আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম মহানগর এবং উত্তর ও দক্ষিণ জেলা ইউনিটের সম্মেলন হতে পারে এই জুলাই-আগস্টেই। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। তারা বলছেন, সম্মেলন জুলাই-আগস্টে শুরু হবে এবং ডিসেম্বরেই সেটা শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। এ হিসেবে জুলাই-আগস্টে ইউনিট কিংবা ওয়ার্ড, এরপর ইউনিয়ন থেকে শুরু হয়ে থানা এবং উপজেলা, সর্বশেষ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে চট্টগ্রাম নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলার সম্মেলন—এমন কথা উঠে এসেছে আওয়ামী লীগ চট্টগ্রামের বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত দলীয় সংসদ সদস্যদের বৈঠকে।
বুধবার (২ জুন) জাতীয় সংসদের হুইপের কক্ষে আওয়ামী লীগের চট্টগ্রামের বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের সাথে আওয়ামী লীগের টিকেটে নির্বাচিত চট্টগ্রাম জেলার সংসদ সদস্যদের ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দলটির চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগরের ইউনিট পর্যায়ের সম্মেলনের বিষয়ে এই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছে সভায় উপস্থিত থাকা একাধিক সংসদ সদস্য। ওই সভায় চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ এমপি ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের সাথে চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন আসনে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের ১৪ সংসদ সদস্যের মধ্যে ৮ জন সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের দুই সদস্যও এই সভায় অংশ নেন।
চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের ১০ এমপির সঙ্গে হঠাৎ দলের চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের বৈঠকের এই ছবি বুধবার রাতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এই ছবির বিষয়ে জানতে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সফল হওয়া যায়নি। এটিকে ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ দাবি করে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ এমপি বলেন, ‘আসলে আমাদের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি। উনি দায়িত্ব পাওয়ার পর আমাদের দেখা সাক্ষাৎ হয়নি। আজ তো সংসদে বাজেট অধিবেশন ছিল, তাই হুইপের কক্ষে আমরা চট্টগ্রামের এমপিরা উনার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করি। আমাদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ এমপি এই সভায় সভাপতিত্ব করেন।
তবে ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ বলা হলেও সভায় আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর ও উত্তর জেলা দক্ষিণ জেলার ইউনিটের সম্মেলনের বিষয়ে আলাপ আলোচনা হয়েছে বলে সভায় উপস্থিত থাকা একজন সংসদ সদস্য জানিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘জুলাই থেকে জেলা ও মহানগরের ইউনিটগুলোর সম্মেলন করার বিষয়ে সভায় আলাপ হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে এসব সম্মেলন শেষ করতে হবে বলেও বলা হয়েছে। এর পর পর্যায়ক্রমে জেলা ও নগরের সম্মেলনের আয়োজন করার বিষয়েও সভায় আলোচনা হয়েছে। এছাড়াও চট্টগ্রামের বিভিন্ন রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও আলাপ আলোচনা হয়েছে।
জানা গেছে, বুধবার (২ জুন) জাতীয় সংসদের হুইপের কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কোতোয়ালী-বাকলিয়ার সাংসদ শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, পটিয়ার এমপি সামশুল হক চৌধুরী, রাউজানের এমপি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, সন্দ্বীপের সাংসদ মাহফুজুর রহমান মিতা, সীতাকুণ্ডের সাংসদ দিদারুল আলম,সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার এমপি আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী, বাঁশখালীর এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ। এছাড়া সংরক্ষিত আসনের দুই সংসদ সদস্য আয়েশা ওয়াসেকা খান এমপি ও খাদিজাতুল আনোয়ার সনি এমপিও এসময় সভায় উপস্থিত ছিলেন।
তবে দলীয় রাজনীতি নিয়ে সভা হলেও চট্টগ্রামের হেভিওয়েট তিন নেতা— আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এই সভায় উপস্থিত ছিলেন না। এছাড়া ডা. আফসারুল আমিন এমপি, বন্দর-পতেঙ্গার এমপি এম আবদুল লতিফ, চন্দনাইশের এমপি নজরুল ইসলাম চৌধুরীও সভায় উপস্থিত ছিলেন না।