প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় স্থাপিত হতে যাচ্ছে শেখ হাসিনা সোলার পার্ক। এই পার্কে স্থাপিত হবে প্রতিটি ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণায়য়ের উদ্যোগে উপজেলার জোরখালি ইউনিয়নের কাজিয়ার চরে দেশীয় দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। রবিবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পক্ষে প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী দুটি প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রায় ৬৭৪ একর অকৃষি খাস জমির দীর্ঘ মেয়াদি বন্দোবস্ত প্রদানের চুক্তি স্বাক্ষর ও দলিল হস্তান্তর করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জামালপুরের মাদারগঞ্জ-মেলান্দহ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম মাদারগঞ্জের জোরখালি ইউনিয়নের কাজিয়ার চর মৌজায় দুটি সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেন। পরবর্তীতে বিদ্যুৎ, জলানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণায়য়ের বিদ্যুৎ বিভাগ সেখানে শেখ হাসিনা সোলার পার্ক নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে।
এই প্রকল্পের আওতায় সেখানে ১০০ মেগাওয়াট করে দুটি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ অকৃষি খাস জমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত নীতিমালা ১৯৯৫ এর ৩.০ এর (ক) অনুযায়ী ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয় করে প্রায় ৬৭৪ একর অকৃষি খাস জমি দীর্ঘ মেয়াদি জমি বন্দোবস্তের ব্যবস্থা করে। বিদ্যুৎ বিভাগ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য দেশীয় দুটি প্রতিষ্ঠান রুরাল পাওয়ার কম্পানি লিমিটেডকে ৩২৫ দশমিক ৬৫৩ একর এবং বি-আর পাওয়াজেন লিমিটেডকে ৩৪৮ দশমিক ৩৪৮ একর অকৃষি খাস জমি দীর্ঘ মেয়াদি বন্দোবস্ত দেওয়ার সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। দুটি প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে অকৃষি খাস জমি বন্দোবস্তের সেলামি ও অন্যান্য ফি বাবদ টাকাও জমা দিয়েছে সরকারি কোষাগারে। এর মধ্যে বি-আর পাওয়ারজেন লিমিটেড গত বছরের ১৮ নবেম্বর ৩৪৮ দশমিক ৩৪৮ একর জমি বন্দোবস্তের সেলামি বাবদ ৩৮ কোটি ৭১ লাখ ৫৮ হাজার ৬৮৭ টাকা এবং অন্যান্য ফি বাবদ ২ কোটি ১২ লাখ ৯৩ হাজার ৯২০ টাকা জমা দিয়েছে।
অপরদিকে রুরাল পাওয়ার কম্পানি লিমিটেড গত বছরের ১৬ জুলাই ৩২৫ দশমিক ৬৫৩ একর জমি বন্দোবস্তের সেলামি বাবদ ৩১ কোটি ৩৪ লাখ ৬২৩ টাকা এবং অন্যান্য ফি বাবদ ১ কোটি ৭২ লাখ ৩৭ হাজার ৫৬৯ টাকা জমা দিয়েছে। রবিবার দুপুরে জামালপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে শেখ হাসিনা সোলার পার্ক প্রকল্পের জন্য বরাদ্দের অকৃষি খাস জমির দীর্ঘ মেয়াদি বন্দোবস্ত প্রদানের চুক্তি স্বাক্ষর ও জমির দলিল হস্তান্তর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ সময় রাষ্ট্রপতির পক্ষে জমির দলিল ও চুক্তিনামায় স্বাক্ষর করেন জেলা প্রশাসক মুর্শেদা জামান। অপরদিকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণায়য়ের বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষে জমির দলিল ও চুক্তিনামায় স্বাক্ষর করেন সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র দুটির বাস্তবায়নকারী দেশীয় প্রতিষ্ঠান রুরাল পাওয়ার কম্পানি লিমিটেডের পক্ষে কম্পানি সচিব প্রান্ত চন্দ্র সাহা ও বি-আর পাওয়াজেন লিমিটেডের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফখরুজ্জামান।
এ সময় রুরাল পাওয়ার কম্পানি লিমিটেডের প্রকল্প পরিচালক মো. ফেরদৌস রহমান ও বি-আর পাওয়াজেন লিমিটেডের প্রকল্প পরিচালক পাপন দাস উপস্থিত ছিলেন। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বলা হয়, অকৃষি খাস জমি বন্দোবস্ত চুক্তি ও দলিল সম্পাদনার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সোলার পার্ক স্থাপনে আর বাঁধা রইলো না। এই পার্কে দুটি সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। এখান থেকে উৎপাদিত ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ৫৫ কিলোমিটার দূরবর্তী টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইলে পিডিবির ১৩২ কেভি ট্রান্সমিশন কেন্দ্রে সরবরাহ করা হবে।
এ দুটি সোলার বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্থায়িত্বকাল ধরা হয়েছে ৩০ বছর। দ্রুত সময়ের মধ্যে দরপত্র আহবানের মধ্য দিয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে। এ সময় জেলা প্রশাসক মুর্শেদা জামান বলেন, সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে সারাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের শতকরা ১০ ভাগ নবায়নযোগ্য জলানি ব্যবহার করে পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে। সেই লক্ষ্যে মাদারগঞ্জে স্থাপিত হতে যাচ্ছে শেখ হাসিনা সোলার পার্ক। এই পার্কের দুটি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয়ভাবে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি আরো জানান, এই পার্কের জন্য অকৃষি খাস জমি বন্দোবস্ত দেওয়ার কারণে স্থানীয় নদীভাঙা ও বন্যাকবলিত ২৭০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সরকারের পক্ষ থেকে তাদেরকে পুনর্বাসনের জন্য জরুরি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের মূল উদ্যোক্তা সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এমপির প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন জেলা প্রশাসক।