Image default
আন্তর্জাতিক

ইসরায়েলের নতুন নেতৃত্বেও ‘পার্থক্য’ দেখছেন না ফিলিস্তিনিরা

টানা এক যুগ পর ইসরায়েলের মসনদ হারানো প্রায় নিশ্চিত বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর। আসছে নতুন জোট, নতুন সরকার, যার অংশ হতে চলেছে একটি ইসলামী দলও। কিন্তু ইসরায়েলে নতুন যে নেতৃত্ব আসছে তার ওপরও ভরসা করতে পারছেন না ফিলিস্তিনিরা। তাদের মতে, ইসরায়েলের মূল সমস্যা নেতা নয়, নীতি।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর অনুসারে, ইসরায়েলে নতুন সরকার গঠনে নেতানিয়াহু-বিরোধী নেতাদের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছে তাতে প্রথম দুই বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন নাফতালি বেনেট। এরপর প্রধানমন্ত্রী হবেন বর্তমান সংসদের বিরোধী নেতা ইয়াইর লাপিদ।

কিছুদিন আগেই অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জড়িয়েছিল ইসরায়েল। সেখানে টানা ১১ দিন অবনবরত বোমাবর্ষণ করে ২৫০ জনের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী, যার মধ্যে অন্তত ৬৫ শিশুও রয়েছে। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার নিরপরাধ মানুষ।

এরপরও সাম্প্রতিক সংঘাতের বেশিরভাগ দায় ফিলিস্তিনিদের বলে গত বৃহস্পতিবার মন্তব্য করেছেন ইসরায়েলের সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী বেনেট। স্থানীয় একটি টিভি চ্যানেলকে তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের মধ্যে সংঘাত এলাকা নিয়ে নয়। ফিলিস্তিনিরা এখানে আমাদের অস্তিত্ব স্বীকার করে না এবং মনে হচ্ছে, এই মনোভাব আরো বহুদিন থাকবে।’ এছাড়া পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের বসতি সম্প্রসারণেরও কট্টর সমর্থক এ নেতা।

প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের প্রতিনিধি বাসেম আল-সালহি মনে করেন, ইসরায়েলে যিনি প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন তিনিও নেতানিয়াহুর চেয়ে কম চরমপন্থী নন। বরং তিনি যে কতটা চরমপন্থী, সরকারে বসে সেটাই প্রমাণের চেষ্টা চালাবেন।

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার এক সরকারি কর্মকর্তা আহমেদ রেজিকের কণ্ঠেও শোনা গেছে একই শঙ্কার কথা। তার কথায়, ‘ইসরায়েলি নেতাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। তারা তাদের দেশের জন্য ভালো অথবা খারাপ, কিন্তু আমাদের প্রশ্নে তারা সবাই খারাপ। তারা কেউই ফিলিস্তিনিদের অধিকার ও ভূমি ফিরিয়ে দিতে চায় না।

গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাসও বলছে, ইসরায়েলে যে-ই নেতৃত্বে আসুক, তাতে কোনো পার্থক্য হয় না। সশস্ত্র গোষ্ঠীটির মুখপাত্র হাজেম কাসেম বলেন, ‘ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলে ডান, বাম, মধ্যপন্থী এমন কয়েক ডজন সরকার দেখেছে। ফিলিস্তিনিদের অধিকার প্রশ্নে তাদের সবারই মনোভাব নেতিবাচক।’

এদিকে, এবারই প্রথমবারের মতো ইসরায়েলে সরকারের অংশ হতে যাচ্ছে একটি ইসলামী দল। ইসরায়েলের মোট জনসংখ্যার ২১ শতাংশ আরব সম্প্রদায়ের। তাদের ভোটেই সংসদে গেছে ‘ইউনাইটেড আরব লিস্ট’ নামে ওই দলটি।

ইসলামী ওই দলের নেতা মনসুর আব্বাস বলেছেন, বিরোধীদের মধ্যে সরকার গঠনের যে চুক্তি হয়েছে, তার আওতায় ইসরায়েলের আরব অধ্যুষিত শহরগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন ও সেখানে সহিংসতা কমাতে ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার ব্যয় করা হবে।

তবে পশ্চিম তীর ও গাজায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন এ নেতা। তিনি ‘শত্রু’র পক্ষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ফিলিস্তিনিরা।

মনসুর আব্বাস সম্পর্কে বাদরি করম নামে গাজার এক বাসিন্দা বলেন, তিনি একজন বিশ্বাসঘাতক। গাজায় নতুন করে যুদ্ধ শুরু করতে যখন তার মত চাওয়া হবে তখন তিনি কী করবেন? তিনি কি তাতে সায় দেবেন এবং ফিলিস্তিনিদের হত্যার অংশীদার হবেন?

ইসরায়েলে নতুন জোটের বিরোধিতাকারী দল ও ফিলিস্তিনি জাতীয়তাবাদী বালাদ পার্টির নেতা সামি আবু শেহাদেহ’র মতে, সেখানে আসল সমস্যা নেতানিয়াহুর ‘ব্যক্তিত্ব’ নয়, সমস্যা হচ্ছে ইসরায়েল যে নীতি অনুসরণ করছে সেটি।

‘আমাদের যেটা দরকার তা হলো- ইসরায়েলি নীতিমালায় ব্যাপক পরিবর্তন। নেতানিয়াহুর আগেও পরিস্থিতি খুব খারাপ ছিল। ইসরায়েল নিজস্ব নীতিতে অটল থাকলে নেতানিয়াহুর পরেও পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকবে। এ কারণেই আমরা এই সরকারের বিরোধিতা করছি।’

Related posts

টিকার জোরেই কি সুস্থ ব্রিটেন?

News Desk

চীনের দখলদারিত্ব কার্যক্রমে দক্ষিণ চীন সাগরে নেতৃত্ব দিচ্ছে মেরিটাইম মিলিশিয়া

News Desk

ইউরোপে করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন ঘণ্টায় ৯ হাজারের বেশি

News Desk

Leave a Comment