করোনারোধী টিকাদানের হারে বিশ্বে শীর্ষস্থানীয়দের মধ্যে অন্যতম ইসরায়েল। ইতোমধ্যে নিজেদের প্রায় ৫৫ শতাংশ জনগণকে দুই ডোজ করে ফাইজার-বায়োএনটেকের তৈরি টিকা দিয়েছে তারা। এর জেরে সংক্রমণ কমে আসায় প্রায় সবধরনের বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছিল দেশটি। কিন্তু সম্প্রতি সেখানকার টিকাগ্রহীতাদের মধ্যে অনেকে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে (করোনার ভারতীয় ধরন) আক্রান্ত হয়েছেন এবং এর হার ক্রমেই বাড়ছে। এ কারণে আবারও বেশ কিছু বিধিনিষেধ ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছে ইসরায়েলিরা। খবর দ্য টেলিগ্রাফের।
গত বছরের শেষভাগে দেশটিতে ব্যাপক হারে করোনাভাইরাস ছড়াতে শুরু করে। একপর্যায়ে চলতি বছরের জানুয়ারিতে দৈনিক ১০ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয় সেখানে। তবে গত ডিসেম্বরে গণহারে টিকাদান শুরুর ফল দ্রুতই পেতে শুরু করে তারা। চলতি জুন মাসে ইসরায়েলে দৈনিক করোনা রোগী শনাক্তের সংখ্যা মাত্র এক অংকে নেমে এসেছিল।
কিন্তু গত মঙ্গলবার দেশটিতে নতুন করে ১২৫ জনের শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে, যা গত এপ্রিলের শেষ থেকে একদিনে সর্বোচ্চ রোগী শনাক্তের ঘটনা। স্থানীয় দৈনিক হারেৎজের তথ্যমতে, ইসরায়েলে সাম্প্রতিক প্রাদুর্ভাবগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি শনাক্ত হয়েছে স্কুলে। এর মধ্যে দু’টি স্কুলের নয়জন শিক্ষক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, যারা দুই ডোজ করেই টিকা নিয়েছিলেন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, দুই ডোজ টিকা নেয়ার পরেও তাদের অন্তত তিন কর্মকর্তা করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত এক সপ্তাহে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ দুই ডোজ টিকাগ্রহীতা ছিলেন এবং এদের মধ্যে অনেকের শরীরে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি মোকাবিলায় ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সী সবাইকে টিকা দেয়া এবং রোববার থেকে স্কুলে সবাইকে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরার আদেশ দিয়েছে ইসরায়েলি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
সংক্রমণ কমে আসতে দেখে কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং ডিপার্টমেন্ট বন্ধ করে দিতে চলেছিল ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। এখন সেটিও চালু রাখার নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী। জোরদার করা হচ্ছে নমুনা পরীক্ষা কার্যক্রমও। গত মঙ্গলবার একদিনে প্রায় ৫০ হাজার নমুনা পরীক্ষার কথা জানিয়েছে ইসরায়েল, এর মধ্যে ০.৩ শতাংশ ফলাফল পজিটিভ এসেছে। ইসরায়েলি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, তারা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করছেন। করোনা সংক্রমণের উচ্চহারযুক্ত ‘অনিরাপদ’ দেশ ভ্রমণ করলে ইসরায়েলিদের জরিমানাও হতে পারে। প্রায় ৯৩ লাখ জনসংখ্যার দেশ ইসরায়েলে এ পর্যন্ত করোনায় ৬ হাজার ৪২৮ জন মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন ৮ লাখ ৪০ হাজারের মতো।