Image default
মুক্তিযুদ্ধ

বরিশালে মুক্তিযোদ্ধাকে খাল পাড়ে সমাহিত করায়, মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষোভ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে দেশ মাতৃকার টানে স্বাধীনতা যুদ্ধে পাক হায়েনাদের উপর ঝাপিয়ে পরেছিলেন বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বাটাজোড় ইউনিয়নের দেওপাড়া গ্রামের হরলাল করের পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা গোবিন্দ কর।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিয়ে করেন। বিয়ের পরপরই একটি একটি কন্যা সন্তান লাভ করেন মুক্তিযোদ্ধা গোবিন্দ কর। কিন্ত বিধি বাম। বিয়ের দশ বছরের মধ্যে স্ত্রী ও চার বছর বয়সি কন্যা সন্তানকে হারিয়ে শোক সইতে না পেরে ভারতে পারি জমান তিনি (গোবিন্দ কর)। দীর্ঘদিন দেশের কারো সাথেই যোগাযোগ রাখেননি। একপর্যায়ে ভারত থেকে এসে ভোলায় বসবাস শুরু করেন মুক্তিযোদ্ধা গোবিন্দ। গত তিন বছরপূর্বে আবার ফিরে আসেন মাতৃভূমি বাটাজোড়ের দেওপাড়া গ্রামে। কিন্ত তিনি জানতেন না এতোদিনে তার পৈত্রিক সম্পত্তি টুকুও গ্রাস হয়ে গেছে।

পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধা গোবিন্দ করের ঠাই হয় দেওপাড়া গ্রামের আত্মীয় শিবু মন্ডলের বাসায়। এরপর শিবু মন্ডলের বাসায় বসবাস করে আসছিলেন মুক্তিযোদ্ধা গোবিন্দ কর। গত ২৯ এপ্রিল ভোরে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান রনাঙ্গন কাঁপানো বীর মুক্তিযোদ্ধা গোবিন্দ কর। একইদিন রাষ্ট্রীয় মর্যাদা শেষে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের সরকারি খাল পাড়ে সমাহিত করা হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা গোবিন্দ করকে। রবিবার দুপুরে মুক্তিযোদ্ধা গোবিন্দ করের স্মৃতিচারন করে কথাগুলো বলছিলেন বাটাজোর ইউনিয়নের দেওপাড়া গ্রামের আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসমত হোসেন রাসু।

মুক্তিযোদ্ধা ইসমত হোসেন রাসু বলেন, মুক্তিযোদ্ধা গোবিন্দ কর ভারতীয় গেজেটভুক্ত একজন ভাতাভোগী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধ করেছেন। দীর্ঘদিন এলাকায় না থাকায় তার ৪০ শতক পৈত্রিক সম্পত্তি বেহাত হয়ে গেছে। যা বর্তমানে একই বাড়ির রবি করাতী ও সুভাষ গাইনসহ আরও কয়েকজন মিলে ভোগদখল করে আসছেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন, মুক্তিযোদ্ধা গোবিন্দ করের মৃত্যুর পর পৈত্রিক বাড়িতে লাশটি দাহ এবং সমাহিত করার জন্য রবি করাতী ও সুভাষ গাইনকে অনুরোধ করা হয়েছিলো। কিন্ত দখলকারীদের মন এতোই পাষান যে একজন মুক্তিযোদ্ধার লাশ তার নিজবাড়ীতে দাহ কিংবা সমাহিত করতে দেয়া হয়নি। মুক্তিযোদ্ধা গোবিন্দ করের পৈত্রিক সম্পত্তি উদ্ধার করে তার সমাধি নিজবাড়ীতে স্থানান্তরের জন্য তিনি প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

মুক্তিযোদ্ধা গোবিন্দ করের আত্মীয় শিবু মন্ডল জানান, নিজবাড়ীতে আশ্রয় না পেয়ে মুক্তিযোদ্ধা গোবিন্দ কর যখন বিভিন্ন দিকে ঘুরছিলো তখন তিনি তাকে (গোবিন্দ) তার বাসায় আশ্রয় দিয়েছিলেন। তিনি আরও জানান, মুক্তিযোদ্ধা গোবিন্দ কর জীবিত থাকাকালীণ তার সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য বাটাজোর ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতে একটি মামলা করেছিলেন। কিন্ত মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই তিনি মৃত্যুবরন করায় মামলাটি নিয়ে শংকা দেখা দিয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধার জমি দখলের বিষয়টি অস্বীকার করে রবিন্দ্রনাথ করাতী ও সুভাষ গাইন জানান, গোবিন্দ করের আপন ভাই হরেরাম কর পুরো জমি বিক্রি করে গেছেন। সে অনুযায়ী তারা জমি ভোগদখল করে আসছেন। তবে গোবিন্দ করের লাশ দাহ কিংবা সমাহিত করতে না দেয়ার বিষয়টি তারা অস্বীকার করেছেন।

Related posts

ছয় দফাকে বাংলার মুক্তির সনদ বলা হয় কেন?

News Desk

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা গোলাম রব্বান আর নেই

News Desk

সেই চেয়ার-টেবিল আনেন মুক্তিযোদ্ধা ‘বিচ্ছু জালাল’

News Desk

Leave a Comment