আমরা অনেকেই রাতের খাবার খাওয়ার পর পরই ঘুমিয়ে পড়ি। আবার অনেকেই হাঁটাহাঁটি করি। আবার অনেকে অহেতুক কাজ, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, কোনো বিনোদন উপভোগে করে সময় নষ্ট করে দেরি করে ঘুমাতে যায়। কিন্তু ঘুমের আগে আমাদের প্রিয় নবী রাসূল (সা.) কোন দোয়াটি পাঠ করতেন মুসলমান হিসেবে তা আমাদের অজানা ।
রাসুল (সা.) এশার নামাজের পর গল্পগুজব ও গভীর রাত পর্যন্ত সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর তাগিদ দিতেন। (মুসনাদে আবি ইয়ালা, হাদিস : ৪৮৭৯)
মুমিনের প্রতিটি কাজই ইবাদত। ঘুমও এর ব্যতিক্রম নয়। যদি কোনো ব্যক্তি ইসলামের নির্দেশিত পদ্ধতিতে ঘুমায়, তার ঘুমও ইবাদতে পরিণত হয়। রাতে ঘুমানোর আগে কিছু করণীয়-বর্জনীয় কাজ রয়েছে। নিচে সেগুলো তুলে ধরা হলো—
দোয়া পড়া
রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি শোয়ার পর আল্লাহর নাম নেয় না, তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে লাঞ্ছনা নেমে আসবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৫৬)
হজরত হুযাইফাহ রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতের বেলায় নিজ বিছানায় শোয়ার (ঘুমানোর আগে) সময় নিজ হাত গালের নিচে রাখতেন।
অতঃপর বলতেন-
اَللَّهُمَّ بِاسْمِكَ أَمُوتُ وَأَحْيَا
উচ্চারণ- আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহইয়া।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনারই নামে মরে যাই আবার আপনারই নামে জীবন লাভ করি।’
গোনাহ থেকে মুক্তির লক্ষ্যে অনেক জিকির, তাসবিহ ও দোয়ার কথা বলেছেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এসব দোয়ার মধ্যে এমন একটি দোয়া আছে যে, বিছানায় ঘুমাতে গিয়ে শুয়ে দোয়াটি পড়লে সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ গোনাহও মাফ হয়ে যায়। হাদিসে এসেছে-
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বিছানায় শুয়ে এই দোয়া পড়বে, তার গোনাহগুলো মাফ হয়ে যাবে; যদিও তা সমুদ্রের ফেনা সমান হয়। তাহলো-
لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ ، لَا حَوْلَ وَ لَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ للهِ وَ لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ
উচ্চারণ : ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু; লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদির। লা হাওলা ওয়া লা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লাহি। সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।’
অর্থ : ‘আল্লাহ ব্যতিত সত্যিকারের কোনো উপাস্য নেই। তাঁর কোনো অংশীদার নেই। তাঁর জন্য রাজত্ব এবং তাঁর জন্যই সব প্রশংসা আর তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ ছাড়া কোনো উপায় ও সামর্থ্য নেই। আল্লাহ পবিত্র এবং তাঁর জন্যই সব প্রশংসা। আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্যিকারের ইলাহ নেই আর আল্লাহ সবচেয়ে মহান।’ (ইবনু হিব্বান, ইবনু আবি শায়বা)
ঘুমানোর আগে যে আমলগুলো করতে হবে :
সুরা ইখলাস ও নাস-ফালাক পড়ে শরীরে ফুঁ দেওয়া
আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতি রাতে যখন বিছানায় যেতেন, তখন দুই হাত একত্র করে তাতে সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়ে ফুঁ দিতেন। অতঃপর মাথা ও চেহারা থেকে শুরু করে যত দূর সম্ভব দেহে তিনবার দুই হাত বোলাতেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৫০১৭)
আয়াতুল কুরসি পড়া
রাসুল (সা.) বলেন, ‘তুমি যখন শয্যা গ্রহণ করবে, তখন আয়াতুল কুরসি পড়বে। তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বদা তোমার জন্য একজন রক্ষক থাকবে এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার কাছে আসতে পারবে না।’ (বুখারি, হাদিস : ২৩১১)
সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়া
কোনো ব্যক্তি ঘুমানোর আগে এ দুই আয়াত পড়লে তা তাদের গোটা রাতের নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট হবে। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যদি কোনো ব্যক্তি সুরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত পাঠ করে, তবে এটিই তার জন্য যথেষ্ট। (বুখারি, হাদিস : ৫০৪০)
সুরা মুলক পড়া
রাসুল (সা.) বলেছেন, কোরআনের মধ্যে ৩০ আয়াতবিশিষ্ট একটি সুরা আছে, যেটি কারো পক্ষে সুপারিশ করলে তাকে মাফ করে দেওয়া হয়। সুরাটি হলো তাবারাকাল্লাজি বিয়াদিহিল মুলক (সুরা মুলক)। (তিরমিজি, হাদিস : ২৮৯১) রাসুল (সা.) এই সুরা না পড়ে কখনো ঘুমাতে যেতেন না। (তিরমিজি, হাদিস : ২৮৯২)
এছাড়াও ঘুমানোর আগে রয়েছে একাধিক দোয়া। যেসব দোয়া পড়লে যেমন গোনাহ মাফ হয়, দোয়া কবুল হয়, শান্তিপূর্ণ আরামদায়ক ঘুম হয়। আরও অনেক মর্যাদাপূর্ণ ফজিলত লাভ হয়।
ফজিলত :
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে বললেন, হে অমুক, যখন তুমি বিছানায় ঘুমাতে যাবে তখন নামাজের ন্যয় অযু করবে। তারপর তোমার ডান পার্শ্বের ওপরে শুবে এবং উক্ত দোয়া পড়বে। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যদি তুমি সেই রাতে মৃত্যুবরণ কর, তবে তুমি ইসলামের ওপর মৃত্যুবরণ করবে আর যদি তুমি ভোরে ওঠ, তবে তুমি কল্যাণের সঙ্গে ওঠবে।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, ঘুমানোর সময় বিছায় শুয়ে উল্লেখিত দোয়াগুলো পড়ে নেয়া। আল্লাহ তাআলা এ দোয়ার বরকতে সমুদ্রের ফেনা সমপরিমাণ গোনাহও ক্ষমা করে দেবেন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নিয়মিত রাতের এ আমলটি যথাযথভাবে আদায় করে হাদিসের ঘোষিত ফজিলত ও মর্যাদা লাভের তাওফিক দান করুন। গোনাহমুক্ত জীবন দান করুন। আমিন।