পটুয়াখালীর বাউফলে সেই সুধির নট্রর বিরুদ্ধে এবার থানায় অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। উপজেলার দাশপাড়া গ্রামের শিব রতন নামের এক ব্যক্তি রবিবার দুপুরে সুধির নট্রর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ দাখিল করেন। (অভিযোগ নম্বর ১৪৬৪ তারিখ ২৩ মে ২০২১ইং) বাউফল থানার ওসি অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা স্বীকার করেছেন।
এর আগের দিন (২২মে) শিব রতন সুধির নট্রর অত্যাচার ও নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পেতে বাউফল প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। ওই সংবাদিক সম্মেলনে শিব রতন সুধিরের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম ভাঙিয়ে কোটি টাকা মালিক হয়ে বনে যাওয়াসহ নানা অভিযোগ করেন।
শিব রতন অভিযোগ করেন, শনিবার (২২ মে) সুধির নট্রর বিরুদ্ধে বাউফল প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করায় তিনি ক্ষুব্ধ হন এবং তাকে দেখিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। এ ছাড়াও তার মোবাইল নম্বরে বিভিন্ন নম্বর থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা কল করে তাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়। সুধির নট্র নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে পরিচয় দেয়ায় এলাকার লোকজন ভয়ে কিছু বলতে সাহস পাননা। সুধির নট্রর বাবার নাম মৃত সুখ রঞ্জন নট্র।
এর আগে সাংবাদিক সম্মেলনে শিব রতন উল্লেখ করেন, সুধির নট্রর গ্রামের বাড়ি দাশপাড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে হলেও তিনি পৌর শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি সুরম্য বাড়িতে স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন। সুধির নট্রর বাবা সুখরঞ্জন নট্র এক সময় দিনমজুর ছিলেন। শাপলা বিক্রি করে সংসার চালাতেন। আর সুধির নট্র বাউফল পৌর শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বাবু সত্যরঞ্জন সাহার বাসায় কাজ করতেন এবং সত্যরঞ্জন সাহার বৈশাখী সিনেমা হলের মাইক প্রচার করতেন। এক সময় সুধীর নট্র সত্যরঞ্জন সাহাকে বিতারিত করে ওই সিনেমা হলটি নিজের কব্জায় নিয়ে নেয়। তার ছোট ভাই সুশিল নট্র সত্যরঞ্জন সাহার নুরিয়া মার্কেটের জুয়েলারি’র দোকানের কর্মচারী ছিলেন। পরবর্তীতে সুধির জুয়েলারি দোকনটিও তার কব্জায় নিয়ে নেয়। আর এ সবই সুধির করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম ভাঙিয়ে তাঁর ছেলে পরিচয়ে। তাই এলাকার লোকজন তাকে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে হিসাবেই জানে।
সুধির নট্র তার স্ত্রী সুমা রানীকে গ্রামের একটি প্রাইমারী স্কুল থেকে সম্পূর্ণ বিধিবর্হিভূত পৌরশহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের নূরিয়া সরকারি প্রাইমারী স্কুলে বদলী করে আনেন। সেখানে কিছুদিন চাকুরী করার পর সব বিধি লঙ্ঘন করে আবার তার স্ত্রীকে পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্রে বাউফল আদর্শ সরকারী প্রাইমারী স্কুলে বদলি করে আনেন। প্রধানমন্ত্রীর ছেলের পরিচয়ে প্রভাব দেখিয়ে এসব করেছেন। আর এই কারণেই কেউ তাকে কিছু বলতে সাহস পায় না।
সুধীর নট্রর সাথে ১০-১২ বছর আগে ঘটনা চক্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ হয়। এরপর থেকেই নিজেকে সুধির নট্র প্রধানমন্ত্রীর ছেলে পরিচয় প্রতিষ্ঠিত করেন। বেশ কয়েকবার প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করেন। তার সাথে ছবি তোলেন। আর সেই ছবি সুধির তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় টাঙিয়ে রাখেন। এমনকি সুিধর নন্দী নামে তার ফেসবুক প্রোফাইলে ওই ছবি ব্যবহার করে প্রভাব বিস্তার করতে থাকেন এবং তাঁর নাম ভাঙিয়ে রাতারাতি কোটিপতি হয়ে বনে যান। তার স্ত্রী সুমা রানী সম্পূর্ণ বিধি বর্হিভূতভাবে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে পরিচয়ে নাম ভাঙিয়ে তার স্ত্রীকে ওই স্কুল থেকে পৌরশহরের ৪নং ওয়ার্ডের নূরিয়া সরকারি প্রাইমারী স্কুলে বদলী করে নিয়ে আসেন। সেখানে কিছুদিন চাকরি করার পর সব বিধিলঙ্ঘন করে পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্রে বাউফল আদর্শ সরকারী প্রাইমারী স্কুলে বদলি করে আনেন। প্রধানমন্ত্রীর ছেলের পরিচয়ে প্রভাবের কারণে কেউ কিছু বলতে সাহস পায় না।
সুধির নট্র তার বাড়ির লোকজনসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেক পরিবারকে জিম্মি করে রেখেছেন। দাসপাড়া গ্রামের সুনিল নট্রর সাথে সুধির নট্র জমি জমা নিয়ে বিরোধের সৃষ্টি করে। তাদের বসতঘরটি ভেঙে পরলেও সুধীর নট্রর প্রধানমন্ত্রীর ছেলে পরিচয় প্রভাব দেখিয়ে তা মেরামত করতে দিচ্ছেন না। তাদের জায়গার গাছগাছালি কাটতে দিচ্ছে না। কথায় কথায় থানা থেকে পুলিশ ডেকে এনে তাদেরকে হয়রানি করেন। তার হাতে পৌর শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শ্রীধর ঠাকুর, নারায়ণ ঠাকুর, সুশান্ত ঠাকুর, ঝন্টু ঠাকুর জিম্মি হয়ে রয়েছেন। তাদের জায়গা দিয়ে সুধীরকে রাস্তা না দেওয়ায় সুধীর তাদেরকে শারিরীক ও মানুষিক নির্যাতনসহ বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করে আসছে। সুধির স্থানীয় ঝন্টু ঠাকুরের স্ত্রীকে মারধর করেছেন।
দাসপাড়া গ্রামে বিদ্যুৎ দেওয়ার নামে ঘর প্রতি বাবদ ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা করে নিয়েছেন। সুধির নট্র তার বোনের শ্বশুরের জমি বিক্রির ১২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আর ওই টাকার শোকে তিনি বিষপান করে আত্মহত্যা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম ভাঙ্গিয়ে সুধির নট্রর নানা অপকর্ম করায় তাঁর (প্রধানমন্ত্রীর) ভাবমূর্তি বিনষ্ট হচ্ছে।
এ ব্যাপারে বাউফল থানার ওসি আল মামুন বলেন,‘ সুধির নট্রর বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। প্রাথমিক ভাবে অভিযোগটি সাধারণ ডায়রি হিসেবে নথিভুক্ত করেছি। (নম্বর ১৪৬৪ তারিখ ২৩ মে ২০২১ ইং) অভিযোগটির সত্যতা আমরা খতিয়ে দেখবো।’