এক বছরেরও বেশি সময় ধরে পূর্ব লাদাখে মুখোমুখি ভারত ও চীনের সেনাবাহিনী। গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষের পর পরিস্থিতি সবচেয়ে জটিল হয়ে ওঠে প্যাংগং হ্রদ সংলগ্ন ফিঙ্গার এলাকাগুলোতে। সেখানেই অল্পের জন্য যুদ্ধের হাত থেকে রক্ষা পায় পরমাণু শক্তিধর দুই দেশ।
তবে দু’পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে ফেব্রুয়ারি মাসে প্যাংগং থেকে ফৌজ সরিয়ে নিয়েছে দুই দেশ। এবার গোটা পূর্ব লাদাখ জুড়েই সেনা প্রত্যাহারের উদ্দেশে আলোচনা চলছে দু’দেশের মধ্যে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে চীনা সেনাবাহিনীর উদ্বেগজনক কার্যকলাপ।
সংবাদ সংস্থা এএনআইয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি লাদাখ সীমান্তের কাছেই বড়সড় মহড়া চালিয়েছে চীনের বিমানবাহিনী। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, লাদাখে সীমান্তের ওপারে অন্তত ২২টি চীনা যুদ্ধবিমান মহড়া চালিয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিয়েকটি ছিল জে-১১ যুদ্ধবিমান যা সুখোই-২৭ বিমানের আদলে তৈরি।
এছাড়া সামরিক মহড়ায় অংশ নিয়েছে লালফৌজের জে-১৬ যুদ্ধবিমান। জানা গেছে, আধুনিকীকরণের পর হুটান, গারিগুনসা ও কাশগড় সেনা ঘাঁটি থেকে আকাশে পাড়ি দেয় চীনা যুদ্ধবিমান। এদিকে লালফৌজের এই আগ্রাসী কার্যকলাপের ওপর কড়া নজর রেখেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী।
কোনওভাবেই দেশের সুরক্ষা নিয়ে গাফিলতি হবে না বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী। ভারতীয় বিশ্লেষকদের দাবি, গত বছর গালওয়ান উপত্যকায় ভারতীয় ফৌজের সঙ্গে সংঘর্ষে বেশ ধাক্কা খেয়েছে চীন। কয়েক দশকের অবস্থান পালটে নয়াদিল্লি যে, এমন আক্রমণাত্মক হয়ে উঠবে তা ভাবতে পারেনি বেইজিং। ফলে সীমান্তে চাপ তৈরির কৌশল হিসেবে সামরিক মহড়া চালাচ্ছে চীনা সেনাবাহিনী।
উল্লেখ্য, পূর্ব লাদাখে সংঘাতের সমস্ত কেন্দ্রবিন্দু থেকে ফৌজ সরানো নিয়ে বেশ কয়েকবার আলোচনা হয়েছে দু’পক্ষের মধ্যে। মনে করা হচ্ছে এবার গোগরা-হটস্প্রিং ও দেপসাং সমতলের একাংশ থেকেও সরে যেতে পারে লালফৌজ। প্যাংগং হ্রদ নিয়ে দীর্ঘদিন বিবাদ চলছে ভারত-চীনের।
দু’দেশের মধ্যে অন্তত ৯ দফা আলোচনার পর গত ফেব্রুয়ারি মাসে সেনা প্রত্যাহার শুরু করে দু’দেশ। ‘পিপলস লিবারেশন আর্মি’ তাদের বিপুল সংখ্যক সেনা, শত শত ট্যাঙ্ক ও সাঁজোয়া গাড়ি সরিয়ে নিয়েছে। প্যাংগং হ্রদ লাগোয়া আট নম্বর ফিঙ্গার পয়েন্টের কাছে সরানো হয়েছে চীনের সব ট্যাঙ্ক।
তবে পরিস্থিতির উপর প্রতি মুহূর্তে কড়া নজর রাখছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। সে অনুযায়ী পদক্ষেপ ও কৌশল বদলাচ্ছেন তারাও। আর প্যাংগংয়ের পরই এবার অন্যান্য বিবাদমান এলাকা নিয়ে আলোচনায় বসতে চলেছে দু’দেশ।