Image default
বাংলাদেশ

চট্টগ্রামে ওসির ‌‘মসজিদ পুলিশিং’

ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ১টা। জুমার খুতবা পূর্ববর্তী বয়ান শেষে চট্টগ্রাম নগরের ডবলমুরিং থানার দক্ষিণ পাহাড়তলী ঝর্ণা পাড়া অলি আহাম্মদ জামে মসজিদে তখন পিনপতন নীরবতা। তিন তলার সুরম্য মসজিদটির ভেতরে বাইরে উপস্থিত প্রায় সাড়ে তিন হাজার মুসল্লি। এমন সময় পাঞ্জাবি পরিহিত আরেক লোক দাঁড়ালেন মাইক হাতে।

নিজেকে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পরিচয় দিয়ে শুরু করেন কথা বলা। মাদক, কিশোর গ্যাংসহ সমসাময়িক বিভিন্ন অপরাধের আইনি ও ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন বক্তৃতায়। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে মুসল্লিদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করার চুক্তি করেন। নিজের নম্বর মুসল্লিদের দিয়ে আহ্বান করেন অপরাধীর তথ্য প্রদানের জন্য।

শুক্রবার (১১ জুন) সরেজমিনে মসজিদটিতে জুমার নামাজে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়। প্রায় ১০ মিনিটের বক্তব্যে ওসি মোহাম্মদ মহসিন বলেন, ‘আমি আপনাদের সবচেয়ে আস্থার জায়গা মসজিদে দাঁড়িয়ে বলছি, এলাকার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আপনাদের সঙ্গে কাজ করবো। আপনারা শুধু আমাকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করবেন। বাকি বিষয়গুলো আমরা পুলিশ দেখব। সম্ভাব্য তথ্য থাকলে আমাদেরকে দেবেন। এক্ষেত্রে আপনার পরিচয় গোপন রাখা হবে। আমি আপনাদের সবচেয়ে আস্থার মানুষ হতে চাই।

তিনি আরও বলেন, ‘মসজিদে কথা বলার কারণ হচ্ছে, এখানে কথা বললে সবাই শোনেন। আমার স্বপ্ন, আমি যেখানে যাই সেখানের ভালো মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক করি। এখানে সমাজের বিভিন্ন ধরনের মানুষ উপস্থিত আছেন। অনেক জায়গায় দেখেছি, সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তি সেজে কতিপয় ব্যক্তি অবৈধ ব্যবসা কিংবা মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে গেছেন। আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে এ ধরনের ব্যক্তিদের গ্রেফতার করছি। এ রকম ব্যক্তি এখানে থাকলে সতর্ক হয়ে যেতে পারেন।

ইভটিজিংয়ের বিষয়ে পবিত্র হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে ওসি বলেন, ‘আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন- তোমরা রাস্তায় বসো না। রাস্তায় যদি বসো তবে রাস্তার হক আদায় করতে হবে। এক্ষেত্রে সালাম দিতে হবে এবং নিজেদের দৃষ্টি সংবরণ করতে হবে। কোনো মেয়ে দেখলে ইভটিজিং করা যাবে না। কিশোর গ্যাংয়ের বিষয়ে মুরব্বিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘এখানে যারা বাবা আছেন, তারা নিজেদের সন্তান কোথায় যাচ্ছে একটু খেয়াল রাখবেন। আপনাদের অজান্তে ছেলেরা অনেক অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। একবার যদি বড় ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে, পরে তারা সেখান থেকে বের হতে পারে না।

মসজিদ কমিটির উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমি চাই এই মসজিদ কমিটি এলাকার মাদক নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে। আমি আর মুসল্লিরা মিলে চুক্তি করলাম এই এলাকা অপরাধমুক্ত হবে। আপনারা যেকোনো বিষয়ে আমার থানায় গিয়ে যোগাযোগ করবেন। আমার দরজা সব সময় উন্মুক্ত। আমি মসজিদে দাঁড়িয়ে বলছি, আমি আমার জানা মতে সর্বোচ্চ সততার সঙ্গে চলার চেষ্টা করি। এ সময় উপস্থিত সবাইকে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ অনলাইন বিভিন্ন মাধ্যমে গুজব ছড়ানোর ক্ষেত্রে সতর্ক করেন।

Related posts

বিক্রয়কর্মীদের স্বাস্থ্য সনদ না থাকায় সুপারশপকে জরিমানা

News Desk

ব‌র্ণিল আলপনায় রাঙলো হাওরের সড়ক, গিনেজ বুকে ওঠার আশা

News Desk

স্বাস্থ্যবিধি পেছনে ফেলে ঈদে বাড়ি ছুটছে মানুষ

News Desk

Leave a Comment