেটর প্রজেক্ট পরিদর্শন করেছেন।

এ বিষয়ে আইইডিসিআর এর খুলনা বিভাগীয় কো-অর্ডিনেটর ডা. হাসনাইন শেখ বলেন, ‘বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আমি প্রজেক্টে পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। এখানকার চাইনিজ কমিউনিটিতে ঢুকতে দেওয়া হয় না। যা কথা বলার তা ফোনেই বলতে হয়েছে। আক্রান্তদের শরীরে কোন লক্ষণ নেই। তাদের সকলের করোনার টিকা দেওয়া আছে।’

তাদের নিজস্ব চিকিৎসকও রয়েছে। তবে আক্রান্ত চাইনিজরা কাজে অংশ নিচ্ছেন কী না বিষয়টি যাচাই করা সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি।

অভিযোগ উঠছে করোনা আক্রান্ত চীনা নাগরিকরা হোম কোয়ারেন্টিন মানছে না। তারা বাইরে ঘোরাফেরা ও স্থানীয় বাজারে গিয়ে কেনাকাটা করছেন। এতে এই প্রজেক্টে কর্মরত সকলের মাঝে যেমন করোনা ছড়িয়ে পড়তে পারে। তেমনি শ্রমিকদের মাধ্যমে খালিশপুরসহ আশপাশ এলাকায় সংক্রমণ বাড়তে পারে। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে খালিশপুরে সাবেক খুলনা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৩৩০ মেগাওয়াট ডুয়েল ফুয়েল কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্টে প্রায় ১৮৫ জন চীনা নাগরিক কাজ করছেন। এই প্রজেক্টে দৈনিক ভিত্তিতে আরও ৫০০-৬০০ শ্রমিক কাজ করেন। এছাড়াও প্রতিদিন সহস্রাধিক শ্রমিক প্রতিদিন এই প্রজেক্টে অস্থায়ীভাবে বিভিন্ন কাজে যাতায়াত করেন। গেল এক মাসে এখানে মোট ৮৫ জন চীনা নাগরিকের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

প্লান্টটিতে কর্মরত শ্রমিক ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘আমরা শুনেছি প্রজেক্টে চীনা নাগরিকদের মাঝে করোনা সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। এতে আমরা উদ্বিগ্ন। কিন্তু আমাদের উপায় নেই পেটের দায়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছি। প্রতিদিনই তাদের সাথে আমাদের কাজ করতে হচ্ছে। এরমধ্যে কার করোনা হয়েছে আর কার হয়নি এটা বোঝার উপায় নেই।’

বারেক হোসেন নামে স্থানীয় একজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, আমরা প্রতিদিনই চাইনিজদের ঘোরাফেরা করতে দেখি। এমনকি তারা অনেক কিছু কেনাকাটা করতে আসেন। এতে আমরা ভয়ে থাকি। করোনা সংক্রমণ নিয়ে কেউ যদি বাহিরে আসে সেটা আমাদের বোঝার উপায় নেই। বিষয়টি জেলা প্রশাসনের দেখা উচিত।

পাওয়ার প্লান্টের ডেপুটি প্রজেক্ট ডিরেক্টর মো. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘গত এক মাসে (১৮ এপ্রিল থেকে ১৮মে) প্রজেক্টে কর্মরত ৮৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ১৯ জনের ইতিমধ্যে করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট এসেছে। এখনও ৬৬ জন আক্রান্ত রোগী আছে। আক্রান্তরা নিজস্ব হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন। তারা বিদেশি নাগরিক তাই এমনিতে তারা মানুষের সাথে তেমন মেলামেশা করেন না।’

আক্রান্ত কেউ কাজে অংশ নেয়নি। তারা ইতিমধ্যে সকলেই করোনা টিকা নিয়েছেন বলেন তিনি।

খুলনার সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, ‘খালিশপুরে বিদ্যুৎ প্রজেক্টে কর্মরত করোনা আক্রান্ত চীনা নাগরিকরা হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন। এত সংখ্যক চীনা কেন করোনা আক্রান্ত হলো বিষয়টি দেখার জন্য আইইডিসিআর’র খুলনা বিভাগীয় কো-অর্ডিনেটর তদন্তের জন্য সেখানে গিয়েছেন। তিনিই বিষয়টি ভালো বলতে পারবেন।’

খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, ‘আমরা বিষয়টি জেনেছি। আক্রান্তদের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চত করতে একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’

তাদের সকলের করোনা নেগেটিভ না আসা পর্যন্ত তারা কোনভাবেই বাইরে বের হতে পারবেন না বলে জানান তিনি।

Related posts

নায়িকার ড্রাইভার যেভাবে প্রধানমন্ত্রীর পিয়ন, গড়েছেন সম্পদের পাহাড়

News Desk

১৪ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের পরও মিলছে না সুফল

News Desk

মায়ের প্রতি সন্তানের অকৃত্রিম ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি

News Desk

Leave a Comment