অতীতে ঈদের ছুটির পর প্রায় পনের দিন বন্দরের অপেক্ষমান জাহাজের তালিকা দীর্ঘ হওয়া ও কনটেইনারের চাপ বৃদ্ধি হওয়ার অভিজ্ঞতা থাকলেও এবারের চিত্র ভিন্ন। ঈদের আগে থেকেই বন্দরের অভ্যন্তরে থাকা পণ্য দ্রুত ডেলিভারি নিতে গৃহীত পদক্ষেপ ও বার বার তাগাদা দেওয়া এবং ঈদের বন্ধেও কার্যক্রম চালু রাখার সুফল মিলছে চট্টগ্রাম বন্দরে। ফলে দৃশ্যত কোন জাহাজ জট ও কনটেইনারের অতিরিক্ত চাপ এবার লক্ষ্য করা যায়নি।
এ প্রসঙ্গে বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী এবারই প্রথম ঈদের দিনও বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু ছিল। শুধুমাত্র ঈদের নামাজ ও যাতায়াতের কথা মাথায় রেখে ঈদের দিন ৮ ঘণ্টা বন্ধ ছিল। কিন্তু তাতেও বন্দরে ঈদের দিন ১১শ এর বেশি রপ্তানি কনটেইনার জাহাজীকরণ করা হয়। এছাড়া ডেলিভারির জন্যও ওয়ান স্টপ সার্ভিসে সব ধরনের ব্যবস্থা রাখা হয়। আগাম সব প্রস্তুতির জন্য এবার ঈদ ও তৎপরবর্তী সময়ে বন্দরের কার্যক্রম অন্যান্য বারের চেয়ে অনেক বেশি সাবলীল রয়েছে। ছুটির মধ্যে বন্দর খোলা রাখায় সুফল মিলছে।
অন্যদিকে বন্দরের সাথে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি অফডকগুলো খোলা রাখায় আনা নেওয়া হয়েছে আমদানি ও রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার। এমনকি এই প্রথম ঈদের দিন রপ্তানি কনটেইনার জাহাজে তোলার মাধ্যমে নতুন রেকর্ড গড়েছে বন্দর। ঈদের দিন রপ্তানি হয়েছে ১১শ টিইইউসের বেশি কনটেইনার। কিন্তু সব ধরনের ব্যবস্থা থাকলেও ঈদের দিন ও পরদিন পণ্য ডেলিভারি নিতে আসেনি কোন আমদানিকারক বা তাদের প্রতিনিধিগণ।
এদিকে ঈদের দিন থেকেই যথারীতি খোলা রাখা হয় বেসরকারি অফডকগুলো। ঈদের আগের দিন অফডক থেকে ১ হজার ৭৯৬ টিইইউস কনটেইনার রপ্তানি পণ্য নিয়ে জাহাজের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রবেশ করে। এমনকি ঈদের দিন বিকেল ৪টায় কার্যক্রম শুরু হলেও সেদিনও ৮৭৮ টিইইউস কনটেইনার রপ্তানি পণ্য নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে যায়। এছাড়া ঈদের পরদিন যায় ৬৮২ টিইইউস রপ্তানি কনটেইনার। অন্যদিকে ঈদের পরদিন অফডক থেকে মাত্র ১৮ টিইইউস কনটেইনার পণ্য খালাস হলেও বন্দর থেকে দুই দিন কোন পণ্য খালাস নিতে আসেনি কোন আমাদানিকারক বা তাদের প্রতিনিধিগণ।
বন্দরের ওয়ানস্টপ সার্ভিসে ব্যাংকের বুথ, বন্দর ও অফডকগুলো খোলা রাখার পরেও পণ্য ডেলিভারি নেন নি আমদানিকারকগণ। এ প্রসঙ্গে বেসরকারি অফডকগুলোর সংগঠন বিকডা’র সভাপতি নুরুল কাইয়ূম খান বলেন, বন্দরের সাথে মিল রেখে এবার বেসরকারি অফডকগুলো খোলা রাখা হয়েছে। ঈদের দিন ৪টায় অফডকের কার্যক্রম শুরু হলেও সেদিনই ৮৭৮ টিইইউস রপ্তানি কনটেইনার জাহাজে তোলা হয়েছে। তবে আমদানিকারদের ঈদের ছুটিতে পণ্য ডেলিভারি নিতে অনিহা দেখা গেছে। এতে ঈদের ছুটিতে বন্দর খোলা রাখার যে কাক্সিক্ষত সুফল পাওয়ার কথা তা পুরোপুরি আসেনি। তবে আমাদের অফডকগুলোর কার্যক্রম আমরা চালু রেখেছি। বন্দরের ভেতর থেকে যেসব কনটেইনার অফডকে আনার অপেক্ষায় ছিল সেগুলো আনা হয়েছে। এছাড়া পূর্বেই যেসব রপ্তানি কনটেইনারের শুল্কায়ন সম্পন্ন করা হয়েছিল সেগুলো নিয়মিত জাহাজে তোলা হয়।
উল্লেখ্য, বন্দর কাস্টমসসহ পণ্য ডেলিভারির সব ব্যবস্থা পুরোপুরি চালু থাকলেও স্লো গতিতে পণ্য ডেলিভারি নিচ্ছেন আমদানিকারকেরা। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্দরের অভ্যন্তরে এফসিএল (ফুল কনটেইনার লোডেড) কনটেইনার ছিল ৩৪ হাজার ৪৮ টিইইউস। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ হিমায়িত পণ্যগুলো দ্রুত খালাস নিতে সংশ্লিষ্টদের তাগাদা দিচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর। বিশেষ করে সপ্তাহের অন্যান্য দিনের ন্যায় শুক্র, শনি ও রবিবার স্বাভাবিক সময়ের মত ডেলিভারি নিতে উৎসাহী করছে বন্দর।