Image default
বাংলাদেশ

একই গ্রামে ২৪৯টি ভূমিহীন পরিবারের ঠাঁই

মুজিব শতবর্ষে প্রধান মন্ত্রীর উপহারস্বরূপ ভূমিহীনদের জন্য বরাদ্দ বাড়ী। প্রধান মন্ত্রীর কার্য্যালয় আবাসন-২ প্রকল্পের আওতায় একই স্থানে সব থেকে বেশি বাড়ী নির্মান করা হয়েছে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের বালুপাড়া গ্রামে। ফুলবাড়ী উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে বরাদ্ধকৃত ৯০৬টি বাড়ীর মধ্যে খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের বালুপাড়া গ্রামে এক সাথে নির্মান করা হয়েছে ২৪৯টি বাড়ী। খোলামেলা পরিবেশে গড়ে উঠেছে ২৪৯টি বাড়ীর একটি আর্দশ্য গ্রাম। এই গ্রামের নাম দেয়া হয়েছে ‘শেখ হাসিনা’ গ্রাম।

ইতি:মধ্যে অধিকাংশ বাড়ীতে বসবাস শুরু করেছে বরাদ্ধ পাওয়া পরিবার গুলো, তারা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসলেও, তাদের মধ্যে গড়ে উঠেছে নতুন সম্পর্ক। তারা এখন একে অপরে প্রতিবেশি হিসেবে গড়ে তুলেছে আত্মীয়তা সম্পর্ক। এখানে নির্মল পরিবেশে বসবাস করবে ভূমিহীন পরিবাররা। ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রিয়াজ উদ্দিন জানান, শুধু দিনাজপুর জেলায় নয়, সারা দেশের মধ্যে একই স্থানে বেশি বাড়ী নির্মান হয়েছে বালুপাড়া এলাকায়।

সার্বক্ষনিক তদারকের মাধ্যমে সরকারের বরাদ্দের টাকায় বাড়িগুলি নির্মাণ করা হয়। নির্মাণ কাজে যাতে কোন অনিয়ম না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখছে নির্মাণ কমিটি। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফুলবাড়ী পৌর শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দক্ষিণে খয়েরবাড়ী বাজারের সন্নিকটে ছোট যমুনা নদীর তীর ঘেষে বালুপাড়া গ্রামে গড়ে উঠেছে সারীসারী রঙ্গিন টিনের চালার পাকাবাড়ী। সেই বাড়ীতে ভূমিহীনদের মাথা গোজার ঠাঁই হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ভূমিহীন পরিবারের। ইতোমধ্যে পল্লী বিদুৎ সংযোগ শুরু হয়েছে সেই গ্রামে। গ্রামের মধ্যে বিশুদ্ধ পানির জন্য স্থাপন করা হয়েছে একাধিক হস্তচালিত টিউবওয়েল, গ্রামের সাথে গঠে উঠেছে মুদি ও চা-ষ্টল। যারা এতোদিন মানুষের জায়গায় বসবাস করেছে, তারা এখন নিজের একটি ঠিকানা পেয়ে আত্মতৃপ্তি পেয়েছেন, তাদের মুখে ফুটেছে নতুন হাসি।

অনেকে বাড়ীর সাথে রোপন করেছেন মৌসুমি সবজির নানা রকম বাগান। এক বছরের মধ্যে এই এলাকায় সবুজ বেষ্টনী হিসেবে নানা রকম ফলমুলের গাছ লাগানো হয়েছে। এই গ্রামের নাম দেয়া হয়েছে শেখ হাসিনা গ্রাম।প্রধান মন্ত্রীর বাড়ী পাওয়ায় শারমিন বেগম বলেন, তিনি ফুলবাড়ী পৌর শহরের পশ্চিম গৌরপাড়া গ্রামে অন্যের বাড়ীতে ভাড়া ছিলেন, এখন তার একটি নিজের বাড়ী হয়েছে, একই কথা বলেন পারুল বেগমও, পারুল বেগম বলেন পশ্চিম গৌরীপাড়া গ্রামের চাম্পার মীল চাতালের ধারে একটি খড়ের ঘর করে এতোদিন বসবাস করতেন, এখন তার একটি নিজের বাড়ী হয়েছে, এই জন্য তিনি প্রধান মন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। খয়েরবাড়ী ইউনিয়নে বালুপাড়া ছাড়াও অনান্য স্থানে নির্মান করা হয়েছে আরো ২৮টি বাড়ী। এই নিয়ে এই ইউনিয়নে মোট ১৭৭টি বাড়ী নির্মান করা হয়েছে।

এদিকে বালুপাড়ার ন্যায় একই জায়গায় শতাধিক বাড়ী নির্মান করা হয়েছে উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের দক্ষিন বাসুদেবপুর গ্রামে। দক্ষিন বাসুদেবপুরে প্রধান মন্ত্রীর বাড়ী পেয়ে আত্মতৃপ্তি পেয়েছেন সত্তোরর্দ্ধ বায়সী মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন দক্ষিন বাসুদেপুর গ্রামের ছামাদ মন্ডলের জায়গায় একটি ঘর করে তিনি বাসবাস করতেন, এখন তার একটি নিজের বাড়ী হয়েছে, এখন দিনশেষে সেই ঠিকানায় ঘুমাতে পারেন। একই কথা বলেন প্রধান মন্ত্রীর বাড়ী পাওয়া জাহানারা বেগম। জাহানারা বেগম বলেন তার স্বামী জাকির হোসেন একজন দিনমজুর, এতোদিন তারা অন্যের জায়গায় ঘর করে ছিলেন, এখন তাদের একটি নিজের বাড়ী হয়েছে, এখন নতুন করে ভবিষৎ গড়তে পারবেন তারা।এদিকে দক্ষিন বাসুদেবপুর গ্রামেও পল্লী বিদুতের সংযোগ দেয়া শুরু হয়েছে, আলাদিপুর ইউনিয়নে দক্ষিন বাসুদেপুর ছাড়াও অনান্য জায়গায় এই ইউনিয়নে মোট ১৩৬টি বাড়ী নির্মন করা হয়েছে।

একই ভাবে উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নে নির্মান করা হয়েছে ১০৬টি, বেতদিঘী ইউনিয়নে ১৩৪টি এলুয়াড়ীতে ১৪০টি, কাজিহাল ইউনিয়নে ১৩১টি ও শিবনগর ইউনিয়নে ৩৫টি। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শফিউল ইসলাম বলেন প্রকল্পের বাজেটে মাটি ভরাট ও টিবওয়েল স্থাপনের কাজ না থাকলেও, জেলা প্রশাসকের সহযোগীতা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার রিয়াজ উদ্দিনের একান্ত প্রচেষ্ঠায় প্রতিটি গ্রামে বিশিদ্ধ পানির জন্য হস্তচালিত টিবওয়েল স্থাপন করা হয়েছে ও গ্রামে মাটি ভরাট করে চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। এছাড়া বিদুৎ সংযোগের জন্য প্রতিটি বাড়ীতে বিদুতের মিটার সরবরাহ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।উপজেলা নির্বাহী অফিসার রিয়াজ উদ্দিন বলেন, মুজিব বর্ষে একজন মানুষও যাতে গৃহহীন না থাকে, প্রধান মন্ত্রীর এই অঙ্গিকার বাস্তবায়নের জন্য, প্রধান মন্ত্রীর কার্য্যলয় আবাসন-২ প্রকল্পের আওতায় প্রথম ধাপে এই উপজেলায় প্রতিটি বাড়ী এক লাখ ৭১ হাজার টাকা ব্যায়ে ৭টি ইউনিয়নে ৭৬৯টি বাড়ী নির্মান করা হয়।

এরপর দ্বিতীয় ধাপে প্রতিটি এক লাখ ৯১ হাজার টাকা ব্যাযে ১১২টি ও পার্বত্য চট্রগ্রাম ব্যাতিত সমতলের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্টির জন্য ২৫টি বাড়ী নির্মান করা হয়। তিনি বলেন প্রথম ধাপের সকল বাড়ীর নির্মান কাজ শেষ হয়েছে, বর্তমানে দ্বিতীয় ধাপের নির্মান কাজ চলছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার রিয়াজ উদ্দিন বলেন বাড়ীগুলো মজবুত ও টেকসই করার জন্য প্রতিটি পীলারে লোহার রড ব্যবহার করা হয়েছে এবং উন্নত উপকরণ দ্বারা নির্মান করা হয়েছে।উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মিল্টন বলেন, দিনাজপুর জেলার ১৩টি উপজেলার মধ্যে বেশি বাড়ী বরাদ্ধ হয়েছে ফুলবাড়ী উপজেলায়। তিনি বলেন স্থানীয় সাংসদ সদস্য সাবেক মন্ত্রী এ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার এমপির প্রচেষ্ঠার কারনে এই উপজেলায বেশি বাড়ী বরাদ্ধ হয়েছে, বাড়ী গুলো টেকসই করার জন্য উন্নত উপকরণ দ্বারা নির্মান করতে তিনি নিয়োমিত পরিদর্শন করছেন। প্রত্যেকটি ভূমিহীন পরিবার এতদিন অন্যের ঘরে চাল লেগে ছিলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগ ভূমিহীনরা কোনদিনও ভুলবে না।

সূত্র :দিনাজপুর নিউস ২৪

Related posts

এক উপজেলার ৫০ গ্রামে প্লাবন, পানিবন্দি লক্ষাধিক মানুষ

News Desk

ডুবেছে ভোলার নিম্নাঞ্চল

News Desk

৬১৭ কোটি টাকার প্রকল্প, সাড়ে তিন বছরে হলো ১৩ শতাংশ কাজ

News Desk

Leave a Comment