অটোরিকশা চোর সিন্ডিকেটের ১০ সদস্যকে আটক করেছে র্যাব-৯। সিলেটের বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের আটচক করা হয়। এদের কাছ থেকে ৬ টি অটোরিকশাও উদ্ধার করা হয়েছে। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে গত ২১ এপ্রিল থেকে ৩ জুন পর্যন্ত অব্যাহত অভিযানে তাদের সবাইকে আটক করা হয় বলে জানান র্যাব-৯ এর এএসপি ওবাইন। এসময় তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে ব্যাপক তথ্য পাওয়া গেছে বলেও জানান তিনি। র্যাবের এসএপি ওবাইন বলেন, চুরি চক্রের মূল হোতা হিসেবে কাজ করতেন মানিক। চুরির সকল নির্দেশনা এবং পরিকল্পনা আসত তার কাছ থেকে। আর গাড়ি বিক্রি বা পাচারের সকল কাজ নিয়ন্ত্রণ করতেন কামরুল।
সম্প্রতি সিলেট বিভাগজুড়ে অটোরিকশা চুরি বেড়ে গেলে অভিযানে নামে র্যাব। এ অভিযানে গত ২১ এপ্রিল মো. আবু তালেব (৪৫) কে আটক করা হয়। পরবর্তীতে র্যাব এ চক্রের অন্যান্য সদস্যদের সন্ধান পায়। পরে গত ২৮ মে মাধবপুর এলাকা থেকে আরও একটি অটোরিকশা চুরির অভিযোগ পেলে ফের অভিযানে নামে র্যাব। এ অভিযানে শমসু মিয়াকে (৪৫) শনাক্ত করে ৩ জুন তাকে আটক করে। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পর্যায়ক্রমে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে চুরি হওয়া ৬টি অটোরিকশা উদ্ধার করা হয় এবং তাদের দলের মূল হোতা মানিক ও কামরুলসহ ১০ জনকে আটক করতে সক্ষম হয় র্যাব-৯।
র্যাব-৯ এর এএসপি ও মিডিয়া অফিসার ওবাইন জানান, শমসুর দেওয়া তথ্যে অভিযান চালিয়ে এ চক্রের অপর সদস্য মো. মহিউদ্দিনকে (২৬) আটক করা হয়। মহিউদ্দিন দীর্ঘদিন থেকে এ চক্রের মূল সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করছে। পরে মহিউদ্দিনের তথ্যের ভিত্তিতে মো. কামরুল মিয়াকে আটক করা হয়। র্যাব-৯ এর এসপি ওবাইন আরও জানান, এভাবে পর্যায়ক্রমে অভিযান চালিয়ে ১০ জনকে আটক করা হয়। তাদের মধ্যে কেউ চুরিতে পারদর্শী, কেউ পাচার কাজের সমন্বয় করতো আবার কেউ বিভিন্ন গ্যারেজে কি পরিমাণ অটোরিকশা আছে বা কি ভাবে চুরি করা যায় তার পরিকল্পনা করতো। আবার কেউ চাবি ছাড়া এসব অটোরিকশা চালানোর বিষয়ে পারদর্শী হিসেবে কাজ করে। তারা বিভিন্নজন মিলে একটি সিন্ডিকেট ছিলেন বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আটক অনুকুল নামের একজন জানায়, সে প্রাথমিক পর্যায়ে অভাব অনটনে এ কাজ করলেও পরবর্তীতে মহিউদ্দিন তাকে মাদক মামলায় পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে এ ধরনের কাজে বাধ্য করে।
এএসপি ওবাইন আরও জানান, মহিউদ্দিন সকল চুরি-ছিনতাইর মূল পরিকল্পনাকারী। সে সকল নতুন অটোরিকশা যেগুলোর নম্বরপ্লেট নেই সেগুলো টার্গেট করে এবং গ্যারেজ চিহ্নিত করে। টার্গেট এবং গ্যারেজ চিহ্নিত করার পর মহিউদ্দিন চুরির প্রস্তাব মানিককে দেয়। মানিক চুরি-ছিনতাই গ্রুপের মূল লিডার। সে প্রস্তাব অনুযায়ী প্রাথমিক ভাবে কিছুদিন টার্গেট এবং গ্যারেজ পর্যবেক্ষণ করে চুরির দিন নির্ধারণ করে। চুরি করার ক্ষেত্রে মানিক তার দলের প্রধান অস্ত্র হিসাবে আটক হৃদয়কে ব্যবহার করে। হৃদয় যে কোন যানবাহন চাবি ছাড়া ইঞ্জিন চালু করতে পারদর্শী। সে ইঞ্জিন চালু করে দেয়ার পর নিজে এবং দলের অন্যান্য সদস্যরা অটোরিকশাগুলো মানিকের পূর্বনির্ধারিত স্থানে নিয়ে আসে। পরবর্তীতে মহিউদ্দিনই চোরাই গাড়ী বিক্রির অন্যতম সদস্য কামরুলের সাথে যোগাযোগ করে এবং অটোরিকশাগুলো কামরুল তার জিম্মায় নিয়ে বিক্রির ব্যবস্থা করে। পরে এসব অটোরিকশা এক লক্ষ ত্রিশ হাজার থেকে সর্বোচ্চ এক লক্ষ ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করে টাকাগুলো ভাগ বাটোয়ারা করা হয়। এভাবেই এ চক্রটি দীর্ঘদিন থেকে বিভাগজুড়ে অটোরিকশা চুরির একটি সক্রিয় সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলো বলে জানায় র্যাব-৯। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
সূত্র : সিলেট টুডে ২৪